বিজেপি নেত্রী সোনালি ফোগটের মৃত্যু নিয়ে ইতিমধ্যেই রহস্য আরও ঘনীভূত হচ্ছে। সোনালিকে ধর্ষণ ও খুনের দায়ে সোনালিরই আপ্ত-সহায়ক সুধীর সাঙ্গোয়ান এবং বন্ধু সুখবিন্দর ওয়াসিকে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় গ্রেফতার করা হয়েছে।
ময়নাতদন্তের সময় বিজেপি নেত্রীর শরীরে একাধিক আঘাতের চিহ্ন দেখতে পাওয়ার পরই বিষয়টি খতিয়ে দেখতে শুরু করে পুলিশ। যদিও তাঁর পরিবার আগেই দাবি করেছিল যে, সোনালিরই আপ্ত-সহায়ক এবং ওই আপ্ত-সহায়কের এক বন্ধু সেনালিকে ধর্ষণ করে খুন করেছেন।
সহকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে শ্যুটিঙের জন্য গোয়া সফরে গিয়েছিলেন বিজেপি নেত্রী তথা প্রাক্তন বিগ বস তারকা সোনালি। প্রথমে খবর আসে সোমবার মধ্যরাতে হঠাৎ হৃদ্যন্ত্র বিকল হয়ে পড়ায় মৃত্যু হয়েছে নেত্রীর। পরে শোনা যায়, খাবারে বিষক্রিয়ার ফলে তাঁর মৃত্যু হয়েছে। উত্তর গোয়ার অঞ্জুনা এলাকায় একটি হাসপাতালে তাঁকে মৃত অবস্থায় নিয়ে যাওয়া হয়। তবে পুলিশের তরফ থেকে সরকারি ভাবে কোনও বিবৃতি দিয়ে নেত্রীর মৃত্যুর কারণ জানানো হয়নি।
সাধারণের নজরে স্বাভাবিক মনে হলেও সোনালির মৃত্যু নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেন তাঁর ভাই রিঙ্কু ঢাকা। তাঁর দাবি ছিল, দিদি সোনালিকে খুন করা হয়েছে। যে দুই সঙ্গীকে নিয়ে সোনালি গোয়া গিয়েছিলেন, তাঁরাই তাঁকে খুন করেছেন বলেও দাবি করেন রিঙ্কু। তিনি এ-ও অভিযোগ করেন, খুন করার আগে সোনালিকে ধর্ষণ করা হয়।
রিঙ্কুর দাবি, সোনালি জানিয়েছিলেন শ্যুটিংয়ের জন্য বাইরে যাচ্ছেন। শ্যুটিং হওয়ার কথা ২৪ অগস্ট। ফিরে আসবেন ২৭ অগস্ট। কিন্তু ২২ অগস্ট হঠাৎই ফোন করে বাড়িতে জানান, খাবার খেয়ে অস্বস্তি বোধ করছেন। একই সঙ্গে শ্যুটিং ২৪ অগস্ট হলেও কেন হোটেলের রুম ২১ এবং ২২ অগস্ট বুক করা হয়েছিল, তা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন রিঙ্কু। এর পরই আরও নড়েচড়ে বসে পুলিশ। খুনের মামলা রুজু করে গোয়া পুলিশ।
ভাইয়ের পাশাপাশি সোনালির হৃদ্রোগে মৃত্যু হওয়ার ঘটনা কিছুতেই মেনে নিতে পারেননি তাঁর বোন। সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন,‘‘ওর খাবারে বিষ মেশানো হয়েছিল। এটা খুন মনে হচ্ছে।’’
সোনালির বোন আরও দাবি করেন, রাতেও সোনালি ফোনে বলেছিলেন যে, ‘‘আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র চালানো হচ্ছে।’’ বোনের অনুমান, সোনালি নিজেই সন্দেহ করেন, তাঁর খাবারে কিছু মেশানো হয়েছে।
ধারালো কোনও অস্ত্র দিয়ে সোনালিকে খুন করা হয় বলেও অভিযোগ আনা হয়েছিল।
তবে ময়নাতদন্তের পর পরিষ্কার হয়, ধারালো অস্ত্র নয়, সোনালিকে আঘাত করা হয়েছিল ভোঁতা অস্ত্র দিয়ে। ময়নাতদন্তের সময় সোনালির শরীরে অসংখ্য আঘাতের চিহ্ন দেখতে পান তদন্তকারী দল।
এর পরই অভিযুক্ত সুধীর এবং সুখবিন্দরকে গ্রেফতার করে পুলিশ। সোনালির মৃত্যু নিয়ে বিস্তারিত তদন্ত শুরু হয়েছে।
ইতিমধ্যেই সোনালির মৃতদেহ দিল্লিতে এসে পৌঁছেছে শুক্রবার। সেখান থেকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে হিসারের পথে।
শুধু সোনালিই নন, ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে রহস্যমৃত্যু হয় সোনালির স্বামী সঞ্জয় ফোগটের। মাত্র ৪২ বছর বয়সে খামারবাড়িতে রহস্যজনক ভাবে মৃত্যু হয় সঞ্জয়ের। খামারবাড়িতে ভোরবেলা সঞ্জয়ের মৃতদেহ পড়ে থাকতে দেখা গিয়েছিল। সোনালি এবং সঞ্জয়ের যশোধরা নামে এক মেয়েও রয়েছে।
টিকটক ভিডিয়োর মাধ্যমে সংবাদমাধ্যমের শিরোনামে উঠে এসেছিলেন সোনালি। প্রথমে কংগ্রেসে থাকলেও পরে বিজেপিতে যোগ দেন সোনালি। ২০১৯ সালে হরিয়ানা নির্বাচনে বিজেপির টিকিটে আদমপুর থেকে বিধানসভা নির্বাচনে লড়েছিলেন তিনি।
যদিও রাজনীতিকের চেয়ে অভিনেত্রী হিসাবেই তিনি বেশি পরিচিত। ২০১৬ সালে টেলিভিশন সিরিয়াল ‘এক মা জো লাখোঁ কে লিয়ে বনি আম্মা’-র মাধ্যমে তাঁর অভিনয়ে আত্মপ্রকাশ।
এর পর হরিয়ানভি চলচ্চিত্র ‘ছোড়িয়ান ছোরোঁ ইস কাম নাহি হোতি’-তে দেখা যায় তাঁকে। বেশ কয়েকটি পঞ্জাবি এবং হরিয়ানভি মিউজিক ভিডিয়োতেও উপস্থিতি রেখেছেন। সোনালিকে শেষ দেখা গিয়েছিল ওয়েব সিরিজ, ‘দ্য স্টোরি অব বদমাশগড়’-এ।
সোনালিকে ছোটপর্দায় শেষ বার দেখা গিয়েছিল বিগ বস ১৪-এ। তিনি এক জন ওয়াইল্ডকার্ড প্রতিযোগী হিসাবে প্রবেশ করে ব্যাপক জনপ্রিয় হন। সহ-প্রতিযোগীকে ‘দেখে নেওয়ার হুমকি’ দিয়ে বিতর্কেও জড়ান।