সাড়ে তিন বছর বয়সেই ক্যামেরার সঙ্গে পরিচয়। সত্তরের দশক থেকে চুটিয়ে অভিনয় শুরু করেন তামিল অভিনেতা কমল হাসন। পাঁচ দশক ধরে ফিল্মজগতে রাজত্ব করছেন কমল। তামিল ছবির পাশাপাশি তেলুগু, মালয়ালম, কন্নড়, হিন্দি এবং বাংলা ছবিতেও কাজ করেছেন তিনি।
অভিনয়ের মাধ্যমে কী ভাবে দর্শকের মনে জায়গা করে নিতে হয়, তা ভালই জানেন কমল। তবে, তাঁর ব্যক্তিগত জীবনও সিনেমার চেয়ে কম রঙিন নয়। সহ-অভিনেত্রীদের সঙ্গে প্রেম, বার বার পরকীয়া এবং বিচ্ছেদ— কমলের জীবনে নারীচরিত্রের আনাগোনা ছিল বরাবর।
কেরিয়ারের বিভিন্ন সময়ে ছ’জন অভিনেত্রীর সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়েছিলেন কমল। কোনও সম্পর্ক ছাঁদনাতল পর্যন্ত গড়িয়েছে আবার কোনও সম্পর্ক সমাজের চোখরাঙানির জন্য নামও পায়নি।
অভিনয় জীবনের শুরুতেই সহ-অভিনেত্রী শ্রীবিদ্যার সঙ্গে নাম জড়িয়ে পড়ে কমলের। কলিপাড়ায় দুই তারকার সম্পর্ক নিয়ে কানাঘুষো চলত অনবরত। কিন্তু ১৯৭৬ সালে সহ-পরিচালক জর্জ থমাসের সঙ্গে সাত পাকে বাঁধা পড়লে সব আলোচনা এক মুহূর্তে থেমে যায়।
কলিপাড়ার একাংশের দাবি, শ্রীবিদ্যা বিয়ে করে ফেলেছিলেন বলেই কমলের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক বেশি দূর এগোতে পারেনি। কিন্তু সম্প্রতি তাঁদের সম্পর্ক নিয়ে প্রকাশ্যে আসে এক সম্পূর্ণ ভিন্ন তথ্য।
দক্ষিণী ফিল্মজগতের বর্ষীয়ান অভিনেত্রী কুট্টি পদ্মিনী তাঁর ইউটিউব চ্যানেলে কমল এবং শ্রীবিদ্যার সম্পর্ক নিয়ে মুখ খুলেছেন। কুট্টি জানান, কমলকে মন থেকে ভালবাসতেন শ্রীবিদ্যা। কমল এবং শ্রীবিদ্যার জুটি বড় পর্দায় সকলে পছন্দ করেছিলেন। একে অপরকে ধীরে ধীরে ভালবাসতেও শুরু করেছিলেন কমল এবং শ্রীবিদ্যা। এমনটাই জানান কুট্টি।
কুট্টি তাঁর অভিজ্ঞতার কথা ভাগ করে বলেন, ‘‘একটি তেলুগু ছবির জন্য কমলের সঙ্গে কাজ করছিলাম। তখন জানতে পারি, বাণী গণপতির সঙ্গে সম্পর্কে রয়েছেন কমল। এমনকি, বিমানবন্দরে পৌঁছনোর পর বাণীর জন্য একটি উপহারও কিনতে দেখি কমলকে।’’
কুট্টির দাবি, বাণীর সঙ্গে সম্পর্কে থাকাকালীন নাকি বলি অভিনেত্রী রেখার সঙ্গেও নাম জড়িয়ে পড়ে কমলের। শ্রীবিদ্যাকে গিয়ে তাই সে সব কথা জানান কুট্টি। কুট্টি বলেন, ‘‘শ্রীবিদ্যা প্রথমে বিশ্বাস করতে চাননি। কিন্তু কমল এবং বাণীর বিয়ের খবর পেয়ে ভেঙে পড়েছিলেন শ্রীবিদ্যা।’’
১৯৭৮ সালে ২৪ বছর বয়সে সহ-অভিনেত্রী বাণীকে বিয়ে করেন কমল। অভিনেতার বিয়ের পর শ্রীবিদ্যাকে মানসিক অবসাদ ঘিরে ধরে বলে দাবি করেন কুট্টি। বাস্তব ঘটনাকে বহু দিন মানতেই পারেননি শ্রীবিদ্যা।
কমলের বিয়ে হয়ে যাওয়ার পর একই বছরে জর্জকে বিয়ে করেন শ্রীবিদ্যা। কিন্তু সেই সম্পর্ক বেশি দিন টেকেনি। বিয়ের চার বছর পর ১৯৮০ সালে শ্রীবিদ্যা এবং জর্জের বিচ্ছেদ হয়। ফিল্মপাড়া থেকে সরে যান শ্রীবিদ্যা।
২০০৬ সালে ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন শ্রীবিদ্যা। অভিনেত্রী যখন মৃত্যুশয্যায় তাঁর শেষ দিন গুনছিলেন, সেই সময় তাঁর সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন কমল। কলিপাড়ার একাংশের দাবি, কমল এবং শ্রীবিদ্যার প্রেমকাহিনির উপর ভিত্তি করেই নাকি ২০০৮ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত মালয়ালম ছবি ‘থিরক্কথা’র চিত্রনাট্য নির্মাণ করা হয়েছে।
কমলের স্ত্রী বাণী অভিনয়ের পাশাপাশি শাস্ত্রীয় নৃত্যে পারদর্শী ছিলেন। বিয়ের পর কয়েকটি ছবিতে কমলের পোশাকশিল্পী হিসাবে কাজ করেছেন বাণী। কিন্তু কমলের সঙ্গে তাঁর বিবাহিত জীবন সুখের ছিল না। বিয়ের কয়েক বছরের মধ্যেই তাঁদের সংসারে তৃতীয় ব্যক্তির প্রবেশ ঘটে। তিনি ছিলেন কমলের সহ-অভিনেত্রী সারিকা ঠাকুর।
সারিকার সঙ্গে বিবাহ-বহির্ভূত সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন কমল। শুরুর দিকে তাঁদের সম্পর্কের কথা গোপন রাখার চেষ্টা করলেও পরে তা জানাজানি হয়ে যায়। সারিকা এক পুরনো সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘‘আমি সকলের ঘৃণার পাত্রীতে পরিণত হয়ে গিয়েছিলাম। ঘর ভাঙছি বলে আমার গায়ে তৃতীয় ব্যক্তির তকমা লেগে গিয়েছিল।’’
১৯৮৬ সালে এক কন্যাসন্তানেরও জন্ম দেন সারিকা। কমল এবং সারিকা দু’জনেই কটাক্ষের শিকার হন। শেষ পর্যন্ত দশ বছর সংসার করার পর ১৯৮৮ সালে বাণীকে বিচ্ছেদ দেন কমল। তার পর সারিকার সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধেন অভিনেতা।
সংবাদমাধ্যম সূত্রে দাবি, শ্রুতির জন্মের পর সমাজের চাপে পড়েই নাকি সারিকাকে বিয়ে করতে বাধ্য হন কমল। ২০০০ সালে সিমি গারেওয়ালকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে পরকীয়া এবং বিচ্ছেদ নিয়ে মুখ খোলেন কমল।
সাক্ষাৎকারে কমল জানান, বাণীকে বিয়ে করে সুখী ছিলেন না অভিনেতা। শুরুর দিকে তিনি নাকি সেই বিয়েতে আপত্তিও জানিয়েছিলেন। কমল বলেন, ‘‘বিয়ের উপর থেকে আমার ভরসাই উঠে গিয়েছিল। সম্পর্কের ভিতর তিক্ততা চলে এসেছিল। আমি সেই মুহূর্তে শুধুমাত্র ভাল থাকতে চেয়েছিলাম।’’
সারিকার সঙ্গে সম্পর্ক নিয়েও মুখ খোলেন কমল। বিবাহ-বহির্ভূত সম্পর্কের কথা স্বীকার করে তিনি বলেন, ‘‘তুমি যা চাও তা যখন তোমার আরও কাছে আসতে শুরু করে, তখন সেই জিনিসের প্রতি তোমার চাহিদা আরও বেড়ে যায়। আমিও তাই সারিকার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হয়ে পড়েছিলাম।’’
কমলকে বিয়ে করার পর অভিনয় থেকে দূরে সরে যান সারিকা। অভিনেত্রী যখন তাঁর কেরিয়ারের শিখরে, সেই মুহূর্তে সব ছেড়ে কমলের সঙ্গে চেন্নাই চলে যান তিনি। ১৯৯১ সালে দ্বিতীয় কন্যাসন্তানের জন্ম দেন সারিকা।
২০০০ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘হে রাম’ ছবিতে কমলের পোশাকশিল্পী হিসাবে কাজ করেন সারিকা। তাঁর কাজের জন্য প্রশংসাও কুড়োন সারিকা। কিন্তু সারিকার সঙ্গে কমলের সম্পর্কেও ছেদ পড়ে।
২০০৪ সালে সারিকার সঙ্গে বিবাহবিচ্ছেদ হয় কমলের। বিচ্ছেদের পর আবার সিনেমা এবং ধারাবাহিকে কাজ করা শুরু করেন সারিকা। অন্য দিকে, কমলও তাঁর কেরিয়ারে এগিয়ে যান।
ফিল্মপাড়ায় কানাঘুষো শোনা যায় যে, সারিকাকে বিয়ে করার পর আবার এক সহ-অভিনেত্রীর সঙ্গে বিবাহ-বহির্ভূত সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন কমল। ২০০০ সালের গোড়ার দিকে তামিল অভিনেত্রী সিমরন বগ্গার পরিচয় হয় অভিনেতার। সেই আলাপ প্রেমে গড়াতে বেশি সময় নেয়নি।
কমলের সঙ্গে সিমরনের বয়সের পার্থক্য ছিল ২২ বছরের। বয়সে এত তফাত থাকা সত্ত্বেও যে সিমরনের সঙ্গে কমল পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়েন, তা নিয়ে ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে সমালোচনার শিকার হন দুই তারকা।
কিন্তু কমল এবং সিমরনের সম্পর্কের চাকা বেশি দূর গড়ায়নি। ‘পম্মল কে সমবন্দম’ ছবির শুটিং চলাকালীন সম্পর্কে আসেন তাঁরা। কিন্তু ছবি মুক্তির পরেই সিমরনের সঙ্গে পরকীয়া সম্পর্কে ইতি টানেন কমল।
২০০৪ সালে সারিকার সঙ্গে বিবাহবিচ্ছেদের পরে আরও এক সহ-অভিনেত্রীর সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন কমল। দক্ষিণী অভিনেত্রী গৌতমীর সঙ্গে একত্রবাস করতে শুরু করেন কমল।
১৯৯৯ সালে বিবাহবিচ্ছেদের পর কন্যাসন্তানকে নিয়ে একাই থাকতেন গৌতমী। কিন্তু কমলের সঙ্গে সম্পর্কে আসার পর অভিনেতা এবং কন্যাসন্তানকে নিয়েই একই বাড়িতে থাকা শুরু করেন গৌতমী।
২০১৬ সালে গৌতমীর সঙ্গে বিচ্ছেদ হয়ে যায় কমলের। অভিনেত্রী নিজের ব্লগে লিখে জানান, ‘‘আমার এবং কমলের পথ এখন আলাদা হয়ে গিয়েছে। খুব দুঃখের সঙ্গেই জানাচ্ছি যে, আমরা আর একসঙ্গে নেই। ১৩ বছর একসঙ্গে থাকার পর আলাদা হওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া আমার জীবনে খুব কঠিন একটা সময় ছিল।’’
ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির অধিকাংশের দাবি, ৬৮ বছর বয়সি কমল এখন ‘সিঙ্গল’ রয়েছেন। কিন্তু কলিপাড়ার একাংশ জানিয়েছেন, ২০১৩ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত তামিল ছবি ‘বিশ্বরূপম’-এর নায়িকা পূজা কুমারের সঙ্গে সম্পর্কে জড়ান কমল।
এমনকি, পূজার জন্মদিন উপলক্ষে যে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল, সেখানে পরিবার-সহ উপস্থিত ছিলেন কমল। যদিও কমল এবং পূজার কেউই তাঁদের সম্পর্কের কথা প্রকাশ্যে জানাননি। তবে, ছ’জন সহ-অভিনেত্রীর সঙ্গে প্রেম-পরকীয়া-বিচ্ছেদের পরেও আজও কমল হাসান রয়েছেন দর্শকের মনের মণিকোঠায়।