রাজ্যপাল কেমন হবেন? এ প্রশ্নের বাঁধাধরা উত্তর পাল্টে দিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের প্রাক্তন রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়। বৃহস্পতিবার সেই ধনখড়ের ছেড়ে যাওয়া পদে বসলেন সিভি আনন্দ বোস।
বৃহস্পতিবার, ১৭ নভেম্বর বাংলার নতুন এবং স্থায়ী রাজ্যপাল হিসাবে রাষ্ট্রপতি ভবন থেকে নিয়োগ করা হয়েছে আনন্দকে। তাঁর আগে অস্থায়ী ভাবে পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল পদ সামলাচ্ছিলেন মণিপুরের রাজ্যপাল লা গনেশন। তবে ধনখড়ের পর তাঁকেই স্থায়ী রাজ্যপাল হিসাবে পেল বাংলা।
কিন্তু ধনখড়-পরবর্তী পশ্চিমবঙ্গে রাজ্যপাল পদের তাৎপর্য বদলেছে। ফলত পশ্চিমবঙ্গের নতুন রাজ্যপাল আনন্দকে নিয়ে কৌতূহল বাড়তে শুরু করেছে বিভিন্ন মহলে।
নামের শেষে বাঙালি পদবি আনন্দের— বোস। প্রথমে তাই নিয়েই একটি বিভ্রান্ত তৈরি হয়েছিল। অনেকেই ভেবেছিলেন বাংলা বোধহয় বাঙালি রাজ্যপাল পেল। পরে জানা গেল, বাংলা নয় আনন্দের বাড়ি কেরলে। সেখানেই ১৯৫১ সালের ২ জানুয়ারি জন্ম। এখন বয়স প্রায় ৭২।
রাজনৈতিক মতাদর্শের দিক দিয়ে গেরুয়া-ঘনিষ্ঠ। আনন্দ ১৯৭৭ সালের আইএএস ক্যাডার। সরকারি আমলা হিসাবে বহু গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক পদ সামলেছেন। আবার কেন্দ্রীয় বহু প্রকল্পও হয়েছে তাঁরই ভাবনার দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে।
শোনা যায়, নতুন নতুন ভাবনার জন্য স্বয়ং দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও আনন্দের গুণগ্রাহী। মোদী তাঁকে ডাকেন ‘ম্যান অফ আইডিয়াজ়’ বলে। মোদী-ঘনিষ্ঠ এই প্রাক্তন আমলাই এখন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল। স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন উঠেছে, তবে কি ধনখড় পর্বের পুনরাবৃত্তি হতে চলেছে?
সুবক্তা হিসাবে নাম আছে আনন্দের। কম বয়সে নিয়মিত বিতর্কসভায় অংশ নিতেন। টানা তিন বছর বিশ্ববিদ্যালয়ের সেরা বক্তার স্বীকৃতি দখলে রেখেছিলেন তিনি। আবার মুসৌরিতে আইএএস অফিসারের প্রশিক্ষণ অ্যাকাডেমির বিতর্কসভাতেও প্রথম হয়েছেন। ফলে যুক্তি সম্বলিত তর্কে তিনি বেশ দড়।
ছোটবেলা কেটেছে কেরলের গ্রাম কোট্টায়ামে। স্কুলের পড়াশোনা সেখানেই। এর পর কে ই কলেজ থেকে কলা বিভাগে স্নাতক, কেরল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি ভাষা নিয়ে স্নাতকোত্তর। এবং পরে বিড়লা ইনস্টিটিউট থেকে গবেষণা করে পিএইচডি।
আনন্দের বাবা পিকে বাসুদেবন পিল্লাই ছিলেন স্বাধীনতা সংগ্রামী। মায়ের নাম সি পদ্মাবতী আম্মা। বস্তুত, আনন্দের নামে বোস শব্দটি জোড়ার নেপথ্য কারণ তাঁর বাবাও হতে পারেন। দক্ষিণ ভারতের তামিলনাড়ুর বা কেরলে বাংলার সুভাষচন্দ্র বসুর নামে ‘বোস’ নাম রাখার রেওয়াজ আছে। সেই কারণেই তাঁর পদবি ‘বোস’ বলে অনেকের অভিমত।
দীর্ঘ দিন ধরে প্রশাসনিক রাজনীতির সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছেন আনন্দ। কেরলের মুখ্যমন্ত্রীর সচিব হিসাবে কাজ করেছেন আনন্দ। এ ছাড়াও কেরল সরকারের বিভিন্ন দফতরের প্রধান সচিব হিসাবে দায়িত্ব সামলেছেন।
কেন্দ্রে যদিও তাঁর পরিচয় প্রধানমন্ত্রী মোদীর ‘ম্যান অফ আইডিয়াজ়’ নামেই। কারণ, তাঁর ভাবনা কেন্দ্রীয় সরকারের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক প্রকল্পে কাজে এসেছে। বিশেষ করে দেশের সবার জন্য পাকা বাড়ির ভাবনাটিও মোদী নিয়েছিলেন তাঁর কাছ থেকেই।
এ ছাড়াও দেশের হয়ে সার্ন (ইউরোপিয়ান কাউন্সিল ফর নিউক্লিয়ার রিসার্চ)-এ, জেনেভা অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল ফিউশন এনার্জি অর্গানাইজেশনে প্রতিনিধিত্ব করেছেন। অ্যাটমিক এনার্জি এডুকেশন সোসাইটির চেয়ারম্যান পদেও ছিলেন।
মেধাবী ছাত্র আনন্দ নিজের শিক্ষাজীবনে ১০০টিরও বেশি পদক পেয়েছেন। যার মধ্যে ১৫টিই স্বর্ণপদক। পেয়েছেন ২৯টি জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক পুরস্কারও।
তাঁর টুইটার প্রোফাইল বলছে, তিনি সুবক্তা। মানুষকে উদ্বুদ্ধ করতে পারেন কথা দিয়ে। তবে তাঁর বায়োডাটা বলছে আনন্দ শুধু সুবক্তা নন, লেখকও।
তিনটি ভাষা— ইংরেজি, হিন্দি এবং মলায়লমে ৩২টি বই লিখেছেন বাংলার নতুন রাজ্যপাল। এর মধ্যে যেমন উপন্যাস রয়েছে, তেমনই রয়েছে ছোটগল্প সংগ্রহ এমনকি, কবিতার বইও। এর মধ্যে বেশ কয়েকটি বই বেস্টসেলারের মর্যাদাও পেয়েছে।