মহম্মদ মুইজ্জুর নেতৃত্বাধীন মলদ্বীপ সরকার সে দেশ থেকে সেনা প্রত্যাহারের জন্য ইতিমধ্যেই সময়সীমা বেধে দিয়েছিল ভারতকে। মুইজ্জু সরকারের ‘আর্জি’ ছিল, ১৫ মার্চের মধ্যে মলদ্বীপ থেকে সেনা সরাতে হবে ভারতকে।
মলদ্বীপ সরকারের সেই আর্জি ‘মেনে’ মলদ্বীপের বিমানবন্দরগুলি থেকে ভারতীয় সেনা সরানোর কথা জানিয়েছে কেন্দ্রও।
তবে পরিবর্তে জানিয়েছে, ভারতীয় সেনা সরালেও মলদ্বীপ থেকে ভারতীয়দের সরাবে না সরকার। সেনার বদলে দ্বীপরাষ্ট্রে মোতায়েন করা হবে ‘যোগ্য ভারতীয় প্রযুক্তিবিদ’।
সেই সিদ্ধান্তকে ভারতের কূটনৈতিক বুদ্ধিমত্তার পরিচয় বলেই মনে করছেন ওয়াকিবহাল মহলের একাংশ।
সেনা সরিয়ে ঠিক কাদের পাঠানো হবে মলদ্বীপে, সে বিষয়ে বিস্তারিত ভাবে কিছু জানায়নি ভারতীয় বিদেশ মন্ত্রক। বিশেষজ্ঞদের মতে, সেনা সরিয়ে নিলেও সেখানে সেনার প্রযুক্তিবিদদেরই পাঠাবে ভারত। অর্থাৎ, সেনার বদলে পাঠানো হবে ‘সেনা’ই।
ক্ষমতায় আসার পরেই মলদ্বীপ থেকে সেনা সরানোর জন্য সরকারি ভাবে আর্জি জানিয়েছিল মুইজ্জু সরকার। দিন কয়েক আগে বিবৃতি দিয়ে দাবি করেছিল, তাদের নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই ভারত পদক্ষেপ করতে রাজি হয়েছে।
মুইজ্জুর সচিবালয়ের শীর্ষ আধিকারিক আবদুল্লা নাজ়িম ইব্রাহিম সম্প্রতি সে দেশের একটি সংবাদপত্রকে বলেছিলেন, “ভারতীয় সেনারা মলদ্বীপে থাকতে পারবেন না। কারণ, এটাই প্রেসিডেন্ট মুইজ্জু এবং তাঁর সরকারের সিদ্ধান্ত।” তবে তাতে বিশেষ লাভ কিছু হবে না বলেই মত কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞদের।
গত বছরের সেপ্টেম্বরে ভোটে জিতে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম সোলিকে হারিয়ে নভেম্বরে মলদ্বীপের প্রেসিডেন্টের আসনে বসেছেন মুইজ্জু।
ক্ষমতায় এলে ভারতীয় সেনাকে দেশ থেকে সরাবেন, জনগণকে এই প্রতিশ্রুতি দিয়েই নির্বাচনের বৈতরণী পার করেছিলেন মুইজ্জু।
২০১০ সাল থেকে একটি দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের অংশ হিসেবে প্রায় ৮০ জন ভারতীয় সেনা মলদ্বীপে রয়েছে। মলদ্বীপের সেনাকে যুদ্ধ সংক্রান্ত প্রশিক্ষণও দেয় তারা।
মলদ্বীপের অন্তর্গত প্রত্যন্ত দ্বীপের বাসিন্দাদের জন্য মানবিক সহায়তা এবং চিকিৎসা উপাদান পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্বও রয়েছে ভারতীয় সেনার কাঁধে।
কিন্তু মুইজ্জু ক্ষমতায় আসার পরেই সেই সেনাকে মলদ্বীপ থেকে প্রত্যাহার করে নেওয়ার কথা জানায় প্রশাসন।
এর পর এই নিয়ে বেশ কয়েকটি বৈঠকেও বসেছে দু’পক্ষ। এর পর স্থির হয় ১৫ মার্চ নয়, ১০ মার্চের মধ্যে মলদ্বীপে তিনটি বিমানবন্দরের মধ্যে একটি থেকে সেনা সরাবে ভারত। বাকি দু’টি জায়গা থেকে ১০ মের মধ্যে ভারত সেনা সরিয়ে নেবে। পরিবর্তে আসবেন ‘ভারতীয় প্রযুক্তিবিদ’রা।
তবে কেন ১৫ মার্চ তারিখটিকে ভারতীয় সেনা প্রত্যাহারের জন্য বেছে নিয়েছিলেন মুইজ্জু?
১৭ মার্চ মলদ্বীপের পার্লামেন্টের নির্বাচন। ছোট সেই দ্বীপরাষ্ট্রের নির্বাচন প্রক্রিয়া ভারতের থেকে আলাদা। সেই দেশে প্রেসিডেন্ট বেছে নেওয়ার ভোট এবং পার্লামেন্টের ভোট আলাদা হয়।
প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হয়েছে গত বছরের সেপ্টেম্বরে। যাতে জিতে মুইজ্জু ক্ষমতায় এসেছেন। তবে পার্লামেন্টে জোর কম তাঁর দল ‘পিপলস্ ন্যাশনাল কংগ্রেস’-এর। সেখানে সংখ্যাগরিষ্ঠ সোলির দল ‘মলদ্বীভিয়ান ডেমোক্রেটিক পার্টি’র।
মনে করা হচ্ছে, মলদ্বীপের পার্লামেন্টে নিজেদের জমি শক্ত করতেই ভারতীয় সেনা প্রত্যাহারের জন্য ১৫ মার্চ দিনটিকে বেছে নিয়েছিলেন মুইজ্জু।
১৭ মার্চ মলদ্বীপের পার্লামেন্টের নির্বাচন। কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞেরা মনে করছেন যে, ‘ভারত-বৈরিতা’কে ‘অস্ত্র’ বানিয়ে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের বৈতরণী মুইজ্জু পার করেছিলেন, সেই একই ‘অস্ত্র’ পার্লামেন্ট নির্বাচনের জন্যও ব্যবহার করতে চাইছে মুইজ্জুর দল। আর সেই কারণেই ভারতীয় সেনা প্রত্যাহারের জন্য ১৫ মার্চ দিনটিকে বেছে নিয়েছিলেন মুইজ্জু।
যদিও বিশেষজ্ঞদের মতে, মুইজ্জুর সেই প্রচেষ্টা সফল না-ও হতে পারে। উল্লেখ্য যে, আন্তর্জাতিক রাজনীতির মহলে মুইজ্জু ‘চিন-ঘনিষ্ঠ’ হিসাবে পরিচিত। সম্প্রতি চিন সফরেও গিয়েছিলেন তিনি।
মলদ্বীপের রাজনীতির পর্যবেক্ষকদের মতে, ভারত ও চিনের প্রতি মুইজ্জুর এত দিনের দৃষ্টিভঙ্গিই ঠিক করবে পার্লামেন্ট নির্বাচনে তাঁর দল এগিয়ে থাকবে না পিছিয়ে।