ওটিটি প্ল্যাটফর্মে শুরু হয়েছে জনপ্রিয় রিয়ালিটি শো ‘বিগ বস্’ সিজ়ন-৩। নির্মাতাদের দাবি, এ বার ‘অন্য রকম’ স্বাদ পাবেন দর্শকেরা। থাকবে চমকের পর চমক। যে সমস্ত প্রতিযোগীকে এ বার এই শোয়ে আনা হয়েছে, তাঁদের মধ্যে অন্যতম চমকের নাম নায়েজ়ি দ্য বা।
মুম্বইয়ের ধারাভি বস্তির এক র্যাপপাগল ছেলের স্বপ্নপূরণের গল্প নিয়ে ২০১৮ সালের ভ্যালেন্টাইন্স ডে-তে প্রেক্ষাগৃহে এসেছিল ‘গল্লি বয়’। পরিচালক জ়োয়া আখতার। অভিনয় করেছিলেন রণবীর সিংহ এবং আলিয়া ভট্ট। মুম্বই স্ট্রিট র্যাপার নায়েজ়ি এবং ডিভাইনের জীবন থেকে অনুপ্রাণিত ওই ছবি প্রবল জনপ্রিয় হয়েছিল। মনোনীত হয়েছিল অস্কারেও।
যাঁদের জীবন থেকে ‘গল্লি বয়’-এর গল্প নেওয়া, তাঁদের মধ্যে নায়েজ়ি এ বার ‘বিগ বস্’-এর ঘরে। ওই ছবির পর ডিভাইন নেটফ্লিক্সে সেক্রেড গেমস (কাম ২৫)- এর জন্য একটি হিট ট্র্যাক রচনা করে তাঁর উপস্থিতি জানান দেন। কিন্তু নায়েজি ওরফে নাভেদ শেখ খুব একটা নজরে আসেননি। এ বার তাঁকে দেখা গেল জনপ্রিয় রিয়্যালিটি শোয়ে।
নায়েজ়ির জীবন গল্পের মতোই। সিনেমার কাহিনির মতোই পরতে পরতে রোমাঞ্চ রয়েছে, রয়েছে জীবনে চলার পথে ঠোক্কর। রণবীর এবং আলিয়ার অসাধারণ অভিনয় অনেক আগেই মন ছুঁয়েছিল দর্শকদের।
শব্দ দিয়ে, কথা দিয়ে ধাক্কা মারা যায় শত্রুপক্ষকে, চোখে আঙুল দিয়ে সে সময় দেখিয়েছিল ওই ছবি। সেখান থেকে নায়েজ়ির জীবন নিয়েও অনেকের আগ্রহ ছিল।
আসল নাম নাভেদ শেখ হলেও র্যাপ সঙ্গীতের শ্রোতা এবং দর্শকেরা তাঁকে চেনেন নায়েজ়ি নামেই। ডিভাইনের সঙ্গে জুটি বেঁধে মেনস্ট্রিম র্যাপ সঙ্গীতের মোড় ঘুরিয়ে দেওয়া এই যুবক উঠে এসেছেন একটি নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে।
মুম্বইয়ের কুরলায় বড় হওয়া নাভেদ থেকে নায়েজ়ি হয়ে উঠতে অনেক বাধা-বিপত্তি পার করেছেন। বাবা কাজের সূত্রে থাকতেন দুবাইয়ে। মা এবং মাসির কাছেই মানুষ। থাকতেন একটি বস্তিতে।
ছোট থেকেই দুরন্ত স্বভাবের। স্কুলেও সেই স্বভাবের হেরফের হত না নায়েজ়ির। সহপাঠীদের নিয়ে নিত্যদিন শিক্ষকদের নানা ভাবে বিরক্ত করে মজা পেতেন। লাজুক মুখে সে কথা হাসতে হাসতে জানিয়েছেন নিজেই।
এক বার স্কুলের ইউনিফর্ম পরা নায়েজিকে দেখে ধরতে এসেছিল পুলিশও। কী করেছিলেন তিনি? স্কুলের পোশাক পরে স্কুলের পাশে দাঁড়িয়েই সুখটান দিচ্ছিলেন নায়েজ়ি। বয়স? ১৩ বছর। এক খুদেকে ওই ভাবে দেখে ছুটে গিয়েছিলেন রাগী পুলিশ অফিসার।
পুলিশ আসছে দেখেও অবশ্য পালানোর কথা ভাবেনি সেই স্কুলছাত্র। ফলাফল— বিরাশি সিক্কার এক চড় এসে পড়ে গালে। থতমত খেয়ে গেছিল সে দিনের কিশোর। পুলিশ অফিসার এর পর তাকে টানতে টানতে থানায় নিয়ে যেতে চেয়েছিলেন।
ওই ভাবেই খানিক ‘সিরিয়াস’ হয়ে গিয়েছিল সেই কিশোর। চড় পর্যন্ত ঠিকই আছে। তা বলে থানায় যেতে হবে! না-না, কিছুতেই থানায় যাবে না সে। নায়েজ়ির হাত শক্ত করে ধরে রেলস্টেশনে দাঁড়িয়ে ছিলেন পুলিশ অফিসার।
কিশোর নায়েজ়ির চোখ পড়ল সামনের ট্রেনের দিকে। আচমকা ওই পুলিশ অফিসারের হাতে ধাক্কা দিয়ে কিছু বুঝে ওঠার আগেই তাঁর দুই পায়ের ভিতর দিয়ে সন্তর্পণে গলে গিয়ে ঝাঁপ দিয়ে চলন্ত ট্রেনে উঠে পড়েছিলেন নায়েজ়ি। সে কথা ভাবলে আজও হেসে ফেলেন তিনি। বলেন, ‘‘কী সব করেছি!’’
পারিবারিক অর্থাভাব, ও দিকে এলাকার ‘খারপ ছেলেদের’ সঙ্গে মেলামেশা— হঠাৎই এক দিন নাভেদের মনে হল, ‘‘না এ ভাবে জীবন চলবে না। ভেসে যাওয়া যাবে না। অন্য কিছু করতে হবে।’’ ওই বোধোদয় যে দিন হল, সে দিনই তাঁর জীবনের প্রথম মোড় ঘুরে গিয়েছিল বলে একটি সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন র্যাপ গায়ক।
ছোট থেকেই দুরন্ত। আর প্রচুর পরিশ্রম করতে পারেন। নিজের শক্তির সবটুকু ঢেলে অন্য নেশায় বুঁদ হতে শুরু করেন সে দিনের ছোট্ট নাভেদ। শুরু করেছিলেন কথার পিঠে কথা বসিয়ে গান করা। সেখান থেকে জন্ম আজকের নায়েজ়ির।
‘আফাত’ নামে একটি মিউজ়িক ভিডিয়ো দিয়ে প্রথম বড় পরিচিতি পান নায়েজ়ি। সালটা ২০১৪। আইপ্যাডে সেই ‘সিঙ্গল ডেবিউ’ প্রচুর মানুষ শোনেন, ভালবাসেন, মুগ্ধ হন।
ওই গানের পর নায়েজ়ির আলাপ ডিভাইনের সঙ্গে। শুরু হয় জুটি বেঁধে র্যাপ গান বাঁধা। ২০১৫ সালে ওই জুটির অন্যতম জনপ্রিয় গান ‘মেরে গল্লি মে’। আর ফিরে তাকাতে হয়নি। ভারতীয় র্যাপ সঙ্গীতের জগতে এখন পরিচিত দু’জনেই।
এখন অবশ্য নায়েজ়ি আর ডিভাইন আলাদা আলাদা ভাবে কাজ করেন। সেই নায়েজ়ি এখন জনপ্রিয় শোয়ে। নতুন নতুন গল্প শুনতে আগ্রহী তাঁর অনুরাগীরা। পুলিশের চোখে ধুলো দিয়ে পালানো সেদিনকার নায়েজ়ি এ বার ‘বিগ বস্’-এর ঘরে কী কাণ্ড ঘটান, নজর সে দিকেও।