ফ্লোরা সাইনি। পেশায় মডেল-অভিনেত্রী। কলকাতায় মডেলিং জগতে নাম করার পাশাপাশি বলিউডেও নিজের জায়গা করে নিয়েছেন ফ্লোরা। আলোর রোশনাইয়ে ঘেরা জীবন হলেও তাঁর জীবনেও রয়েছে শ্রদ্ধা হত্যাকাণ্ডের ছায়া।
পরিচালক গৌরাঙ্গ দোশির সঙ্গে সম্পর্কে ছিলেন ফ্লোরা। গৌরাঙ্গের সঙ্গে একত্রবাস করতেন তিনি। কিন্তু নিজের প্রেমিকের সঙ্গে আফতাবের কোনও পার্থক্য খুঁজে পাননি তিনি। সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে নিজের ব্যক্তিগত জীবনের তিক্ত অভিজ্ঞতা জানিয়েছেন ফ্লোরা।
ফ্লোরার অভিযোগ, নিয়মিত শারীরিক এবং মানসিক নির্যাতনের শিকার হতেন তিনি। ফ্লোরা বলেন, ‘‘প্রথম দিকে ওকে আমার খুব ভাল মনে হত। আমার যত্ন নিত খুব। কিন্তু ও যে এ ভাবে পাল্টে যাবে, তা কখনও ভাবতে পারিনি।’’
গৌরাঙ্গের জন্য নিজের বাড়ি ছেড়ে এসেছিলেন ফ্লোরা। বাড়ি ছাড়ার এক সপ্তাহের মধ্যে গৌরাঙ্গের সঙ্গে একত্রবাস করতে শুরু করেন অভিনেত্রী। ফ্লোরার বাবা-মা দু’জনেই প্রথমে গৌরাঙ্গকে ভাল চোখে দেখলেও পরে তাঁরা বুঝতে পারেন, ফ্লোরা ভুল মানুষের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছেন। বার বার মেয়েকে সাবধান করতেন তাঁরা। কিন্তু গৌরাঙ্গকে ছেড়ে আসতে পারছিলেন না ফ্লোরা।
ফ্লোরাকে মারধর করে তাঁর চোয়াল ভেঙে দিয়েছিলেন গৌরাঙ্গ। ফ্লোরার দাবি, মারার পর হঠাৎ করে গৌরাঙ্গ একটি ফোটো ফ্রেম হাতে তুলে নেন। ফ্রেমে গৌরাঙ্গের বাবার একটি ছবি আটকানো ছিল। গৌরাঙ্গ ছবির উপর হাত রেখে বলেছিলেন, ‘‘আজ তোমাকে আমি মেরেই ফেলব’’।
গৌরাঙ্গের এমন ভয়াবহ রূপ দেখে হাত-পা ঠান্ডা হয়ে যায় ফ্লোরার। সাক্ষাৎকারে ফ্লোরা বলেন, ‘‘আমার কানে তখন মায়ের কণ্ঠ ভেসে আসছিল। তিনি যেন আমার কানের কাছে অনবরত বলে চলেছেন পালিয়ে যেতে।’’
ফ্লোরার মা এক সময় তাঁকে বলেছিলেন, ‘‘তোমার কাছে টাকাপয়সা আছে কি না, তুমি ঠিকঠাক পোশাক পরে রয়েছ কি না, তা নিয়ে ভাববে না। পালিয়ে যাও এখান থেকে।’’ এই কথাটি বার বার কানে বাজতে থাকে ফ্লোরার।
ফ্লোরা কোনও কিছু না ভেবে নিজের বাড়িতে পালিয়ে যান। তার পর আর গৌরাঙ্গের কাছে ফিরে আসেননি তিনি। ফ্লোরার অভিযোগ, পুলিশের কাছে তিনি গৌরাঙ্গের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানাতে গিয়েছিলেন। কিন্তু পুলিশ কিছুতেই অভিনেত্রীর অভিযোগ শুনতে রাজি হয়নি। বরং গৌরাঙ্গকে ফোন করে জানিয়ে দিয়েছিল, ফ্লোরা তাঁর বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ জানাতে এসেছেন।
পরে অবশ্য ফ্লোরা থানায় লিখিত অভিযোগ জানিয়েছিলেন। ‘মি টু’ আন্দোলন চলাকালীনও এই বিষয়ে সরব হয়েছিলেন ফ্লোরা। জীবনের এত কঠিন মুহূর্ত পার করেও নিজের কেরিয়ারে সফল হয়েছেন তিনি।
রজনীকান্ত, জগপতি বাবু, রাজাশেখর, সলমন খান, বিদ্যা বালনের মতো নামকরা তারকাদের সঙ্গে একই পর্দায় কাজ করার সুযোগ পেয়েছেন ফ্লোরা।
কলকাতায় মডেলিং জগতে কাজ শুরু করার পর এক প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেন ফ্লোরা। ওই প্রতিযোগিতায় জেতেন তিনি। তার পর দক্ষিণী ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে চুটিয়ে কাজ করতে দেখা যায় ফ্লোরাকে।
১৯৯৯ সালে তেলুগু ছবি ‘প্রেমা কোসম’-এর মাধ্যমে অভিনয় জগতে পা ফেলেন ফ্লোরা। এর পর বহু কন্নড়, তামিল, তেলুগু এবং হিন্দি ছবিতে অভিনয় করতে দেখা গিয়েছে তাঁকে।
অভিনয়ের ঝুলি থেকে বাদ পড়েনি বাংলা ওয়েব সিরিজ়ও। ‘দুপুর ঠাকুরপো’ ওয়েব সিরিজ়ে অভিনয় করেছিলেন তিনি।
‘গন্দি বাত’, ‘ট্রিপল এক্স’, ‘ইনসাইড এজ’, ‘মায়ানগরী: সিটি অফ ড্রিমস’ নামের হিন্দি ওয়েব সিরিজ়ে অভিনয় করতে দেখা যায় ফ্লোরাকে।
‘দবাং ২’, ‘ধনক’, ‘বেগম জান’, ‘গুড্ডু কি গান’ প্রভৃতি ছবিতে পার্শ্বচরিত্রে অভিনয় করেছেন ফ্লোরা।
কিন্তু ‘স্ত্রী’ ছবিতে স্ত্রীর চরিত্রে অভিনয় করে দর্শকের মনে ভয়ের উদ্রেক ঘটাতে সফল হয়েছিলেন ফ্লোরা।
ফ্লোরা যদিও পর্দায় অন্য নাম ব্যবহার করেন। আশা সাইনি নামে বেশি পরিচিত তিনি।
জম্মু ও কাশ্মীরে জন্ম ফ্লোরার। অভিনেত্রীর বাবা সেনাবাহিনীতে কর্মরত ছিলেন।
দিল্লির আর্মি পাবলিক স্কুলে পড়াশোনা শেষ করেছেন ফ্লোরা। স্কুলের গণ্ডি পার করার পর পরিবার-সহ কলকাতায় চলে আসেন তিনি।