নিজস্বী তুলতে কে না ভালবাসে! কিন্তু, সেই ছবি তোলাই যদি আইনবিরুদ্ধ হয়? এমনকি, গাছের ডালে বসে থাকতে দেখলেও যদি পুলিশ আপনার কাছে জরিমানা চেয়ে বসে?
শুনতে অবাক লাগলেও এই ঘটনাগুলি সত্যি। পৃথিবীতে এমন জায়গাও রয়েছে, যেখানে মাঝরাতে বাথরুম ব্যবহার করলেও অপরাধ হিসাবে ধরা হয়। স্ত্রীর জন্মদিন ভুললেও জরিমানা ধার্য করা হয় কোনও কোনও দেশে।
দেশ-বিদেশের বিভিন্ন প্রান্তে এ রকম কিছু আইন চালু রয়েছে, যা অদ্ভুত মনে হলেও, অমান্য করলে শাস্তি হিসাবে জরিমানাও করা হয়। নীচে এমনই কিছু আজব দেশের আজব নিয়মকানুন উল্লেখ করা হল।
ঘরের বাতি বদল করার জন্যেও লাইসেন্স থাকতে হবে, এমনই নিয়ম রয়েছে অস্ট্রেলিয়ায়। ভিক্টোরিয়া অঞ্চলের ইলেকট্রিক মিস্ত্রিদের লাইসেন্স থাকা বাধ্যতামূলক। তা ছাড়া ইলেকট্রিকের কোনও কাজ, এমনকি, কারও বাড়িতে লাইট বা বাল্ব খারাপ হলে তা ঠিকও করতে পারবেন না তাঁরা। বরং, আইন ভাঙার জন্য জরিমানা দিতে হবে তাঁদের।
বেড়াতে গেলে কমবেশি সকলেই নিজস্বী তুলতে পছন্দ করেন। কিন্তু, শ্রীলঙ্কায় ঘুরতে গেলে স্থান-কাল-পাত্র বিবেচনা করে নিজস্বী তুলতে হয়। শ্রীলঙ্কার সঙ্গে গৌতম বুদ্ধ ওতপ্রোতভাবে জড়িত। প্রায় সর্বত্র বুদ্ধমূর্তি চোখে পড়ে। কিন্তু এই মূর্তির ছবি তোলার উপরেও নানা রকম নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।
বুদ্ধমূর্তির সঙ্গে কোনও রকম নিজস্বী তোলা যাবে না। এমনকি, মূর্তির দিকে পিছন ফিরে দাঁড়িয়ে ছবি তোলাও নিষেধ। এমন ছবি তুলতে দেখলেই পুলিশ এসে হাজির হবে। প্রথমে ফোন থেকে সব ছবি ‘ডিলিট’ করতে বলবে পুলিশ। সেই নির্দেশ না মানলে জরিমানাও আদায় করা হবে।
কিছু বিশেষ ভঙ্গিমাতেই দর্শনার্থীরা বুদ্ধমূর্তির সঙ্গে ছবি তুলতে পারেন। শ্রীলঙ্কার আইন অনুযায়ী, মূর্তির সামনে পাশ ফিরে দাঁড়ালে অথবা মূর্তির দিকে মুখ করে দাঁড়ালে তা আইনবিরুদ্ধ নয়।
বায়ুদূষণ, জলদূষণের মতো শব্দদূষণও পরিবেশের ক্ষতি করে থাকে। এর ক্ষতিকর প্রভাব কমাতে বিশ্ব জুড়ে বিভিন্ন আইন কার্যকরী করা হয়েছে। সুইৎজারল্যান্ডেও শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে রাখার উদ্দেশ্যে আইন রয়েছে। তবে, তা শুনলে অবাক হতে হয় বৈকি।
রাত দশটার পর কোনও সুইৎজারল্যান্ডবাসী শৌচালয়ে গেলেও ‘টয়লেট ফ্লাশ’ ব্যবহার করতে পারবেন না। রাতে সেই আওয়াজটুকুও শব্দদূষণের আওতায় পড়ে বলে এই নিয়ম চালু করা হয়েছে।
তাই সুইৎজারল্যান্ডে কাকভোর অবধিও ‘টয়লেট ফ্লাশ’ ব্যবহার করেন না কেউ। দেশের আইন অনুযায়ী, একটি নির্দিষ্ট সময়ের পর আবার তা ব্যবহার করা যায়।
ছোটবেলায় খেলাধুলো করার সময় গাছে চড়তে ভালবাসতেন? তবে আপনি যদি কানাডার বাসিন্দা হন, তা হলে গাছে চড়ার জন্যও জরিমানা দিতে হবে। কানাডার ওশাওয়া এলাকার উদ্যানগুলিতে এই আইন প্রযোজ্য।
এই অঞ্চলে যতগুলি উদ্যান রয়েছে, সেখানে যদি কাউকে গাছে চড়তে দেখা যায়, তবে পুলিশ তাঁর কাছে জরিমানা ধার্য করবে। এই প্রসঙ্গে কানাডার পুলিশ জানিয়েছে, এই আইন ওশাওয়া বাসিন্দাদের নিরাপত্তার কথা ভেবেই তৈরি করা হয়েছে।
রেডিয়ো চ্যানেলে কাজ করতে গেলে অনেক নিয়মবিধি মেনে চলতে হয়। তবে, এর জন্য আলাদা আইন রয়েছে কানাডায়। যে কোনও রেডিয়ো চ্যানেলে কোনও অনুষ্ঠান সম্প্রচার করতে হলে তাতে অংশগ্রহণকারী শিল্পীদের ৩৫ শতাংশ কানাডার নাগরিক হতে হবে।
প্রিয়জনের জন্মদিন ভুলে যাওয়াও আইনের বিরুদ্ধে। এ রকমই নিয়ম রয়েছে ওশিয়ানিয়ায়। সামোয়া অঞ্চলে কোনও বিবাহিত পুরুষ ভুলবশত তাঁর স্ত্রীর জন্মদিন ভুলে গেলে তাঁর হাজতবাস পর্যন্ত হতে পারে।
জন্মদিনে কোনও শুভেচ্ছা না জানানো অথবা জন্মদিন পালন না করার অর্থ, স্ত্রীর যে আজ জন্মদিন তা ভুলেই গিয়েছেন তাঁর স্বামী। গৃহপত্নী যদি স্বামীর বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে অভিযোগ করেন, তবে স্বামীকে এক দিনের জন্যে হাজতে রাখে পুলিশ।
বাড়িতে কুকুর পুষছেন, কিন্তু তাকে ঠিক মতো সময় দিতে পারছেন না? ইটালিতে এই নিয়েও আইন জারি করা হয়েছে। তুরিন এলাকার বাসিন্দারা সারা দিনে অন্তত তিন বার তাঁদের পোষ্য কুকুরকে নিয়ে বাড়ি থেকে বাইরে না বেরোলে ৬৫০ আমেরিকান ডলার (ভারতীয় মুদ্রা অনুযায়ী ৫১,৭১০ টাকা) জরিমানা ধার্য করা হয়।
ইটালিতে প্রতি বছর সাড়ে তিন লক্ষ পোষ্যকে উদ্ধার করা হয়। সে দিকে লক্ষ রেখেই এই আইনি পদক্ষেপ করা হয়েছে তুরিনে।
পোষ্যকে নিয়ে রাস্তায় বেরোলেও আইন মেনে চলতে হয়। ক্যাপ্রি দ্বীপপুঞ্জের বাসিন্দারা তাঁদের বাড়ির পোষা কুকুরকে নিয়ে বেরোনোর পর খেয়াল রাখেন, যেন তাঁদের পোষ্য রাস্তায় মলত্যাগ না করে।
এ রকম ঘটনা ঘটলেও মালিককে তা পরিষ্কার করতে হয়। যদি কেউ এ দায়িত্ব এড়িয়ে যান, তবে সেই মল সংগ্রহ করে তার ডিএনএ পরীক্ষা করা হয়। সেই পরীক্ষায় দোষী ধরা পড়ে এবং আইন ভাঙার জন্য জরিমানা হিসাবে ২৪০ আমেরিকান ডলার (ভারতীয় মুদ্রা অনুযায়ী ১৯ হাজার টাকা) আদায় করা হয়।
সেনাবাহিনীতে এক বিশেষ প্রিন্টের পোশাক ব্যবহারের চল রয়েছে যা বনে-জঙ্গলে লুকোতে সাহায্য করে। আবার, ওই বিশেষ প্রিন্ট বা ক্যামোফ্লাজ ডিজাইনের পোশাক বাজারে বিক্রি হতে দেখা যায়, যা দেশের নাগরিকরাও নিজেদের ইচ্ছেমতো পরতে পারেন।
কিন্তু, আফ্রিকা এবং ক্যারিবিয়ান অঞ্চলে আইন রয়েছে, সেনাবাহিনীতে কর্মরত না হলে কেউ এই বিশেষ প্রিন্টের জামা পরতে পারবেন না। কেউ এই আইন অমান্য করলে তাঁদের প্রতি নির্দিষ্ট পরিমাণ জরিমানা ধার্য করা হয়।
ভেনিসের একটি দ্রষ্টব্য স্থান সেন্ট মার্ক স্কোয়ার। এই এলাকায় প্রচুর পায়রার বাস। স্মৃতিস্তম্ভের গায়ে যদি কোনও ভাবে পায়রা মলত্যাগ করে, তা হলে তা স্মৃতিস্তম্ভের সৌন্দর্য নষ্ট করে ফেলবে।
এই কথা মাথায় রেখে ইটালির সরকার ২০০৮ সালে একটি আইন জারি করে। সেই আইন অনুযায়ী, পায়রাদের কেউ কিছু খাওয়ালে তাঁর কাছ থেকে ৭০০ ইউরো পর্যন্ত (ভারতীয় মুদ্রায় ৫৫,৭৬৬ টাকা) জরিমানা আদায় করা হবে।
ওটিটি মঞ্চের জনপ্রিয়তা বিশ্বজোড়া। অনেক সময় খরচ বাঁচাতে বন্ধু বা প্রিয়জনের অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে সিনেমা অথবা ওয়েব সিরিজ দেখেন অনেকেই। কিন্তু আমেরিকায় এই কাজ করলে জরিমানা হতে বাধ্য।
টেনেসি অঞ্চলে বসবাসকারীদের কেউ যদি ওটিটি মঞ্চের পাসওয়ার্ড অন্য কাউকে ব্যবহার করতে দেন, তা হলে সেই ব্যক্তির কাছ থেকে জরিমানা আদায় করা হয়। শুধু তা-ই নয়, যিনি এই পাসওয়ার্ড চেয়েছেন, তাঁর প্রতিও জরিমানা ধার্য করা হয়। এমনকি, এই অপরাধে তাঁদের জেল পর্যন্ত হতে পারে।