চিনের কোনও ‘গবেষক’ জাহাজকে নিজেদের বন্দরে ভিড়তে দেবে না। চৌহদ্দিতে আর ঘেঁষতে দেবে না। ভারতকে জানিয়েছে শ্রীলঙ্কা। এক বছরের জন্য এই নিষেধাজ্ঞা থাকছে। কিন্তু কেন?
শ্রীলঙ্কার বন্দর ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞার পাশাপাশি কলম্বো জানিয়েছে, তাদের এক্সক্লুসিভ ইকোনমিক জ়োন (ইইজ়েড)-ও ব্যবহার করতে পারবে না চিনের ‘গবেষক’ জাহাজ।
২০২৩ সালের ২১ জুলাই শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট রনিল বিক্রমাসিঙ্ঘের সঙ্গে বৈঠকে বসেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সেখানেই প্রধানমন্ত্রী অনুরোধ করেছিলেন, ভারতের কৌশলগত এবং নিরাপত্তাজনিত উদ্বেগের কথা যেন বিবেচনা করে প্রতিবেশী দেশ।
সম্প্রতি শ্রীলঙ্কা তাদের এই সিদ্ধান্তের কথা জানাল। সূত্রের খবর, গত সপ্তাহে কূটনৈতিক মাধ্যমে ভারতকে এ কথা জানিয়েছে শ্রীলঙ্কা।
২০২৪ সালের ৫ জানুয়ারি থেকে মে মাস পর্যন্ত ভারত মহাসাগরের দক্ষিণে গবেষণার কাজ চালানোর কথা ছিল চিনের ‘জিয়াং ইয়াং হং ৩’ জাহাজটির। গভীর সমুদ্রে নেমে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালানোর কথা ছিল সেটির।
এখন যা পরিস্থিতি, তাতে সেই কাজ আর করতে পারবে না চিনের জাহাজ। শ্রীলঙ্কার সরকার সে অনুমতি দেবে না চিনকে। চিন এই নিয়ে এখনও কিছু জানায়নি। তারা বরাবর দাবি করেছে, তাদের জাহাজ ‘গবেষণা’ চালিয়ে যাবে।
মলদ্বীপে এখন ক্ষমতায় মহম্মদ মুইজু। তাঁর সঙ্গে আবার চিনের সুসম্পর্ক সুবিদিত। নতুন মুইজু সরকারের কাছেও চিন মালে উপকূলের নিকটবর্তী গভীর সমুদ্রে গবেষণা চালানোর অনুমতি চেয়েছে।
এর আগে ভারত মহাসাগরে চিনের গবেষণাকারী জাহাজ এবং ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ট্র্যাকারকে যথেষ্ট সাহায্য করেছিল শ্রীলঙ্কা। সেই নিয়ে তীব্র আপত্তি জানিয়েছে ভারত এবং আমেরিকা।
এর আগে চিনের গবেষণাকারী জাহাজ ‘শি ইয়ান ৬’-এর টহল নিয়েও আপত্তি জানিয়েছিল ভারত। শ্রীলঙ্কার নৌসেনার জাহাজের সঙ্গে তা ভারত মহাসাগরে ভেসে বেড়াচ্ছিল। গত সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে এই নিয়ে আপত্তি জানায় ভারত।
সেই আপত্তিতেও কান দেয়নি শ্রীলঙ্কা। চিনের সেই জাহাজকে নিজেদের বন্দরে নোঙর করতেও দিয়েছিল। তার আগেই ১৭-১৮ অক্টোবর বেজিং সফরে গিয়েছিলেন বিক্রমাসিঙ্ঘে। আর ২৫ অক্টোবর চিনের জাহাজ ‘শি ইয়ান ৬’ পৌঁছয় কলম্বোয়।
২ ডিসেম্বর ‘শি ইয়ান ৬’ মলাক্কা পেরিয়ে যায়। ইন্দোনেশিয়া এবং মালয়েশিয়ার মধ্যে রয়েছে মলাক্কা। মনে করা হচ্ছে সেই জাহাজ মার্চ মাস নাগাদ ফিরে আসতে পারে শ্রীলঙ্কা উপকূলে।
অতীতেও ভারত মহাসাগরে এসে গভীর সমুদ্রে গবেষণা চালিয়েছে চিনের জাহাজ। আন্দামান এবং নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের দক্ষিণেও ঘোরাফেরা করেছে। গত বছর অগস্টে ডেং জিয়াজিয়াং এ ভাবে গবেষণা চালিয়েছে ভারত মহাসাগরে। সেপ্টেম্বরে তা ফিলিপিনস সাগরে টহল দেয়।
২০২৩ সালে ভারত মহাসাগর অঞ্চলে চিনের ২৫টি ডুবোজাহাজ, ব্যালিস্টিক ট্র্যাকার, গবেষণাকারী জাহাজ ঘোরাফেরা করেছে। ২০১৯ সাল থেকে এই সংখাটা ছিল ৪৮। মূলত ভারতের পূর্ব এবং পশ্চিম উপকূলের কাছেই তাদের সক্রিয়তা দেখা গিয়েছে বলে রিপোর্ট।
২০২২ সালে চিনের নজরদার জাহাজ ‘ইউয়ান ওয়াং ৫’ শ্রীলঙ্কার বন্দরে ভিড়েছিল। সেই সময়ও এই নিয়ে ভারতের তরফে কড়া বার্তা দেওয়া হয়েছিল। যদিও তার পরও ২০২৩ সালের অগস্ট মাসে শ্রীলঙ্কায় নোঙর ফেলেছিল পিএলএ-র জাহাজ ‘হাই ইয়াং ২৪ হাও’।
ভারতের আশঙ্কা ছিল যে, পরমাণু এবং ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচির উপর নজরদারি করতেই বার বার শ্রীলঙ্কার নৌসেনার পোতাশ্রয়ে যাচ্ছে চিনা যুদ্ধজাহাজগুলি। এ বার শ্রীলঙ্কা এই নিয়ে পদক্ষেপ করল। অনেকে একে ভারতের ‘কূটনৈতিক জয়’ বলেই মনে করছেন। একটা অংশ মনে করছে, শ্রীলঙ্কার সঙ্গে আমেরিকা এবং ভারতের কথা বলার পরেই এটা সম্ভব হয়েছে।