টুইটারে রাজত্ব করে কি ক্লান্ত হয়ে পড়েছেন ইলন মাস্ক? তাই কি নিজের জন্য একটি আস্ত শহর গড়ে তোলার পরিকল্পনা করছেন তিনি? সম্প্রতি সেই কারণেই শিরোনামে এসেছেন ইলন। টেক্সাসের অস্টিনের দক্ষিণ-পূর্বে একটি শহর গড়ে তুলবেন বলে জানিয়েছেন ইলন।
ইলন তাঁর সংস্থা স্পেসএক্সের দফতরের কাছে এই শহর তৈরি করছেন। শহরের নাম স্নেইলব্রুক রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন টুইটার অধিকর্তা। তাঁর ‘বোরিং কোম্পানি’র ম্যাসকটের নামও স্নেইলব্রুক। সেই ম্যাসকটের উপর ভিত্তি করেই এই নাম বেছে নিয়েছেন ইলন।
কিন্তু মাস্কই প্রথম নন, এর আগেও শিল্পপতিরা নিজেদের প্রয়োজনে শহর গড়ে তুলেছেন। নিজেদের ব্যবসার প্রসার ঘটাতে বা নিজেদের বাসস্থান গড়তে মূলত শহর গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত নিতেন শিল্পপতিরা। দেশ-বিদেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে রয়েছে এর ইতিহাস।
সবার প্রথমেই আসে ঝাড়খণ্ডের জামশেদপুরের কথা। ভারতের অন্যতম শিল্পপতি জমশেদজী নুসেরওয়ানজী টাটার নামানুসারে এই শহরের নামকরণ হয়। টাটা গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা জমশেদজীকে শ্রদ্ধা জানাতে ১৯১৯ সালে এই শহরের প্রতিষ্ঠা করা হয়।
আসলে টাটা গ্রুপের আয়রন এবং স্টিল উৎপাদনকারী কারখানা ছিল ঝাড়খণ্ডের সাকচি গ্রামে। সেই কারখানার কর্মীরা গ্রামেই নিজের বসতি গড়ে তোলে। ফলে ধীরে ধীরে এলাকাটি ঘন জনবসতিপূর্ণ হয়ে ওঠে। গ্রাম পরিণত হয় শহরে। ১৯১৯ সালে ওই শহরের নাম জামশেদপুর রাখা হয়।
‘ভিক্টোরিয়াজ় সিক্রেট’ ব্র্যান্ডের নাম সকলের জানা। এই ব্র্যান্ডের সাফল্যের নেপথ্যে যিনি রয়েছেন তিনি ৮৫ বছর বয়সি লেসলি হারবার্ট ওয়েক্সনার। আমেরিকার এই শিল্পপতি নিজের থাকার জন্য, নিজের ব্যবসা প্রসারের জন্য একটি ফাঁকা জমির খোঁজে ছিলেন।
১৯৮০ সাল নাগাদ ওহায়োর নিউ অ্যালবানি এলাকায় পৌঁছন লেসলি। সেখানে গিয়ে তাঁর মনের মতো জায়গা খুঁজে পেয়ে যান তিনি। প্রথমে ৩০ একর জমি কিনলেও ধীরে ধীরে ১০ হাজার একর জমি কিনে ফেলেন লেসলি।
ব্লুমবার্গের রিপোর্ট অনুযায়ী, প্রতি শনিবার সকালে লেসলি স্থপতিদের একটি দল নিয়ে জমির সামনে যেতেন এবং নিজের পরিকল্পনামাফিক ধীরে ধীরে তাঁর মনের শহর গড়ে তুলতেন। বর্তমানে এই শহরে ১১ হাজার মানুষ বসবাস করেন।
নিউ অ্যালবানির প্রতিটি বাড়ির উপার্জন ২ লক্ষ ডলার। ভারতীয় মুদ্রায় যার পরিমাণ ১ কোটি ৬৫ লক্ষ টাকা। সেখানেই ৬০ হাজার বর্গফুটের একটি প্রাসাদে বাস করেন লেসলি।
হাওয়াইয়ের একটি দ্বীপপুঞ্জ লানাই। শোনা যায় যে, খরচ বেড়ে যাওয়ার কারণে লানাইয়ের আগেকার বাসিন্দারা এই দ্বীপপুঞ্জ ছেড়ে চলে যান। ২০১২ সালে লানাই দ্বীপপুঞ্জ কিনে ফেলেন ওরাকলের প্রতিষ্ঠাতা ল্যারি এলিসন।
লানাই কেনার পর রাতারাতি এই জায়গার ভোল বদলে ফেলেন ল্যারি। লানাইয়ে বহু বিলাসবহুল পাঁচতারা হোটেল তৈরি করেন তিনি। তৈরি করেন বিলাসবহুল রিসর্ট।
বর্তমানে লানাইয়ের অধিবাসী সংখ্যা ৩ হাজারেরও বেশি। নিজে থাকার জন্য ল্যারি পাঁচটি বাড়ির একটি কমপ্লেক্সও তৈরি করেছেন লানাই দ্বীপপুঞ্জে।
ব্রুনেলো কুকিনেলি বিদেশের একটি জনপ্রিয় ফ্যাশন ব্র্যান্ড। ইটালির শিল্পপতি ব্রুনেলোর নামানুসারে নিজের সংস্থার নামকরণ করেছিলেন তিনি। জামাকাপড় তৈরির কারখানা ছিল ইটালির সোলোমেয়ো এলাকায়। কিন্তু জায়গাটি বেশ শুনশান ছিল।
ব্রুনেলো সিদ্ধান্ত নিলেন, তাঁর সংস্থার প্রধান দফতর সোলোমেয়োতেও স্থানান্তরিত করবেন। দ্বাদশ শতকের যত পুরনো আবাসন রয়েছে সব নতুন করে সারাইয়ের ব্যবস্থা করলেন তিনি। সেখানকার এক প্রাসাদোপম বাড়িতে থাকতে শুরু করেন তিনি।
ধীরে ধীরে সোলোমেয়োতে একটি নগর তৈরি করলেন ব্রুনেলো। ব্যবসার খাতিরে ক্যাম্পাস তৈরি করলেন। সঙ্গে যুক্ত হল স্কুল, গ্রন্থাগার এমনকি খোলা আকাশের নীচে থিয়েটারও।
উত্তরপ্রদেশের মোদীনগরের নাম শুনেছেন? এই শহর প্রতিষ্ঠা করেছিলেন রায়বাহাদুর গুজরমাল মোদী। সুরাপান করতে অনীহা প্রকাশ করেছিলেন বলে ব্রিটিশরা তাঁকে পটিয়লা থেকে তাড়িয়ে দেন বলে শোনা যায়। তাঁকে ‘ডার্টি ম্যান’ অর্থাৎ নোংরা লোক বলেও সম্বোধন করতেন ইংরেজরা।
কিন্তু ইংরেজদের দুর্ব্যবহার গুজরমালের জীবনে আশীর্বাদ হয়ে আসে। উত্তরপ্রদেশে চিনির কল প্রতিষ্ঠা করেন তিনি। ধীরে ধীরে চিনির কলের চারদিকে জনবসতি গড়ে ওঠে। ১৯৩৩ সালে ওই এলাকার নামকরণ হয় মোদীনগর। তিনি নিজের নামানুসারে এই শহরের নাম রেখেছিলেন। ১৯৭৬ সালে ৭৩ বছর বয়সে মোদীনগরেই শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।