জন্মলগ্ন থেকেই পৃথিবী নানা রকমের রহস্যে ঘেরা। এমনও কিছু রহস্য পৃথিবীর বুকে রয়েছে যার উত্তর আজ পর্যন্ত উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। সে রকমই এক রহস্য ‘টিলটেপেক’ গ্রাম।
রহস্যে মোড়া মেক্সিকোর এই গ্রামের অপর নাম ‘ভিলেজ অফ ব্লাইন্ড’। অর্থাৎ, ‘অন্ধদের গ্রাম’।
‘টিলটেপেক’ গ্রামের মানুষ থেকে শুরু করে গবাদি পশু, বন্য প্রাণী অর্থাৎ, এই গ্রামে বসবাসকারী প্রতিটি জীবন্ত প্রাণী চোখে দেখতে পায় না।
বিশ্বাস করতে কষ্ট হলেও সত্যি সত্যিই ‘টিলটেপেক’ গ্রামের অস্তিত্ব রয়েছে। এবং সত্যিই এই গ্রামের প্রতিটি মানুষ এবং প্রাণী অন্ধ।
মেক্সিকোর গভীর অরণ্যে থাকা ছোট্ট এই গ্রামে ‘জাপোটেক’ প্রজাতির বাস। ৩০০-রও বেশি জাপোটেক পরিবার এই গ্রামে বাস করেন।
‘টিলটেপেক’ গ্রামটি মেক্সিকোর গভীর জঙ্গলে। সভ্যতা ও উন্নয়ন থেকে বহু ক্রোশ দূরে।
এই গ্রামের বাসিন্দারা মূলত, বাজরা, শিম এবং লঙ্কা খেয়ে দিন গুজরান করেv। প্রচুর পরিমাণে মদও পান করেন ‘জাপোটেক’ প্রজাতির মানুষেরা। মদ খেয়ে আগুনের চারপাশে নাচ করা এই গ্রামের অন্যতম উৎসব।
টিলটেপেক গ্রামে প্রায় ৭০টি কুঁড়ে ঘর রয়েছে। কিন্তু এর মধ্যে কোনও ঘরেই দরজা-জানালা নেই।
এই গ্রামে জন্ম নেওয়া সব শিশুই প্রাথমিক ভাবে আর পাঁচটা শিশুর মতো সুস্থ ও সবল হয়। কিন্তু কালের নিয়মে অদ্ভুত ভাবে এক সপ্তাহের মধ্যেই তারা দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে ফেলে।
এই এলাকার বাসিন্দাদের মতে, এই গ্রামে পাখি উড়ে না। তাঁদের দাবি, এই গ্রামের উপর দিয়ে ওড়ার সময় তারা অন্ধ হয়ে যায় এবং বড় বড় গাছে গিয়ে ধাক্কা মেরে সেখানেই মারা যায়।
কিন্তু কেন এই গ্রামের প্রাণীরা চোখে দেখতে পায় না? টিলটেপেকের বাসিন্দারা কেন দৃষ্টিশক্তি হারাচ্ছেন তা নিয়ে তদন্ত শুরু করেছিল মেক্সিকোর স্থানীয় প্রশাসন এবং বিজ্ঞানীরা। গ্রামের বাসিন্দাদের বিশ্বাস, একটি অভিশপ্ত গাছের কারণেই এই গ্রামের সব প্রাণী অন্ধ।
স্থানীয়দের মতে, টিলটেপেকের বাসিন্দাদের অন্ধ হওয়ার কারণ ‘লাভজুয়েলা’ নামের একটি গাছ। যদিও বিজ্ঞানীরা এখনও পর্যন্ত এই গাছের অস্তিত্ব খুঁজে পাননি।
তবে স্থানীয়দের দাবি, ওই গাছ গ্রামের মধ্যেই রয়েছে। সেই গাছের অভিশাপেই নাকি গ্রামবাসীদের এই অবস্থা।
বিজ্ঞানীদের ধারণা, টিলটেপেক গ্রামের বাসিন্দাদের অন্ধ হওয়ার নেপথ্যে রয়েছে ‘ব্ল্যাক ফ্লাই’ নামের এক বিষাক্ত মাছি।
বিজ্ঞানীরা আবিষ্কার করেছেন, মেক্সিকোর ওই ঘন জঙ্গলে প্রচুর পরিমাণে ব্ল্যাক ফ্লাই মাছি রয়েছে। যা প্রচুর পরিমাণে দেখতে পাওয়া যায় টিলটেপেক গ্রামেও।
এই বিষাক্ত মাছির কামড়ে সারা শরীরে জীবাণু ছড়ায়। জীবাণুর অভিঘাত এতটাই বেশি যে, এর সরাসরি প্রভাব পড়ে চোখের স্নায়ুর ওপর। তবে এর বিপক্ষ মতও রয়েছে।
আর সেই কারণেই এই গ্রামের শিশু থেকে শুরু করে বৃদ্ধ এবং পশুপাখি ধীরে ধীরে দৃষ্টিশক্তি হারাতে থাকে।
মেক্সিকোর সরকার যখন প্রথম টিলটেপেকের সম্পর্কে জানতে পারে, তখন এই গ্রামের বাসিন্দাদের অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল।
কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে গ্রামবাসীদের অনেকে অসুস্থ হয়ে যান। বেশ কয়েক জন মারাও যান। এর পর তাঁদের আবার টিলটেপেকে ফিরিয়ে দিয়ে আসা হয়।