তাজমহল। নামটার সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে একখণ্ড ইতিহাস আর অনেকটা ভালবাসা। বিশ্বের সাত আশ্চর্যের এক আশ্চর্য। আগরা শহরে যমুনার পাড়ে এই ভালবাসার অমলিন ইতিহাস চেনে না ‘এমন লোকটি কোথাও খুঁজে পাবে নাকো তুমি’।
মুঘল সম্রাট শাহজাহান তার প্রিয়তমা মমতাজের স্মৃতিতে ১৬৩২ খ্রিস্টাব্দে এই তাজমহল বানানো শুরু করেন। ২০ হাজার মানুষ ২০ বছর ধরে গড়েছিলেন এই স্বপ্ন। ১৬৫৩ খ্রিস্টাব্দে শেষ হয় তাজমহল বানানোর কাজ।
৩৫০ বছর পর ১৯৮৩ সালে ইউনেস্কো তাজমহলকে বিশ্ব ‘হেরিটেজ সাইট’ হিসেবে ঘোষণা করে।
ইসলামিক, পার্সিয়ান এবং ভারতীয় স্থাপত্যের এই মেলবন্ধন দেখতে দেশ বিদেশ থেকে অসংখ্য পর্যটক সারা বছর এই শহরে ভিড় করেন।
কিন্তু জানেন কি তাজমহলের প্রতিরূপ রয়েছে বিশ্বের বিভিন্ন শহরে! দেখে নেওয়া যাক কোথায় কোথায় রয়েছে ‘তাজমহল’।
ব্রিটিশরা ২০০ বছর ভারত শাসন করে যাওয়ার সময় তাজমহলের প্রতিরূপ বানানোর ইচ্ছে নিয়ে দেশ ত্যাগ করেছিল। ইংল্যান্ডের ব্রাইটনে রয়েছে ‘রয়্যাল প্যাভিলিয়ন’ যা দেখতে তাজমহলের মতো।
রয়্যাল প্যাভিলিয়ন ১৯ শতকে ওয়েলসের রাজকুমার জর্জের বাসস্থান হিসেবে তৈরি করা হয়। রাজকুমার জর্জের চিকিৎসক তাঁকে তাঁর স্বাস্থ্যের জন্য সমুদ্র তীরবর্তী কোনও জায়গার থাকার পরামর্শ দেন। তখন তিনি তাজমহলের আদলে এই প্যাভিলিয়ান তৈরি করেন ব্রাইটনে সমুদ্রের ধারে।
জানেন কি চিনেও রয়েছে ‘তাজমহল’! চিনের শেনজেন শহরের ‘উইন্ডো অব দ্য ওয়ার্ল্ড’ পার্কে রয়েছে তাজমহলের এই প্রতিরূপ।
‘উইন্ডো অব দ্য ওয়ার্ল্ড’ পার্কে তাজমহলের প্রতিরূপ ছাড়াও বিশ্বের বিভিন্ন বিস্ময়কর স্থাপত্যের প্রতিরূপ রয়েছে।
বিশ্বের অন্যতম আধুনিক শহর দুবাইয়েও রয়েছে শাহজাহান-মমতাজের ভালবাসার নিদর্শনের প্রতিরূপ ‘তাজ আরাবিয়া’।
‘তাজ আরাবিয়া’ একটি ২০ তলার পাঁচ তারা হোটেল। এই হোটেলে রয়েছে সাড়ে তিনশোটি ঘর। তাজমহলের চার গুণ বড় এই ‘তাজ আরাবিয়া’।
আমাদের প্রতিবেশী বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা শহরেও রয়েছে ‘তাজমহল’। বাংলাদেশি চলচ্চিত্র নির্মাতা আহসানউল্লা এটি তৈরি করেন ২০০৮ সালে।
আহসানুল্লার মতে, ১৯৮০ সালে তাঁর মনে হয় তাজমহলের প্রতিরূপ বানানোর কথা। সেই বছরই তিনি আগরা যান। বাংলাদেশের বহু মানুষ তাজমহল দেখার স্বপ্ন দেখেন। কিন্তু বেশির ভাগই ব্যয়বহুল বিদেশ সফর করতে পারেন না।
বুরহানপুর থেকে আগরার দূরত্ব ৮০০ কিলোমিটার। কিন্তু এই দুই জায়গাকে এক সূত্রে বেঁধেছে তাজমহল এবং ভালবাসা।
মধ্যপ্রদেশের বুরহানপুরের স্কুল শিক্ষক আনন্দপ্রকাশ চৌকসে তাঁর স্ত্রী মঞ্জুষার জন্য বাড়ি বানিয়েছেন তাজমহলের আদলে। বাড়িতে রয়েছে চারটি ঘর।
বাবা এবং মায়ের প্রেমের সৌধ তাজমহল। শাহজাহানের ছেলে অওরঙ্গজেব তাঁর স্ত্রী রাবিয়া-উদ-দৌরানীর মৃত্যুর পর তাঁর কবরস্থলে সৌধ বানানোর পরিকল্পনা করেন। সৌধের নাম দেন ‘বিবি কা মাকবারা’।
অওরঙ্গজেবের ছেলে আজম খান এই সৌধের নির্মাণ সম্পূর্ণ করেন। আনুমানিক ১৬৬৯ খ্রিস্টাব্দে এই সৌধ নির্মাণ শেষ হয় মহারাষ্ট্রের অওরঙ্গাবাদে। এটি ‘গরিবের তাজমহল’ নামেও পরিচিত।
উত্তরপ্রদেশের বুলন্দশহরের ডাক বিভাগের এক অবসরপ্রাপ্ত কর্মী ফয়জুল হাসান তাঁর সমস্ত সঞ্চয় উজার করে দিয়েছিলেন ভালবাসার মানুষটির স্মৃতি বাঁচিয়ে রাখতে।
ফয়জুল হাসান কাদরীর স্ত্রী তাজামুল্লি বেগম ২০১১ সালে ক্যানসারে মারা যান। স্ত্রীর স্মৃতি বাঁচিয়ে রাখতে ফয়জুল তাজমহলের প্রতিরূপ বানান। ২০১৮ সালে এক পথদুর্ঘটনা ফয়জুল মারা যাওয়ার পর তার তৈরি ‘তাজমহলে’ স্ত্রীর পাশেই তাঁকে কবর দেওয়া হয়।