অরুণাচল প্রদেশের তাওয়াং সীমান্ত উত্তপ্ত। চিনের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়েছে ভারতীয় সেনাবাহিনীর। এর মধ্যে আবারও অগ্নি-৫ ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষামূলক উৎক্ষেপণ করেছে ভারত। যদিও এই উৎক্ষেপণ পূর্বনির্ধারিতই ছিল বলে প্রতিরক্ষাসূত্রে খবর।
তাওয়াংয়ে চিনা আগ্রাসন রুখতে নজরদারি বাড়িয়েছে ভারতীয় সেনা। আকাশপথেও সীমান্তে কড়া নজর রাখা হচ্ছে। এই আবহে ভারতীয় সেনার মুকুটে জুড়তে চলেছে নতুন পালক। মনে করা হচ্ছে, এই ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষামূলক উৎক্ষেপণের মাধ্যমে পরোক্ষে চিনকে বার্তা দিতে চাইছে ভারত।
কেন এই ক্ষেপণাস্ত্র চিনকে চাপে ফেলতে পারে? ৫০০০ কিলোমিটার দূরে লক্ষ্যবস্তুতে গিয়ে আঘাত হানতে পারে অগ্নি-৫। অর্থাৎ প্রায় গোটা চিনের যে কোনও জায়গায় গিয়ে আঘাত হানতে পারবে এই ক্ষেপণাস্ত্র।
ভারত ছাড়া মাত্র কয়েকটি দেশের কাছে রয়েছে এই ইন্টার-কন্টিনেন্টাল ব্যালিস্টিক মিসাইল (আইসিবিএম) প্রযুক্তির ক্ষেপণাস্ত্র, যা ৫০০০ মিটারের বেশি দূরে থাকা লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে পারে। আমেরিকা, চিন, রাশিয়া, ফ্রান্স, ইজরায়েল, ব্রিটেন, উত্তর কোরিয়ার কাছে এই প্রযুক্তির ক্ষেপণাস্ত্র রয়েছে।
শুধু চিন নয়, আফ্রিকা এবং ইউরোপের কিছু জায়গাতেও ছুটে গিয়ে আঘাত হানতে পারে এই ব্যালিস্টিক মিসাইল। কয়েকটি রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে, ৮,০০০ কিলোমিটার দূরে গিয়ে লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে পারে অগ্নি-৫।
এই ক্ষেপণান্ত্র একসঙ্গে একাধিক লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে পারে। লক্ষ্যবস্তুকে নিখুঁত ভাবে ধ্বংস করতে পারে।
অগ্নি-৫-এর মাধ্যমে পরমাণু হামলাও চালানো যাবে। ১,৫০০ কেজি পরমাণু অস্ত্র বহন করতে সক্ষম এই অগ্নি-৫।
এই ক্ষেপণাস্ত্রকে চলমান উৎক্ষেপণ যানের মাধ্যমে উৎক্ষেপণ করা যাবে। অগ্নি-৫-এর দৈর্ঘ্য সাড়ে ১৭ মিটার। পরিধি ২ মিটার। ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরোধী অ্যান্টি ব্যালিস্টিক মিসাইল সিস্টেমকেও ধোঁকা দিতে সক্ষম এটি।
অগ্নি ১ থেকে ৫, এই পুরো সিরিজের ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি করেছে ডিআরডিও (ডিফেন্স রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন)। এই ক্ষেপণাস্ত্রগুলি সম্পূর্ণ দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি হয়েছে।
অগ্নি সিরিজের ক্ষেপণাস্ত্রের মধ্যে অগ্নি ৫-এর পাল্লা সবচেয়ে বেশি। অগ্নি ১-এর পাল্লা ৭০০ কিমি, অগ্নি ২-এর ২ হাজার কিমি, অগ্নি ৩ এবং ৪-এর পাল্লা আড়াই হাজার থেকে সাড়ে ৩ হাজার কিমি।
চিন, রাশিয়া, আমেরিকা আরও এক ধাপ উন্নত ক্ষেপণাস্ত্র তৈরির জন্য গবেষণা করছে। হাইপারসোনিক ক্ষেপণাস্ত্র তৈরির চেষ্টা করছে তারা, যা শব্দের গতিবেগের পাঁচ থেকে ২৫ গুণ জোরে ছুটবে। ভারতও পিছিয়ে নেই। সেনাবাহিনীর রিপোর্ট বলছে, আগামী ৫-৬ বছরে ভারতও তৈরি করতে চলেছে হাইপারসোনিক ক্ষেপণাস্ত্র ব্রহ্মস-২।
হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্রের অনেক বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যা আইসিবিএম প্রযুক্তির ক্ষেপণাস্ত্রেও থাকে। ভারতের অগ্নি-৫-এর সঙ্গে চিনের তৈরি ডিএফ-২৬-এর তুলনা করা হয়। ডিএফ-২৬-ও ১২০০ থেকে ১৮০০ কেজি পরমাণু অস্ত্র বহন করতে পারে। আঘাত হানতে পারে। আঘাত হানতে পারে ৫০০০ কিলোমিটার দূরে থাকা লক্ষ্যবস্তুতে।
তবে রিপোর্ট বলছে, ডিএফ-২৬-এর থেকে অগ্নি-৫-এর গুণমান অনেক ভাল। হালকা বোঝা নিয়ে সেটি প্রায় ৮০০০ কিলোমিটার দূরে লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে পারে।
২০২১ সালের ২৭ অক্টোবর অগ্নি-৫-এর পরীক্ষামূলক উৎক্ষেপণ হয়েছিল। আবার এ বছর ১৫ ডিসেম্বর ওড়িশা উপকূলে আব্দুল কালাম দ্বীপ থেকে অগ্নি-৫ ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা সফল হয়। এর মধ্যেই ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলে চিনা জাহাজের গতিবিধি চিন্তা বাড়িয়েছে প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের।
এর মধ্যেই কলকাতা থেকে জেলা, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার আকাশে আচমকা দেখা যায় অদ্ভুত আলো। আর তা ঘিরেই ঘনিয়েছিল রহস্য। ওই আলো ঘিরে সাধারণ মানুষের মনে তৈরি হয় কৌতূহল। জল্পনা তৈরি হয়েছিল—তা হলে কী ভিন্গ্রহীদের যান এসে পৌঁছেছে বাংলার আকাশে?
আকাশে অদ্ভুত সেই আলো কিসের? এ নিয়ে হাজারো জল্পনার মধ্যেই সামনে এল নতুন তত্ত্ব। প্রতিরক্ষা মন্ত্রক সূত্রে খবর, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় পরীক্ষা করা হয়েছে অগ্নি-৫ ক্ষেপণাস্ত্রের। ওই উৎক্ষেপণ সফল হয়েছে। আর আকাশের রহস্যময় আলো নাকি সেই ক্ষেপণাস্ত্রেরই।
ওড়িশার চাঁদিপুর থেকে বাঁকুড়া কাছাকাছি হওয়ায় সন্ধ্যার আকাশে সেই আলো অনেকটা স্পষ্ট ভাবে দেখা গিয়েছে। ঘটনাচক্রে এই ধরনের ক্ষেপণাস্ত্র এই প্রথম রাতে পরীক্ষা করা হল। ডিআরডিও সূত্রে জানা গিয়েছে, শুধু অগ্নি-৫ নয়, অগ্নি-৬ এর মতো আরও দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র তৈরির প্রক্রিয়া চলছে।