সিনেমা দেখতে আমরা কমবেশি সকলেই ভালবাসি। ছবিতে দেখানো বহু দৃশ্যের সঙ্গে বাস্তবের মিল খোঁজারও চেষ্টা করি। কিন্তু বড় পর্দায় এমন অনেক কিছু দেখানো হয়, যার সঙ্গে বাস্তবের কোনও মিলই নেই। বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যাও মেনে চলা হয় না ছবি বানানোর সময়। ফলে দর্শকের মনে ভুল ধারণার জন্ম হয়। কেমন সে সব ভুল?
ছবিতে প্রায়ই দেখানো হয়, চোরাবালিতে আটকে যাওয়ার পর কোনও মানুষ বালির ভিতরে ঢুকে যাচ্ছেন। কিছু ক্ষণের মধ্যেই তাঁর পুরো শরীর বালির ভিতর ঢুকে যায় এবং ওই ব্যক্তি শ্বাসরুদ্ধ হয়ে মারা যান।
কিন্তু এই ধারণা সম্পূর্ণ ভুল। চোরাবালির মধ্যে জল এবং কাদা থাকে। এর মধ্যে পা আটকে গেলেও পুরোপুরি ডুবে যাওয়ার আশঙ্কা খুবই কম।
কোমর পর্যন্ত চোরাবালির ভিতরে ডুবে গেলেও খুব সহজেই সেখান থেকে উঠে আসা যায়। এর মধ্যে ফাঁসলে যে মৃত্যু নিশ্চিত, এই ধারণা একেবারেই ভুল।
স্পেনের আকাশে তিন বন্ধু স্কাইডাইভ করছেন। ‘জিন্দেগি না মিলেগি দোবারা’ ছবির সেই বিখ্যাত দৃশ্য। ছবি মুক্তির পর সিনেমাপ্রেমীদের মনে এই দৃশ্যটি আলাদা জায়গা করে নিয়েছিল। অনেকের মনে আবার এই দৃশ্য দেখার পর স্কাইডাইভ করার ইচ্ছা জেগেছিল।
শুধু এই ছবিতেই নয়, স্কাইডাইভের দৃশ্য দেখানো হয়েছে আরও অনেক ছবিতে। এই দৃশ্যে দেখানো হয়, চরিত্রেরা একে অপরের সঙ্গে কথা বলছেন। কিন্তু বাস্তবে তা একদমই সম্ভব নয়।
স্কাইডাইভ করার সময় উঁচু থেকে নীচের দিকে লাফ দিলে বেশ কিছু ক্ষণ হাওয়ায় ভেসে থাকেন স্কাইডাইভার। কিন্তু চারিদিকে হাওয়ার এত তীব্র আওয়াজ হয় যে, সেই মুহূর্তে হাওয়ার শোঁ শোঁ আওয়াজ ছাড়া কোনও শব্দই কানে পৌঁছয় না। তাই সিনেমা দেখে যদি ধারণা তৈরি হয় যে, স্কাইডাইভ করার সময় সত্যিই পাশে থাকা সঙ্গীর সঙ্গে খোশগল্প করা যায়, তবে সেই ধারণা একেবারেই ভুল।
সিনেমা-বিজ্ঞান অনুযায়ী কাউকে অজ্ঞান করতে চাইলে রুমাল বা কাপড়ের টুকরোয় ক্লোরোফর্মে ভিজিয়ে সেই কাপড় মুখে চেপে ধরলেই কেল্লাফতে।
অজ্ঞান হতে নাকি সময় লাগে কয়েক সেকেন্ড। সাধারণত বড় পর্দায় এই ধরনের দৃশ্য দেখেই দর্শক অভ্যস্ত। কিন্তু এত দিন ধরে এই দৃশ্য দেখিয়ে দর্শককে ভুল বার্তা দেওয়া হয়েছে।
বাস্তবে ক্লোরোফর্ম প্রয়োগের মাধ্যমে কাউকে অজ্ঞান করতে হলে ক্লোরোফর্মে ভেজা কাপড় এক টানা সাত থেকে আট মিনিট নাকে চেপে রাখতে হয়। তার পর অজ্ঞান করা যায়। বাস্তবে, কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে অজ্ঞান করা কোনও ভাবেই সম্ভব নয়।
সিনেমায় কোনও চরিত্রের হৃদ্স্পন্দন থেমে গেলে দেখা যায়, ডিফ্রিব্রিলেটর যন্ত্র ব্যবহার করলে আবার স্বাভাবিক হৃদ্স্পন্দন ফিরে আসে। ‘মৃত’ ব্যক্তির দেহে প্রাণও ফিরে আসে। কিন্তু এত সহজে প্রাণ ফিরিয়ে আনা সম্ভব কি?
সাধারণত, ডিফ্রিব্রিলেটর যন্ত্র ব্যবহার করে অস্বাভাবিক হৃদ্স্পন্দনকে স্বাভাবিক ছন্দে ফেরানো যায়। কিন্তু মৃত ব্যক্তিকে বাঁচিয়ে তোলা অসম্ভব।
বেশির ভাগ ক্ষেত্রে অ্যাকশন ঘরানার ছবিতে দেখানো হয়, দুই হাতে দুটো বন্দুক চালাচ্ছেন নায়ক। কিন্তু বাস্তবে সেই সম্ভাবনা খুবই কম। দশ লক্ষ মানুষের মধ্যে হয়তো এক জন দু’হাতে বন্দুক চালিয়ে সঠিক নিশানায় গুলি ছুড়তে পারেন।
বহু সিনেমায় দেখানো হয়, হাওয়া ভরা ইনজেকশন সিরিঞ্জ শরীরে ঢোকালে তা নাকি হৃদ্স্পন্দন থামিয়ে দেয়। কিন্তু এই ধারণা একদম ভুল।
হৃদ্স্পন্দন বন্ধ করার জন্য যত বড় সিরিঞ্জের প্রয়োজন হয়, তা সচরাচর হাসপাতাল বা দোকানে পাওয়া যায় না।