সরকারি পদের দায়িত্ব অনুযায়ী সুনামির তুফানে অনাথ এক শিশুকন্যাকে উদ্ধার করেছিলেন। তবে তাতেই ক্ষান্ত হননি। রুটিনমাফিক কাজের গণ্ডি ছাড়িয়ে ওই মেয়ের বিয়েতে অভিভাবকের দায়িত্ব পালন করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন তামিলনা়ড়ুর এক শীর্ষ আমলা।
২০০৪ সালের ডিসেম্বরে সুনামির দাপটে তছনছ হয়ে গিয়েছিল ছোট্ট সৌমার জীবন। তামিলনাড়ুর উপকূলবর্তী অঞ্চলে আছড়ে পড়া সুনামিতে আরও অনেকের মতো মা-বাবাকে হারিয়েছিলেন নাগাপত্তিনমের সৌমা। সে সময় তাঁর বয়স মাত্র পাঁচ।
সে বছর তামিলনাড়ুর প্রায় আট হাজার বাসিন্দার প্রাণ কেড়ে নিয়েছিল সুনামি। সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল ওই রাজ্যের নাগাপত্তিনম জেলা। শুধুমাত্র সে জেলাতেই ছ’হাজার ১০০ জন মারা গিয়েছিলেন। তাঁদের মধ্যে ছিলেন সৌমার মা-বাবাও।
নাগাপত্তিনমে উদ্ধারকারীদের দলে ছিলেন তামিলনাড়ুর স্বাস্থ্যসচিব জে রাধাকৃষ্ণনও। ধ্বংসস্তূপ থেকে সৌমাকে উদ্ধার করে সরকারি এক আশ্রয়স্থলে নিয়ে গিয়েছিলেন তিনি।
সুনামিতে অনাথ শিশুদের জন্য নাগাপত্তিনমে একটি শেল্টার হোম গড়েছিল তামিলনাড়ু সরকার। অন্যদের পাশাপাশি সৌমারও দেখভালের দায়িত্ব বর্তেছিল রাধাকৃষ্ণনের কাঁধে। সে দায়িত্ব যথাযথ ভাবেই পালন করেছেন রাধাকৃষ্ণন। মূলত তাঁর অভিভাবকত্বেই হোমে বেড়ে উঠছিল শিশুরা।
মা-বাবাকে হারানোর পর সরকারি হোমেই জীবন কাটছিল সৌমার। সেখান থেকেই পড়াশোনা করেছেন। এক সময় কলেজের পড়াশোনার জন্য সে আশ্রয়ও ছেড়ে দেন সৌমা।
২০০৪ সালের ওই প্রাকৃতিক দুর্যোগের পর প্রায় দু’দশক কেটে গিয়েছে। তবে সৌমাকে ভোলেননি রাধাকৃষ্ণন। সে দিনের সেই শিশুটি আজ ২২ বছরের তরুণী।
সম্প্রতি সৌমার বিয়ে স্থির হয়েছে। একটি ভাইরাল হওয়া ভিডিয়োতে দেখা গিয়েছে, সৌমার বিয়েতে উপস্থিত হয়েছেন রাধাকৃষ্ণন। অতিথি হিসাবে নয়, তাঁর অভিভাবক হয়ে!
সৌমার অভিভাবক হিসাবে তাঁর বিয়ের যাবতীয় রীতিনীতিও পালন করেছেন রাধাকৃষ্ণন। নবদম্পতিকে আশীর্বাদ করেছেন। তাঁদের পাশে দাঁড়িয়ে ছবিও তুলেছেন। যেন তিনিই সৌমার বাবা!
রাধাকৃষ্ণনের এ হেন আচরণে মুগ্ধ নেটদুনিয়া। ফেসবুক-টুইটারের মাধ্যমে এ কাহিনি তাঁরা নিজের মধ্যে চালাচালিও করেছেন। দেখতে দেখতে সে ভিডিয়ো ছড়িয়ে পড়েছে। শিরোনামে উঠে এসেছেন রাধাকৃষ্ণন।
নিজের ‘মেয়ে’ সৌমার বিয়েতে আবেগ বাধ মানছিল না বলেও জানিয়েছেন ওই সরকারি আমলা।
সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিদের কাছে রাধাকৃষ্ণন বলেছেন, ‘‘সৌমা শুধু আমাদের মেয়ে নন। ও নাগাপত্তিনমেরও মেয়ে। সৌমার বিয়েতে আমি অত্যন্ত আনন্দিত। ওর বিয়ের সময় আবেগ চেপে রাখতে পারিনি।’’