বসবাসের জন্য নেই কোনও নজরকা়ড়া ব্যবস্থা, খাবারও পাওয়া যায় অতি সাধারণ। তবুও এক অদ্ভুত আকর্ষণে এই এলাকায় ভি়ড় জমান পর্যটকেরা। তার কারণ এই এলাকায় মানুষের চেয়ে বেশি বাস করে বিড়াল। ‘ক্যাট আইল্যান্ড’ অথবা বিড়ালের দ্বীপ বলেই অধিক পরিচিত এই বসতি।
প্রশান্ত মহাসাগরের বুকে ওশিকা উপদ্বীপের কাছে রয়েছে তাশিরোজিমা দ্বীপ। জাপানের এই দ্বীপে মানুষের চেয়েও বেশি ঘোরাফেরা করতে দেখা যায় বিড়ালদের।
শুধুমাত্র পোষ্য নয়, তাশিরোজিমা দ্বীপের পথেঘাটে যে বিড়ালগুলি ঘুরে বেড়ায়, তাদের সৌভাগ্যের প্রতীক হিসাবে গণ্য করেন সেই দ্বীপের বাসিন্দারা।
২০১৫ সালে জনগণনা করে দেখা গিয়েছে, তাশিরোজিমা দ্বীপে ৮০ জন মানুষ বাস করেন। অন্য দিকে এই দ্বীপে বিড়ালের সংখ্যা দেড়শোর কাছাকাছি।
১৯৫০ সালে তাশিরোজিমা দ্বীপে প্রায় এক হাজার জন বাস করতেন। তাঁদের অধিকাংশই পেশায় ছিলেন মৎস্যজীবী এবং ব্যবসায়ী। কিন্তু ২০১১ সালে এই দ্বীপে সুনামি হয়। প্রাকৃতিক দুর্যোগ-সহ আরও নানা কারণে অনেকে এই দ্বীপ ছেড়ে চলে যান।
পরিসংখ্যান অনুযায়ী তাশিরোজিমা দ্বীপে যাঁরা বসবাস করেন তাঁদের মধ্যে ৮৩ শতাংশ অধিবাসীর বয়স ৬০ বছরের বেশি। এমনকি ৫০ শতাংশের বয়স ৬৫ বছরের বেশি।
বর্তমানে তাশিরোজিমা দ্বীপে যাঁরা বাস করেন তাঁরা সাধারণত মাছ ধরে অথবা পর্যটকদের আতিথেয়তার সঙ্গে যুক্ত থেকে তাঁদের জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন। এই দ্বীপে মানুষের চেয়ে বিড়ালের সংখ্যা বেশি থাকার কাহিনি শুনলে অবাক হতে হয় বইকি।
জাপানের ইতিহাস ঘাঁটলে জানা যায়, ১৬০৩ সাল থেকে ১৮৬৮ সাল পর্যন্ত তাশিরোজিমা দ্বীপে বস্ত্রশিল্পের প্রচলন ছিল। ফলে এই দ্বীপে রেশমকীটের উৎপাদনও হত বেশি।
তাশিরোজিমা দ্বীপে রেশমকীটের উৎপাদন বেশি হওয়ার কারণে ইঁদুরের উপদ্রবও ছিল বেশি। ইঁদুরের হাত থেকে রেশমকীট রক্ষা করতে দ্বীপের অধিবাসীরা তাঁদের বাড়িতে বিড়াল পুষতে শুরু করেন।
একাংশের দাবি, বিড়ালের খাবার জোগান দেওয়ার জন্য মাছ ধরা শুরু করেন তাশিরোজিমা দ্বীপের অধিবাসীরা। বিড়ালের যত্ন করলে মানুষের জীবন সুখকর হয় বলেও মানতেন তাঁরা। দ্বীপে বিড়ালের আদলে তৈরি মোট ৫১টি পাথরের মূর্তি রয়েছে।
২০১১ সালে তাশিরোজিমা দ্বীপে সুনামি আছড়ে পড়ায় এলাকার প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি হয়। অধিকাংশের দাবি, সুনামির পর অধিবাসী থেকে শুরু করে প্রচুর বিড়াল দ্বীপ ছেড়ে চলে যায়।
জানা যায় বহু বছর আগে তাশিরোজিমা দ্বীপে একটি বিড়ালের উপর পাথর পড়ে যায়। সেখানেই মারা যায় বিড়ালটি। ঘটনাস্থলেই বিড়ালের মৃতদেহ চাপা দেন অধিবাসীরা। পরবর্তী কালে সেখানে মন্দির গড়ে তোলা হয়।
সুনামির পর ২০১৫ সালে আবার তাশিরোজিমা দ্বীপের পুনর্নিমাণ করা হয়। পরবর্তী কালে দ্বীপের মধ্যে বিড়ালকে খাওয়ানোর জন্য আলাদা জায়গাও তৈরি করা হয়। পর্যটকেরা দ্বীপে ঘুরতে গেলে সেই নির্দিষ্ট জায়গাগুলিতে গিয়ে বিড়ালদের খাওয়ান।
শুধুমাত্র তাশিরোজিমা দ্বীপেই নয়, জাপানের আওশিমা এবং এনোশিমা নামের দু’টি দ্বীপও ‘ক্যাট আইল্যান্ড’ নামে পরিচিত। আওশিমা দ্বীপে ১৫ থেকে ২০ জন বাস করেন তবে এই দ্বীপে বিড়ালের সংখ্যা ১২০।
জাপানের টোকিয়ো শহরের দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থিত এনোশিমা দ্বীপ। শোনা যায় ১৯৮০ সাল থেকে এই দ্বীপে বিড়ালের সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে শুরু করে। এই দ্বীপেও পর্যটকেরা ‘সার্ফিং’ এবং ‘সান বাথিং’-এর জন্য ভিড় জমান।