বৃহস্পতিবার সন্ধ্যাবেলা আচমকাই অদ্ভুত এক আলো ছেয়ে গেল। কলকাতা থেকে জেলার আকাশে দেখা গেল সেই আলো। স্বাভাবিক ভাবেই সেই আলো নিয়ে তৈরি হয় কৌতূহল। প্রথমে অনেকেই মনে করেছিলেন, এই বুঝি ভিন্ গ্রহ থেকে এল কোনও ‘বঙ্কুবাবুর বন্ধু’। পরে কৌতূহলের নিরসনও হয়েছে। তবে হঠাৎ আকাশে আলো এই প্রথম নয়। এর আগেও বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন সময়ে উদয় হয়েছে। আবার নিভেও গিয়েছে। তাদের কারণও ছিল ভিন্ন।
বৃহস্পতিবার, ১৫ ডিসেম্বর প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছিলেন, সন্ধ্যা ৫টা বেজে ৫০ মিনিট থেকে ৬টার মধ্যে আকাশের পূর্ব দিকে দেখা গিয়েছে ওই আলো। কয়েক মিনিট আকাশে স্থায়ী হয়েছিল সেই আলো। দেখতে ছিল অনেকটা সার্চ লাইটের মতো। নির্দিষ্ট দিকে ছুটতে দেখা যায় তাকে। খুব জোরালো ছিল না, তবে স্পষ্ট ছিল।
পরে সেই আলোর আসল কারণ জানা যায়। প্রতিরক্ষা মন্ত্রক সূত্রে জানা গিয়েছে, ওড়িশার আবদুল কালাম দ্বীপে অগ্নি-৫ ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষামূলক উৎক্ষেপণ চলছিল। তারই আলো দেখা গিয়েছিল পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলার আকাশে। যদিও কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে এই নিয়ে কিছু জানানো হয়নি।
এর আগে উত্তরপ্রদেশের আকাশেও দেখা গিয়েছিল এ রকম আলো। চলতি বছরেরই সেপ্টেম্বর মাসে। ঠিক আলো নয়, দেখা গিয়েছিল আলোর পঙ্ক্তি। মনে হচ্ছিল যেন ট্রেন ছুটছে। উত্তরপ্রদেশের অরাইয়া, কনৌজের জালাবাবাদ, হরদৈয়ের পালি গ্রাম, ফারুখাবাদ থেকে দেখা গিয়েছিল সেই আলো।
উত্তরপ্রদেশের সেই আলো দেখে সমাজমাধ্যমে অনেকেই দাবি করেছিলেন, ওটি কোনও উপগ্রহের। ইলন মাস্কের স্পেসএক্স সংস্থার কোনও উপগ্রহ হয়তো। কেউ ঠাট্টা করে লিখেছিলেন, নির্ঘাত কোনও ড্রোন উড়ছিল। তারই আলো।
শেষ পর্যন্ত সেই আলোর সারি কিসের, তা নিয়ে ধন্দ পুরোপুরি কাটেনি। তবে বিশেষজ্ঞরা মনে করেছিলেন, স্পেসএক্সেরই উপগ্রহ সেগুলি। ১১ সেপ্টেম্বরই ইলনের সংস্থা জানিয়েছিল, ৩৪টি স্টারলিঙ্ক উপগ্রহ পাঠিয়েছে তারা।
২০২১ সালের ডিসেম্বরে একই ভাবে উত্তর ভারতের বিভিন্ন রাজ্যের আকাশে দেখা গিয়েছিল সেই আলোর সারি। সেই আলোও ছিল ইলন মাস্কের সংস্থা স্পেসএক্সের পাঠানো উপগ্রহের। পরে সংস্থার তরফে তা জানানোও হয়েছিল।
২০২১ সালের ৮ সেপ্টেম্বর ভূমিকম্প হয় মেক্সিকোতে। রিখটার স্কেলে কম্পনের মাত্রা ছিল ৭। মারা গিয়েছিলেন অন্তত এক জন। যে সময় কাঁপছে মেক্সিকোর আকাপালকো, সে সময় আকাশে দেখা গিয়েছিল আলোর ছটা। কখনও লাল, কখনও নীল।
অনেকেই মনে করেছিলেন, এ বোধ হয় ‘ভূমিকম্পের আলো’। কারণ, এক মাত্র সে সময়ই দেখা দেয় এই আলো। ২০১৭ সালে মেক্সিকোয় ভূমিকম্প হয়েছিল। তখনও আকাশে এই আলো দেখা গিয়েছিল। যদিও ভূতত্ত্ববিদরা এর কোনও কারণ খুঁজে পাচ্ছিলেন না।
পরে জানা গেল, নাহ্, এটি ‘ভূমিকম্পের আলো’ নয়। আসলে কম্পনের কারণেই বৈদ্যুতিন খুঁটিগুলো কাঁপতে থাকে। উপড়ে যায়। তার ফলে বিস্ফোরণ হয়। সে কারণেই তৈরি হয় আলোর ছটা।
২০২০ সালের এপ্রিলে তুরস্কের ইস্তানবুল এবং উত্তর পশ্চিমের শহরগুলিতে দেখা গিয়েছিল আলোর সারি। অনেকেই মনে করেছিলেন, ভিন্গ্রহীরা বুঝি নামল পৃথিবীতে! সে রকম আদতে কিছুই নয়। সেই আলোও ছিল ইলন মাস্কের সংস্থা স্পেসএক্সের পাঠানো উপগ্রহের।
২০২০ সালের ২৯ নভেম্বর জাপানের আকাশে দেখা গিয়েছিল এক আগুনের গোলা। বহু নাগরিক সেই ছবি ও ভিডিয়ো সমাজমাধ্যমে পোস্ট করেন। মূলত পশ্চিম এবং মধ্য জাপানে দেখা গিয়েছিল সেই আলোর গোলা। কেউ কেউ দাবি করেছিলেন, সেই গোলা থেকে শব্দ ভেসে আসছিল।
জাপানের একটি তারামণ্ডলের প্রধান তাকেশি ইনোও সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছিলেন, ওই আলোর গোলা আসলে বোলাইডের। যে সব উল্কা শুক্রের থেকেও বেশি উজ্জ্বল হয়, তাদের বলে বোলাইড। এ রকম উল্কা কমই দেখা যায়।
২০১৫ সালের নভেম্বরে ক্যালিফোর্নিয়ার আকাশে উড়তে দেখা গিয়েছিল একটি আলোকে। অনেকে মনে করেছিলেন ফানুস। বহু মানুষ আতঙ্কিত হয়ে ঘর ছেড়েছিলেন। ভেবেছিলেন, কোনও গোলা এসে পড়ল তাঁদের ঘরে। এক ঝলক দেখে অনেকে ভেবেছিলেন চাঁদ। নয়তো কোনও উপগ্রহ। ছড়িয়েছিল আতঙ্ক।
আমেরিকার নেভাদা, অ্যারিজোনা, সান ফ্রান্সিসকো থেকেও দেখা গিয়েছিল সেই আলো। একের পর এক ফোন গিয়েছিল থানায়। পুলিশ ফোন ধরতে ধরতে ক্লান্ত হয়ে পড়ে।
পরে অরেঞ্জ কাউন্টির শেরিফ বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছিলেন, মার্কিন নৌবাহিনী সামরিক মহড়া দিচ্ছিল। ক্যালিফোর্নিয়া উপকূলে। সেই আলোই দেখা গিয়েছিল রাতের আকাশে।
১৯৯৪ সালের ৮ মার্চ মিশিগান হ্রদের পূর্ব তীরে অদ্ভুত এক আলো দেখা গিয়েছিল। প্রায় তিনশো ফোন এসেছিল আমেরিকার পুলিশের জরুরিকালীন নম্বর ৯১১-এ। দেখে মনে হচ্ছিল, একটা আলো কেমন যেন নড়ছে আকাশে। কারও মনে হয়েছিল পূর্ণিমার চাঁদ। গোলাকার বা সিলিন্ডারের মতো আকার ছিল সেই আলোর। অনেকেই মনে করেছিলেন ভিন্গ্রহীরা এসেছে।
সেই ঘটনার পর ২৮ বছর কেটে গিয়েছে। আজও উদ্ধার হয়নি আলোর উৎস বা কারণ। তার আগে ১৯৬৬ সালেও মিশিগান হ্রদের উপর দেখা গিয়েছিল অদ্ভুত সেই আলো। তবে তা এ বারের মতো এত বড় নয়। এক ঝলক দেখা দিয়েই নিভে গিয়েছিল সেই আলো। কেউ বলেন, পরলৌকিক কিছু। কেউ দাবি করেন, নির্ঘাত এসেছিল ভিন্গ্রহীরা।