১৯৯৭ সালে মুক্তি পায় সুভাষ ঘাই পরিচালিত ‘পরদেশ’ ছবিটি। এই ছবিতে অভিনয় করেছিলেন শাহরুখ খান, মহিমা চৌধুরী এবং অপূর্ব অগ্নিহোত্রী। ছবির গল্পের সঙ্গে সঙ্গে গানগুলিও সকলের মন ছুঁয়ে গিয়েছিল। কিন্তু এই ছবির নেপথ্যকাহিনি ছিল ভিন্ন।
এই ছবিতে মুখ্যচরিত্রে অন্য তারকাদের অভিনয় করার কথা ছিল। যে তারকাদের নাম এই ছবির সঙ্গে জুড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা ছিল, তার জন্য প্রযোজক সংস্থার কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ টাকাও পেয়েছিলেন পরিচালক।
‘অর্জুন’ চরিত্রের জন্য পরিচালকের পছন্দ ছিল শাহরুখ খানকে। শাহরুখ ছাড়া যেন সেই চরিত্র অসম্পূর্ণ। কিন্তু এই ছবিতে অভিনয় করার ইচ্ছাপ্রকাশ করেছিলেন সলমন খান।
তবে, ‘অর্জুন’ চরিত্রের জন্য নয়, ‘রাজীব’ চরিত্রে অভিনয় করতে চেয়েছিলেন অভিনেতা। পরিচালককে সরাসরি জানিয়েওছিলেন তিনি।
সলমন একাই নন। ছবিতে অভিনয় করতে চেয়েছিলেন মাধুরী দীক্ষিতও। নব্বইয়ের দশকে তখন মাধুরীর কথা সকলের মুখে মুখে। রোম্যান্টিক ঘরানার হিন্দি ছবিগুলির চেনা মুখ ছিলেন মাধুরী।
‘গঙ্গা’ চরিত্রে অভিনয় করতে চান বলে পরিচালককে জানিয়েছিলেন অভিনেত্রী। তখন সুভাষের সঙ্গে তিনটি ছবিতে কাজ করার চুক্তিপত্রে সই করেছিলেন মাধুরী।
সুভাষকে তিনি জানিয়েছিলেন, ‘গঙ্গা’ নামটি তাঁর খুব পছন্দ হয়েছে। তাই তিনি এই চরিত্রে অভিনয় করতে চান।
যে ছবিতে শাহরুখ, সলমন এবং মাধুরী একসঙ্গে অভিনয় করবেন, সেই ছবি যে হিট করবে সে বিষয়ে নিশ্চিত ছিল প্রযোজক সংস্থা।
পরিচালককে বিপুল পরিমাণ অর্থ দিতেও রাজি হয়ে গিয়েছিলেন সকলে। কিন্তু বেঁকে বসেন পরিচালক।
তিনি জানান, মাধুরী দর্শকমহলে এতটাই জনপ্রিয় যে তাঁর ব্যাপারে এক রকম ধারণা তৈরি হয়ে গিয়েছে দর্শকের মনে।
কিন্তু সুভাষের মনে হয়েছিল, এই ছবিতে চরিত্রের প্রয়োজনে এমন এক অভিনেত্রীকে নেওয়া উচিত, যিনি দর্শকের কাছে সম্পূর্ণ অচেনা।
সেই অভিনেত্রীর চোখে মুখে এতটাই সারল্য থাকবে যা দেখে দর্শকের মনে ছাপ পড়ে যায় যে ‘গঙ্গা’ সত্যিই গ্রামের একটি মেয়ে।
মাধুরী এই চরিত্রে অভিনয় করলে কেউ আর চরিত্রের সঙ্গে নিজেদের আত্মস্থ করতে পারবেন না বলে মনে করেছিলেন পরিচালক। তাঁর মনে হয়েছিল, সে ক্ষেত্রে তাঁরা বুঝে যাবেন, মাধুরী এই চরিত্রে ‘অভিনয়’ করছেন। তাই মাধুরীর প্রস্তাব খারিজ করেছিলেন তিনি। তার বদলে নবাগতা মহিমাকে বেছে নেন পরিচালক।
সলমনের প্রস্তাবেও রাজি হননি তিনি। অভিনেতার প্রস্তাব যখন সুভাষ খারিজ করে দেন তখন রণিত রায় ভেবেছিলেন, তাঁকে এই চরিত্রে অভিনয় করার জন্য অনুরোধ করবেন পরিচালক।
রণিতের বাবা এবং সুভাষ ঘাইয়ের বন্ধুত্ব বহু দিনের। কিন্তু সুভাষ ‘রাজীব’ চরিত্রের জন্য বেছে নিয়েছিলেন অপূর্ব অগ্নিহোত্রীকে।
হিন্দি সিনেমাজগতের পরিচিত মুখদের বাদ দিয়ে পরিচালক যাঁদের নির্বাচন করেছিলেন, শাহরুখ বাদে তাঁরা কেউই বলিপাড়ায় তেমন পরিচিত ছিলেন না। সকলে ভেবেছিলেন, এই ছবি সাফল্যের মুখ দেখবে না।
কিন্তু পরিচালকের সিদ্ধান্ত একটুও ভুল ছিল না। সুপারহিট হয় ছবিটি। রোম্যান্টিক ঘরানার ছবি হিসাবে আজও ‘পরদেশ’ জনপ্রিয়।