ব্রিটেনের সবচেয়ে বড় প্রাসাদ। আকারে, আয়তনে ইংল্যান্ডের বাকিংহাম প্রাসাদকেও হার মানায় ইস্ট সাসেক্সের এই হ্যামিলটন প্রাসাদ।
এই প্রাসাদ স্থানীয়দের কাছে ‘ঘোস্ট হাউজ অব সাসেক্স’ (সাসেক্সের ভুতুড়ে বাড়ি) নামেই বেশি পরিচিত।
ব্রিটেনের ধনকুবের নিকোলাস ভ্যান হুগস্ট্র্যাটেনের জন্য এই প্রাসাদ বানানো হয়।
এই প্রাসাদটি মূল শহর থেকে বেশ কিছুটা দূরে।আকফিল্ডের এ২২ সাউথে হ্যামিলটন প্রাসাদটি রয়েছে।
১৯৮৫ সাল থেকে এই প্রাসাদ নির্মাণের কাজ শুরু হয়। কিন্তু নির্মাণের কাজ ‘শেষ হইয়াও হইল না শেষ’। ফলে এই বিশালাকার প্রাসাদ ফাঁকাই রয়েছে বহু বছর ধরে।
নিকোলাসের এক প্রতিবেশী জানান, কাজ কত দূর হয়েছে, এখনও কতটা কাজ বাকি, তা প্রতিবেশীদের কেউই বুঝতে পারেন না।
তিনি আরও জানান, এই প্রাসাদটি ঘন জঙ্গল, গাছপালায় ঘেরা। তাঁর উপর প্রাসাদের মালিক নিকোলাস জমির চারদিকে উঁচু বেড়াও লাগিয়েছেন।
প্রাসাদের চারিদিকে বোর্ডে সতর্কতামূলক বিজ্ঞপ্তি দেওয়া রয়েছে। কেউ হাজার চেষ্টা করলেও প্রাসাদের ত্রিসীমানায় প্রবেশ করতে পারবেন না।
বেড়ার উপর সাদা বোর্ডে কালো অক্ষরে লেখাও রয়েছে ‘ভেতরে শ্যুটিং চলছে’, ‘কুকুর হইতে সাবধান’ ইত্যাদি।
এই নিয়ে প্রতিবেশীদের সঙ্গে নিকোলাসের ঝামেলাও বাধে। প্রাসাদের বাইরে প্রচুর ফাঁকা জমি রয়েছে। প্রতিবেশীদের দাবি ছিল, প্রাসাদটি যখন কেউ ব্যবহার করছেন না, তখন এই জমিগুলি দখল করে না রেখে বিক্রি করে দেওয়ার।
কিন্তু তাঁদের কথা শুনে নাকি বিদ্রূপ করেন নিকোলাস। তিনি জানান, তাঁর কেনা জমি কাউকে ছেড়ে দেবেন তা ভাবাও হাস্যকর।
২০০০ সালে এক সাংবাদিক প্রাসাদের ভিতর যাওয়ার পথ খুঁজে পেয়েছিলেন। তিনি ভিতরে ঢুকে দেখেন এক বিশাল হলঘর, তার পাশ দিয়ে সিঁড়ি উপরের দিকে উঠে গিয়েছে।
ঘরের চারদিকে পাথরের তৈরি স্তম্ভ। ছাদের উপর রয়েছে বাগান। একটি ফোয়ারাও রয়েছে প্রাসাদের ভিতর।
নিকোলাসের সংগ্রহে প্রচুর ছবিও রয়েছে। প্রাসাদের একটি তলায় তাঁর সংগ্রহের ছবিগুলি রাখা।
বর্তমানে এই প্রাসাদের কী অবস্থা তা দেখার জন্য ড্রোনের মাধ্যমে কিছু ছবি তোলা হয়েছে। ছবিতে দেখা যায়, প্রাসাদের সামনে ভাঙাচোরা জিনিস, নির্মাণের জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ইত্যাদি রাখা।
দেখে বোঝা যায়, বহু বছর এখানে কোনও কাজ করা হয়নি। ঘন জঙ্গলের মধ্যে একটি পোড়ো বাড়ির মতো আকার নিয়েছে এই হ্যামিলটন প্রাসাদ।
তবে, এই প্রাসাদটি ছাড়াও শুধু মাত্র সাসেক্সেই আরও ৩৫০টি জমি রয়েছে নিকোলাসের। ১৯৮০ সালের মধ্যে দু’হাজারের বেশি সম্পত্তি কিনে তার ৯০ শতাংশ বিক্রিও করে দিয়েছিলেন তিনি।
সম্পত্তি কেনাবেচার মাধ্যমেই রোজগার করতেন নিকোলাস। কর্মজীবনের শুরুতে তিনি দুঃস্থদের জন্য কম দামে বা়ড়ি তৈরি করতেন। ২০০২ সালে বাহামাতে কাজ করার পর সাফল্যের সিঁড়িতে উঠতে শুরু করেন।
নিকোলাসের জীবনে একটি অন্ধকার দিকও রয়েছে। ১৯৯৯ সালে নিকোলাস তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী মহম্মদ রাজাকে খুন করেন। লন্ডনের দক্ষিণ প্রান্তে মহম্মদের যে বাড়ি ছিল, সেখানে ঢুকে পাঁচ বার ছুরি মেরে খুন করেন তিনি।
পরে মহম্মদের মাথায় গুলিও চালান নিকোলাস। খুনের অভিযোগে ১০ বছর জেলে থাকতে হয় তাঁকে। অভিযুক্তের পরিবারকে ছ’মিলিয়ন ইউরো (ভারতীয় মুদ্রায় প্রায়৪৮ কোটি ৫২ লক্ষ টাকা) ক্ষতিপূরণ হিসাবে দেওয়ার কথাও ছিল নিকোলাসের। কিন্তু মহম্মদের পরিবার কানাকড়িও পায়নি বলে জানা যায়।
সংবাদ সংস্থা সূত্রের খবর, সাসেক্সের এই হ্যামিলটন প্রাসাদের মূল্য ৪০ মিলিয়ন ইউরো (ভারতীয় মুদ্রা অনুযায়ী, ৩২৩ কোটি ৪৮ লক্ষ ৩২ হাজার ১৯০ টাকা)।
নিকোলাসের দাবি, ব্রিটেনে তাঁর নিজস্ব কোনও সম্পত্তি নেই। সম্পত্তির সব কিছুই তাঁর পাঁচ সন্তানের মধ্যে ভাগ হয়ে গিয়েছে।