সব সময় অন্য রকম কিছু করার কথা ভাবতেন পি গণেশন। তাই অন্যদের মতো সাধারণ কৃষিকাজ না করে জৈব চাষের প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন প্রৌঢ়। ওই ভাবে চাষাবাদ করতে করতে চলে গেলেন আর এক পেশায়! তার পর থেকে জৈব সার দিয়ে গয়না বানানো শুরু করেন গণেশন।
পরিবেশবান্ধব সার হিসেবে গোবরের ব্যবহার বহুল প্রচলিত। জৈব চাষ করতে গিয়ে প্রচুর গোবর জোগাড় করতেন তামিলনাড়ুর মাদুরাইয়ের বাসিন্দা গণেশন। একটা সময় প্রয়োজনের চেয়েও বেশি গোবর জমা হতে থাকে তার কাছে।
গণেশনের নিজের কথায়, ‘‘কৃষিজমির জন্য যতটা প্রয়োজন, তার থেকে অনেক বেশি গোবর জমে যায়। একে নষ্ট না করে বিকল্প কী করা যায়, ভাবতে শুরু করি।” অনেক ভেবে গোবর এবং গোমূত্র ব্যবহার করে মূর্তি তৈরি করা শুরু করেন এই কৃষক।
প্রথমে গোবর দিয়ে গণেশের মূর্তি তৈরি দিয়ে শুরু। বর্তমানে দেড়শো রকম জিনিস বানান গণেশন। কাঁচামাল বলতে কেবল গোমূত্র আর গোবর। আর কিচ্ছু না!
গোবর আর গোমূত্র দিয়ে কী বানান না গণেশন! দেবদেবীর মূর্তি, অলঙ্কার, ঘর সাজানোর নানা রকম জিনিস— সব কিছু।
কৃষক থেকে শিল্পী হওয়া গণেশন জানান, তাঁর তৈরি পণ্য কিনতে এখন বড় ব্যবসায়ীরাও আসেন। তিনি বলেন, ‘‘আমি নিজের হাতেই কারুকাজ করি। কোনও যন্ত্রপাতি বা ছাঁচ ব্যবহার করি না। গোবর এবং গোমূত্র ছাড়া অন্য কোনও উপাদান যোগ করি না। আমার তৈরি সব পণ্য ১০০ শতাংশ প্রাকৃতিক এবং পরিবেশবান্ধব।’’
এখন গণেশনের বয়স ৫২ বছর। ৫ বছর আগে খেয়ালের বশে যে কাজ শুরু করেছিলেন, সেটাই এখন তাঁর পেশা। চাষবাস ছাড়েননি। তবে বেশির ভাগ সময় গোবর, গোমূত্র দিয়ে নানা কারুকাজ করে দিন চলে যায়।
৫ বছর আগে জৈব চাষ শুরু করে প্রতিবেশীদের অবাক করে দিয়েছিলেন গণেশন। কারণ, তখনও এই চাষ অতটা জনপ্রিয় হয়নি তাঁর এলাকায়। তার পর গোবর-গোমূত্র দিয়ে হরেক জিনিস তৈরি করে সবাইকে কার্যত বিস্মিত করে দিয়েছেন তিনি।
গণেশন জানান, গোবর দিয়ে তাঁর প্রথম কাজ হল গণেশ মূর্তি তৈরি। বলেন, “তখন জিনিসগুলো এমনিই তৈরি করেছিলাম। বিক্রিবাটা করব বলে ভাবিনি। প্রধানত, উৎসবের সময় অথবা ফসল কাটার শুরুতে এ সব গড়তাম। পরে প্রতি দিন তৈরি করা শুরু করি।’’
প্রতি বছরই গোবর দিয়ে নতুন কোনও জিনিস বানানোর চেষ্টা করেন গণেশন। প্রথম বার বেশ কয়েকটি গণেশ মূর্তি তৈরি করেন। জানান, সেগুলো বিক্রি করে ১২ হাজার টাকা পেয়েছিলেন।
দ্বিতীয় বছরে গোবর এবং গোমূত্র দিয়ে বানানো জিনিস বিক্রি করে ২৫ হাজার টাকা পান গণেশন। তার পরের বছর ৭৫ হাজার টাকা!
করোনার সময় অনেকের মতো গণেশনের ব্যবসাও ভাল হয়নি। তবে আবার ভাল বিক্রিবাটা হচ্ছে বলে একটি সংবাদমাধ্যমকে জানান তিনি।
এখন গোবর দিয়ে কুমকুমের বাক্স, মশলাপাতি রাখার জিনিস, কলমদানি, নানা দেবদেবীর মূর্তি তৈরি করেন গণেশন।
এখনও পর্যন্ত নিজের সেরা কাজ বলতে ৬ ফুটের বৌদ্ধমূর্তি তৈরির কথা বলেন গণেশন। পুরো কাজটা করেছেন ৩০ কেজি গোবর দিয়ে।
এলাকায় তো বটেই, এখন গণেশনের তৈরি জিনিস বাইরেও বিক্রি হচ্ছে। ক্রমশ ব্যবসারও শ্রীবৃদ্ধি ঘটছে। তাই সামাল দেওয়ার জন্য কর্মী নেওয়ার কথা ভাবছেন তিনি।
গণেশনের দাবি, তাঁর তৈরি গোবরের জিনিসপত্র ১০ বছর পর্যন্ত টিকবে। আর কী কী করলে নতুন কিছু করা যায়, নিরন্তর ভেবে চলেছেন তিনি।
গণেশনের তৈরি জিনিসের দাম শুরু হয় ৫ টাকা থেকে। সবচেয়ে দামি জিনিস বিক্রি করেন ৩ হাজার টাকায়।
গণেশনের কথায়, ‘‘আমি দেখেছি গোবর রোদে শুকিয়ে গেলে কী ভাবে শক্ত হয়ে যায়। শুকনো গোবর তো ঘুঁটে করে এখনও রান্নায় জ্বালানি হিসাবে ব্যবহার করা হয়। কিন্তু অন্য কাজেও যে একে লাগানো যায় সেটা আমিও আগে কল্পনা করিনি।’’
এখন গণেশন ভাবছেন কী ভাবে ব্যবসা বাড়ানো যায়। ব্যবসা তো কোনও দিন করেননি। তাই এখনও দরদাম ইত্যাদি ঠিকঠাক আয়ত্ত করতে পারেননি বলে মনে করেন তিনি। তবে ব্যবসার চেয়ে একে শিল্প হিসাবে দেখতেই বেশি পছন্দ করেন এই প্রৌঢ়।