১২ বছর আগে অস্ত্রোপচার করে হৃৎপিণ্ড প্রতিস্থাপনের পর জীবন ফিরে পেয়েছিলেন সনি গ্রাহাম। যাঁর কাছ থেকে হৃদ্যন্ত্র পেয়েছিলেন, তাঁরই বিধবা স্ত্রীকে পরে বিয়ে করেন গ্রাহাম। তবে চমকে দেওয়ার মতো বিষয় হল যে, গ্রাহাম এবং তাঁর স্ত্রীর প্রথম পক্ষের স্বামী মারা যান একই ভাবে। একই ভাবে আত্মহত্যা করেন দু’জনেই। পুলিশ জানিয়েছিল, মুখের মধ্যে বন্দুকের নল ঢুকিয়ে গুলি করে আত্মঘাতী হন দু’জনেই।
গ্রাহাম যাঁর কাছ থেকে এই হৃদ্যন্ত্র পেয়েছিলেন, তাঁর নাম টেরি কোটল। মৃত্যুর সময় টেরির বয়স ছিল ৩৩।
কোটলের হৃদ্যন্ত্র প্রতিস্থাপনের পরই প্রাণ ফিরে পেয়েছিলেন গ্রাহাম। এর পর টেরির বিধবা স্ত্রীকেই বিয়ে করেন গ্রাহাম।
মৃত্যুর সময় গ্রাহামের বয়স হয়েছিল ৬৯। পুলিশ তদন্তের পর জানিয়েছিল গ্রাহামের মৃত্যুর কারণ খুন বা অন্য কোনও নয়। আত্মহত্যাই করেছিলেন তিনি।
জর্জিয়া ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশনের বিশেষ এজেন্ট গ্রেগ হার্ভে জানিয়েছিলেন, গ্রাহামের মৃতদেহ তাঁরই বাড়ির পিছন থেকে উদ্ধার করা হয়।
১৯৭৯ থেকে ১৯৮৩ সাল পর্যন্ত সি পাইনসে ‘হেরিটেজ গল্ফ টুর্নামেন্টের’ পরিচালক ছিলেন গ্রাহাম। এর পর ১৯৯৫ সালে হৃদ্রোগে আক্রান্ত হন তিনি। চিকিৎসকরা তাঁকে জানান, যদি অতি সত্বর তাঁর হৃদ্যন্ত্র প্রতিস্থাপন না করা হয়, তা হলে তাঁকে আর বাঁচানো যাবে না।
এর পর গ্রাহামকে ফোন করে জানানো হয়, চার্লসটনে এক জন হৃদ্যন্ত্রদাতার খোঁজ পাওয়া গিয়েছে। হৃদ্যন্ত্রদাতার মৃত্যুর পর তাঁর পরিবারের সদস্যেরা অঙ্গদান করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলেও গ্রাহামকে চিকিৎসকরা জানান। ওই হৃদ্যন্ত্রদাতা ছিলেন টেরি।
টেরির হৃদ্যন্ত্র পাওয়া মাত্রই তা প্রতিস্থাপন করা হয় গ্রাহামের শরীরে। অস্ত্রোপচারের পর ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে উঠতে থাকেন গ্রাহাম।
নতুন হৃদ্যন্ত্রের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে গ্রাহাম একের পর এক চিঠি পাঠাতে থাকেন টেরির পরিবারকে।
১৯৯৭ সালের জানুয়ারিতে টেরির বিধবা স্ত্রী চেরিল কোটলের সঙ্গে চার্লসটনে দেখা করেন গ্রাহাম। চেরিল তখন ২৮ বছর বয়সি যুবতী।
এর পরই গ্রাহাম এবং চেরিল নিয়মিত ভাবে একে অপরের সঙ্গে দেখা করতে শুরু করেন। সেখান থেকেই একে অপরের সঙ্গে বন্ধুত্ব, বন্ধুত্ব গড়িয়ে প্রেম।
২০০১ সালে চেরিল এবং তাঁর চার সন্তানের জন্য ভিডালিয়াতে একটি বাড়ি কিনে নেন গ্রাহাম। তিন বছর পর, গ্রাহাম হিলটন হেডের হারগ্রে কমিউনিকেশনের প্ল্যান্ট ম্যানেজার হিসেবে চাকরি থেকে অবসর নেওয়ার পর ২০০৪ সালে এই যুগলের বিয়ে হয়।
আগের বিয়ে থেকে এই দুই যুগলের মোট ছয় সন্তান এবং ছয় নাতি-নাতনি ছিল।
গ্রাহামকে বিয়ের পর চেরিল তাঁকে জানান, আগের স্বামী টেরি কেন মারা গিয়েছিলেন তা তাঁর অজানা। চেরিল এ-ও জানান, টেরি কেন আত্মহত্যা করেছিলেন তা রহস্যই রয়ে গিয়েছে। আত্মহত্যার আগে পর্যন্ত টেরির ব্যবহারে কোনও বদল আসেনি বলেও চেরিল জানিয়েছিলেন।
এর পর ভালই কাটছিল গ্রাহাম এবং চেরিলের বৈবাহিক জীবন। তবে আবার কাল নেমে আসে ২০০৮ সালে।
হঠাৎই আত্মহত্যা করেন গ্রাহাম। টেরির মতো তিনিও মুখে শটগানের নল ঠেকিয়ে গুলি চালান। সঙ্গে সঙ্গেই মৃত্যু হয় তাঁর।
গ্রাহামের মৃত্যুর পর টেরির মৃত্যুরহস্য আবার মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে। প্রশ্ন ওঠে, কী করে একই ভাবে আত্মহত্যা করলেন চেরিলের প্রাক্তন এবং বর্তমান স্বামী।
পুলিশও গ্রাহামের মৃত্যুর পর ধন্দে পড়ে যায়। অনেকে মনে করেন, এই ঘটনার পিছনে রয়েছে ‘টেরির আত্মার প্রতিহিংসা’। আবার অনেকের মতে দুই স্বামীকে খুন করেছেন চেরিল-ই।
যদিও তদন্ত শেষে পুলিশ দাবি করে, টেরির মতো গ্রাহামও আত্মহত্যাই করেছেন। কেউ তাঁদের খুন করেননি।
আবার এক দলের দাবি ছিল, টেরির শরীরে এমন কোনও জিন ছিল, যা কোনও ভাবে গ্রাহামের শরীরে হৃদ্যন্ত্র প্রতিস্থাপনের পর ঢুকে পড়ে। আর এই জিনের কারণেই টেরির মতো গ্রাহামেরও আত্মহত্যার ইচ্ছা জাগে।