১৪ জুন, ২০২০। করোনা, অতিমারি, লকডাউনের মতো শব্দগুলির সঙ্গে সবেমাত্র পরিচয় হয়েছিল বিশ্বের। বি টাউনে ঠিক এই সময়েই তোলপাড় ফেলে দেয় একটি খবর।
বান্দ্রার ফ্ল্যাট থেকে সুশান্ত সিংহ রাজপুতের ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার করা হয়। তরুণ অভিনেতার এই আচমকা মৃত্যু বলিউডে ডেকে এনেছিল কালো অধ্যায়। অনুরাগীরা কেউ এই মৃত্যু সহজে মেনে নিতে পারেননি। সুশান্তকে খুনের অভিযোগ ওঠে।
প্রায় আড়াই বছর পর সুশান্তের মৃত্যুরহস্যের খাতা আবার খুলে গিয়েছে। কুপার হাসপাতালের মর্গকর্মী চাঞ্চল্যকর দাবি করেছেন সম্প্রতি। তাঁর দাবি, সুশান্তকে খুনই করা হয়েছিল।
মর্গে সুশান্তের মৃতদেহে একাধিক ক্ষতের চিহ্ন দেখেছিলেন বলে দাবি করেছেন কুপার হাসপাতালের মর্গকর্মী রূপকুমার শাহ। ওই হাসপাতালেই অভিনেতার দেহের ময়নাতদন্ত করা হয়।
একটি টিভি চ্যানেলকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে শাহ বলেন, ‘‘সুশান্ত সিংহ রাজপুত যখন মারা গিয়েছিলেন, তখন আমাদের কুপার হাসপাতালে ময়নাতদন্তের জন্য মোট পাঁচটি দেহ এসেছিল। পাঁচটির মধ্যে একটি দেহ ছিল সুশান্তের। তাঁর শরীরে একাধিক এবং গলায় গোটা তিনেক দাগ ছিল।’’
ওই মর্গকর্মী আরও বলেন, ‘‘ময়নাতদন্তের ভিডিয়ো রেকর্ড করার দরকার ছিল। যখন সুশান্তের দেহ প্রথম বার দেখি, তখনই সিনিয়রদের জানাই, আমার মনে হয় এটা আত্মহত্যার ঘটনা নয়। খুন হয়েছেন তিনি। কিন্তু ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ শুধুমাত্র দেহের ছবি তুলতে বলেন। তাঁদের নির্দেশ মেনেছিলাম।’’
মর্গকর্মীর দাবি শোনার পর সুশান্তের আইনজীবীর প্রতিক্রিয়া, ‘‘সুশান্তের মৃত্যু নিছকই আত্মহত্যা নয়, এর নেপথ্যে রয়েছে ষড়যন্ত্র। একমাত্র কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাই পারে এই সত্য উদ্ঘাটন করতে।’’
সুশান্তের মৃত্যুর পর বিস্তর কাটাছেঁড়া হয়েছিল। অভিনেতা আত্মহত্যা করেছেন বলে মানতেই চাইছিলেন না কেউ। অনুরাগীদের অনেকেই মনে করেছিলেন, তাঁদের প্রিয় অভিনেতাকে খুন করা হয়েছে। এই মৃত্যুর নেপথ্যে রয়েছে গভীর কোনও ষড়যন্ত্র। এমনকি কেউ কেউ দাবি করেছিলেন, সুশান্তকে আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়া হয়েছে।
সুশান্তের মৃত্যুর পর সমাজমাধ্যমে ঝড় উঠেছিল। ছড়িয়ে পড়েছিল তাঁর মৃতদেহের ছবি। সেই ছবি দেখিয়ে অনেকে দাবি করেছিলেন দেহে রয়েছে আঘাতের চিহ্ন। যদিও সেই সব ছবির সত্যতা যাচাই করেনি আনন্দবাজার অনলাইন।
২০২০ সালের অগস্ট মাসে একটি ভিডিয়ো শেয়ার করেছিলেন সুশান্তের দিদি শ্বেতা সিংহ কীর্তি। দাবি, ভিডিয়োটিতে কুপার হাসপাতালের এক কর্মীর সাক্ষাৎকারের অংশ রয়েছে। ওই কর্মীকে বিস্ফোরক দাবি করতে শোনা গিয়েছিল ভিডিয়ো। নতুন করে সেই ভিডিয়োও আবার ভাইরাল হয়েছে।
সাক্ষাৎকারে হাসপাতাল কর্মী দাবি করেছিলেন, সুশান্তের মৃতদেহে একাধিক সুচ ফোটানোর ক্ষতচিহ্ন মিলেছিল। এমনকি অভিনেতার পা ছিল বাঁকা এবং ভাঙা। তবে অভিযোগ, এই কোনও তথ্যই প্রকাশ্যে আনা হয়নি। সুশান্তের দিদির টুইট করা ভিডিয়োটির সত্যতাও যাচাই করেনি আনন্দবাজার অনলাইন।
কুপার হাসপাতালের মর্গকর্মী রূপকুমার যে দাবি করেছেন, তা সুশান্ত মৃত্যুরহস্যে নতুন মোড় এনে দিয়েছে। তবে নিজের বক্তব্যের স্বপক্ষে কোনও প্রমাণ দেখাননি তিনি।
দীর্ঘ দিন ধরে সুশান্তের মৃত্যুরহস্যের তদন্ত করছে সিবিআই। তারা এখনও এই মামলায় চূড়ান্ত কোনও সিদ্ধান্তে আসতে পারেনি। তদন্ত এখনও চলছে।
সুশান্তের মৃত্যুর ঠিক ৬ দিন আগে রহস্যজনক ভাবে মৃত্যু হয় তাঁর প্রাক্তন ম্যানেজার দিশা সালিয়ানের। বহুতল থেকে পড়ে মারা গিয়েছিলেন তিনি। সে মৃত্যু নিয়েও রহস্য জট পাকিয়েছিল।
কিছু দিন আগে দিশার মৃত্যুর তদন্ত নতুন করে শুরু করার জন্য বিশেষ তদন্তকারী দল বা সিট গঠন করার কথা বলে মহারাষ্ট্র সরকার। অভিযোগ, এই মৃত্যুর আসল কারণ প্রকাশ্যে আসেনি। তার জন্য আরও তদন্তের প্রয়োজন। দিশা কি নিজেই বহুতল থেকে ঝাঁপ দিয়েছিলেন, না কি তাঁকে কেউ ধাক্কা মেরেছিলেন? সবই খতিয়ে দেখার কথা সিটের।
৬ দিনের ব্যবধানে দিশা, সুশান্তের দুই মৃত্যুকে অনেকে মিলিয়ে দেখেছিলেন। দাবি উঠেছিল, এই দুই মৃত্যুর নেপথ্যেই গভীর ষড়যন্ত্র রয়েছে। সেগুলি একে অপরের সঙ্গে যুক্ত।
দিশার পাশাপাশি সুশান্তের মৃত্যুরহস্যের খাতাও আবার খুলে গিয়েছে কুপার হাসপাতালের মর্গকর্মীর দাবিতে। ফের মৃত্যু নিয়ে চলছে কাটাছেঁড়া।
সুশান্তের দেহের দু’বার ময়নাতদন্ত করে বিশেষজ্ঞ ও চিকিৎসকেরা জানান, এটি খুন নয়, আত্মহত্যার ঘটনা। অভিনেতা গভীর মানসিক অবসাদে ভুগছিলেন বলে অনুমান গোয়েন্দাদের। তবে তাতেও চর্চা থামেনি।
সুশান্তের মৃত্যুর ঘটনায় সিবিআইয়ের পাশাপাশি সমান্তরাল ভাবে তদন্ত চালিয়ে গিয়েছে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি) এবং নার্কোটিক্স কন্ট্রোল বুরো (এনসিবি)। সুশান্তের টাকা নয়ছয়ের অভিযোগ এবং বলিউডের মাদকের যোগ নিয়ে তদন্ত এগিয়েছে। ৮ সেপ্টেম্বর এনসিবি সুশান্তের বান্ধবী রিয়া চক্রবর্তীকে গ্রেফতার করে।
মাদককাণ্ডে রিয়ার গ্রেফতারির পর বলিউডে স্বজনপোষণের অভিযোগে সরব হয়ে ওঠেন একদল সুশান্ত অনুরাগী। কর্ণ জোহর থেকে শুরু করে আলিয়া ভট্ট, তোপ থেকে বাদ যাননি কেউ। সেই থেকেই শুরু হয় বলিউড বয়কট নীতি। যা এখনও চলছে।
সুশান্তের মৃত্যুর পর ৩০ মাস কেটে গিয়েছে। প্রাথমিক ভাবে যে ঝড় উঠেছিল, তা আপাতত স্তিমিত। তবে মর্গকর্মীর দাবিতে নতুন করে যেন খুলে গেল বন্ধ হয়ে আসা রহস্যের খাতা। উঠে গেল নানা প্রশ্ন।