তালিবান আন্দোলনের প্রবর্তক মোল্লা ওমরের সমাধিস্থল কোথায়? ন’বছর ধরে গোপন রাখার পর প্রকাশ্যে আনলেন তালিব নেতৃত্ব। রবিবার ওমরের সমাধিস্থলের সেই ছবি প্রকাশ্যে এসেছে।
তালিবান মুখপাত্র জাবিহুল্লাহ মুজাহিদ রবিবার এএফপিকে জানান, আফগানিস্তানের জাবুল প্রদেশের সুরি জেলার ওমরজোর কাছে ওমরের সমাধিস্থলটি আছে। রবিবার ওই সমাধিস্থলে তিনি একটি অনুষ্ঠানে যোগ দেন বলেও জাবিহুল্লাহ জানান।
জাবিহুল্লাহ বলেন, ‘‘চারপাশে প্রচুর শত্রু ছিল এবং আফগানিস্তান থেকে আমাদের সরানো হয়েছিল। তাই সমাধিস্থলের যাতে কোনও রকম ক্ষতি না হয়, তার জন্যই গোপনীয়তা বজায় রাখা হয়েছিল।’’
জাবিহুল্লাহ যোগ করেন, ‘‘শুধু পরিবারের সদস্যরা সমাধিস্থলের সঠিক জায়গা জানতেন। তবে আবার আমরা ক্ষমতায় ফিরে এসেছি। তাই সাধারণ মানুষকে এই সমাধিস্থল দেখার সুযোগ দেওয়া হবে বলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’’
২০০১ সালে আমেরিকার সামরিক বাহিনী তালিবানকে ক্ষমতা থেকে উৎখাত করার পর ওমরের স্বাস্থ্য এবং তাঁর অবস্থান সম্পর্কে একাধিক জল্পনা ছড়িয়ে পড়ে।
এর পর ২০১৫ সালের এপ্রিলে তালিবদের তরফে স্বীকার করা হয় যে, ২০১৩ সালে মারা গিয়েছেন সর্বোচ্চ তালিব নেতা ওমর।
গত বছরের অগস্টে আফগানিস্তানের সরকারকে ফেলে দিয়ে দ্বিতীয় বারের জন্য ক্ষমতায় ফেরে তালিবরা।
তালিবদের প্রয়াত সর্বোচ্চ নেতা ওমরের সমাধিস্থলের ছবিও ইতিমধ্যেই প্রকাশ্যে এসেছে। সাদা রঙের পাথর দিয়ে তৈরি এই সমাধিস্থল নুড়ি এবং একটি সবুজ ধাতব খাঁচা দিয়ে ঘেরা বলেও দেখা গিয়েছে।
১৯৯৩ সালে তালিবান গঠন করেন ওমর। ওমরের নেতৃত্বেই কঠোর তালিবান ইসলামিক শাসন শুরু হয়েছিল। মহিলাদের মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করা এবং প্রকাশ্যে মৃত্যুদণ্ড এবং বেত্রাঘাত-সহ কঠোর শাস্তি দেওয়ার নিয়মও তিনিই চালু করেছিলেন।
যক্ষ্মায় আক্রান্ত হয়ে কয়েক বছর আগে করাচির এক হাসপাতালে মৃত্যু হয় তালিবান শীর্ষ নেতা মোল্লা মহম্মদ ওমর। মৃত্যুর সময় তাঁর বয়স হয়েছিল ৫৫। এমনটাই জানিয়েছিল তৎকালীন আফগানিস্তানের প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনির দফতর।
এক বিবৃতি প্রকাশ করে বলা হয়েছিল, ‘‘২০১৩-র এপ্রিলে পাকিস্তানে মৃত্যু হয়েছে তালিবান নেতা মোল্লা ওমরের।’’
তালিবান শীর্ষ নেতা ওমরকে ২০০১ সালের পরে প্রকাশ্যে দেখা যায়নি। দেখা মেলেনি কোনও ভিডিও বা ছবিতেও। ২০০৭ সালের পরে ওমরের কাছ থেকে আর কোনও নির্দেশ পাননি তালিবান শীর্ষ নেতারাও।
৯/১১-র ঘটনার পর ওমরই আল-কায়দা প্রধান ওসামা বিন লাদেনকে মদত দিয়েছিলেন বলে দাবি করে মার্কিন গোয়েন্দারা।
১৯৮৩ থেকে ১৯৯১ পর্যন্ত রুশদের সঙ্গে লড়াই করার সময়ে একটা চোখ হারান ওমর। এক হাতের কব্জিও উড়ে যাওয়ায় সেখানে বসে লোহার রড। ওমরের শরীরের এই বিশেষ দু’টি চিহ্ন উল্লেখ করে আমেরিকা তার মাথার দাম ঘোষণা করেছিল ১ কোটি ডলার। ভারতীয় মুদ্রায় ৮২ কোটি ১৬ লক্ষ টাকা।
১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত তালিবানের প্রধান পদে থাকা ওমরের দীর্ঘ অজ্ঞাতবাসে তাঁকে নিয়ে জল্পনা কম হয়নি। তিনি বেঁচে আছেন কি না, সেই প্রশ্ন উঠেছে বারবার। তবে তাঁর নাম সামনে রেখেই এক ছাতার তলায় কাজ করে এসেছে তালিবানের বিভিন্ন ভগ্নাংশ।
গত কয়েক বছরে অবশ্য ওমরের অসুস্থতা, তাঁর পরিবার ও জীবন নিয়ে তালিবানের অন্দরেই চর্চা বেড়ে গিয়েছিল বহুগুণ। সম্প্রতি, ইন্টারনেটে তার জীবনী প্রকাশ করে তালিবান।
বিশেষজ্ঞদের মতে, একাধিক শাখা ও ভগ্নাংশে বিভক্ত তালিবানের অস্তিত্ব বাঁচাতে ভরসা ছিল ওমরের নামটুকুই। সামনে না এলেও তাঁর নামেই এত দিন সংগঠনে ভাঙন ঠেকানো সম্ভব হয়েছে।
কিন্তু কোথায় থাকতেন ওমর? তাঁর বাসস্থান নিয়ে নাস্তানাবুদ হয়েছিলেন মার্কিন গোয়েন্দারাও। এক সাংবাদিক তথ্যপ্রমাণ দিয়ে দাবি করেন, তিনি আফগানিস্তানে মার্কিন সেনাঘাঁটির একেবারে পাশেই থাকতেন, একেবারে পায়ে হাঁটা দূরত্বে!
জাবুল প্রদেশের কালাতের একটা ছোট্ট বাড়িতে থাকতেন ওমর। যে বাড়িতে অতিথি হয়ে থাকতেন তিনি। সেই বাড়ির সদস্যরাও রহস্যময় অতিথির নাম জানতেন না। কিন্তু একই এলাকা দিয়ে বারবার আমেরিকার সেনাবাহিনী টহলদারি চালালেও ওমরের অস্তিত্ব তাঁদের কাছে ছিল একেবারেই অজানা।
নেদারল্যান্ডসের এক সাংবাদিকের বইয়ে উঠে এসেছে ওমরের বাসস্থান সংক্রান্ত নানা বিস্ফোরক তথ্য। আফগানিস্তানে আমেরিকার সেনা ঘাঁটি থেকে পায়ে হাঁটা দূরেই থাকতেন মোল্লা, বেট্টে ড্যামের বই বলছে এমনটাই। কিন্তু তাঁর টের পায়নি আমেরিকার সেনা।