‘এমএ ইংলিশ চায়েওয়ালি’। গত বছরের নভেম্বর মাস থেকে এই চায়ের দোকান চালু হয়েছে উত্তর ২৪ পরগনার হাবড়া স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে।
বছর ছাব্বিশের স্থানীয় যুবতী টুকটুকি দাস ইংরেজিতে স্নাতকোত্তর উত্তীর্ণ। কিন্তু চাকরি না পাওয়ায় চায়ের দোকান খোলার সিদ্ধান্ত নেন তিনি। তেমনই এক গল্প প্রকাশ্যে এল।
কোনও কাজই যে ছোট নয়, তা আরও এক বার প্রমাণ করে দেখালেন বি-টেকের এক পড়ুয়া। স্বাধীন ভাবে কিছু করার স্বপ্ন থেকে খুলে ফেললেন নিজের চায়ের দোকান।
আদতে বিহারের বাসিন্দা বর্তিকা সিংহ হরিয়ানার একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বি-টেক পড়েন। আর অবসরে বিক্রি করেন চা!
হরিয়ানার ফরিদাবাদ এলাকার ব্যস্ত জায়গায় চায়ের দোকান দিয়েছেন বর্তিকা। নাম দিয়েছেন ‘বি-টেক চায়েওয়ালি’।
‘চায়েওয়ালি’ বর্তিকার দোকানে অনেক ধরনের চা পাওয়া যায়। দুধ এবং লিকার চায়ের দাম ১০ টাকা। আর মশলা এবং লেবু চায়ের দাম ২০ টাকা।
বর্তিকার চায়ের দোকানে উপকরণ খুবই সামান্য। একটি ছোট স্টোভ এবং একটি অ্যালুমিনিয়ামের কেটলি।
তবে উপকরণ যতই সামান্য হোক, বর্তিকার হাতযশে তাঁর দোকানে ইতিমধ্যেই বিপুল ভিড় হচ্ছে। চা খেতে তো বটেই, বি-টেক পড়ুয়া চা দোকানিকে দেখতে স্রেফ কৌতূহলী হয়ে তাঁর দোকানে চা খেতে আসছেন দূরদূরান্তের মানুষ।
বর্তিকা জানিয়েছেন, নিজের পড়াশোনা সামলেও প্রতি দিনই তিনি তাঁর চায়ের দোকান খোলেন। সকালে পড়াশোনায় ব্যস্ত থাকলেও সন্ধে সাড়ে ৫টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত বর্তিকার চায়ের দোকান খোলা থাকে।
সম্প্রতি একটি ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টে বর্তিকা এবং বর্তিকার চায়ের দোকানের কথা ভিডিয়োর মাধ্যমে তুলে ধরা হয়। সমাজমাধ্যম ব্যবহারকারীদের একাংশ ভিডিয়ো দেখে বিস্মিত হয়ে যান। কেউ কেউ বর্তিকার সাহসিকতার তারিফও করেন।
বর্তিকা ওই ভিডিয়োয় জানান, বি-টেক উত্তীর্ণ হয়ে নিজের ব্যবসা শুরু করবেন বলে ভেবেছিলেন। কিন্তু চার বছর অপেক্ষা না করে বি-টেক পড়ার সঙ্গে সঙ্গেই নিজের ব্যবসা দাঁড় করাবেন বলে মনস্থির করেন।
ওই ভিডিয়ো দেখে নানা মন্তব্য আসতে থাকে। এক জন বর্তিকার উদ্দেশে লেখেন, “আমি আপনার হাসি এবং সাহস দেখে মুগ্ধ। আমি আপনার মঙ্গলের জন্য প্রার্থনা করছি।”
আর এক জন লেখেন, “এগিয়ে চলো। এক বছর পর তোমার এই চায়ের দোকনই বড় একটা ব্র্যান্ড হয়ে উঠবে।” আর এক জনের মন্তব্য, “আপনার সাহস দেখে শ্রদ্ধা বেড়ে যাচ্ছে। আপনার জন্য অনেক শুভেচ্ছা রইল।”
তবে শুধু বর্তিকাই নন, এর আগে অর্থনীতির স্নাতক প্রিয়ঙ্কা গুপ্তও বিহারের পটনায় একটি কলেজের সামনে চায়ের দোকান দিয়েছিলেন। ২০১৯ সালে স্নাতক স্তরের পরীক্ষায় পাশ করেও অতিমারির কারণে দু’বছর চেষ্টাচরিত্র করেও তিনি কোনও চাকরি পাননি।
প্রিয়ঙ্কা তাই নিজের স্বল্প পুঁজি নিয়ে চায়ের দোকান খুলেছিলেন। ক্রমে তাঁর পসার এবং উপার্জন দুইই বেড়েছে।
একটি সাক্ষাৎকারে প্রিয়ঙ্কা জানিয়েছিলেন, তিনি এমবিএ পাস করে চায়ের দোকান দেওয়া প্রফুল্ল বিল্লোরের দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন। প্রসঙ্গত, প্রফুল্লর চায়ের দোকানের নাম ‘এমবিএ চায়েওয়ালা’।
প্রথাগত শিক্ষায় শিক্ষিত হয়েও, লোভনীয় চাকরির প্রত্যাশায় না থেকে বর্তিকা, প্রফুল্লরা যে ভাবে স্বাধীন ভাবে স্বাবলম্বী হওয়ার চেষ্টা করছেন, তাতে অনুপ্রাণিত হচ্ছেন নতুন প্রজন্মের আরও অনেকে।