মঙ্গলবার বৃষ্টির ঝমঝম শব্দে ঘুমিয়েছিল সান্দাকফু। বুধবার সকালে ঘুম ভাঙল যেন অন্য দুনিয়ায়! সাদা বরফে ঢাকা পড়েছে চরাচর। ঝিরিঝিরি তুষারপাত তখনও অব্যাহত। বসন্তের সকাল যেন এক লহমায় টেনে নিয়ে গেল জানুয়ারির সকালে।
হাওয়া অফিস জানিয়েছিল, আগামী কয়েক দিন ধরে বৃষ্টিতে ভিজবে দার্জিলিঙের পাহাড়। এ ছাড়াও জলপাইগুড়ি, আলিপুরদুয়ার-সহ কয়েক জেলায় হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাসও ছিল। সেই পূর্বাভাস মিলে গেল পুরোপুরি।
মঙ্গলবার রাত থেকেই পাহাড়-সহ সমতলে আবহাওয়ার আমূল পরিবর্তন ঘটে। ঝোড়ো হাওয়ার সঙ্গে শুরু হয় হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টিপাত। দার্জিলিং (সমতল), জলপাইগুড়ি-সহ বিস্তীর্ণ এলাকায় হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টিপাত চলছে বুধবারও।
আবহাওয়া দফতর জানিয়েছিল, দার্জিলিং জেলার পাহাড়ের উঁচু এলাকায় হালকা থেকে মাঝারি তুষারপাত হতে পারে। সেই মতো, রাত থেকেই ঝোড়ো হাওয়া শুরু হয় পাহাড়ে। অনেকেই বলছেন, হাওয়ার দাপটে তাপমাত্রাও কমতে থাকে সান্দাকফুতে।
বৃষ্টি এবং বরফশীতল ঝোড়ো হাওয়ার অর্থ বুঝতে অসুবিধা হয়নি সান্দাকফুর আদি বাসিন্দাদের। তাঁরা বুঝে গিয়েছিলেন, রাতেই বরফ পড়তে শুরু করবে। অভিজ্ঞতা বৃথা যায়নি। রাত ৩টে থেকে সান্দাকফুতে বরফ পড়া শুরু হয়।
শুরুতে হালকা তুষারপাত হলেও ক্রমশ হাওয়ার বেগের সঙ্গে সঙ্গে পাল্লা দিতে থাকে বরফ। মাঝারি বরফ পড়তে থাকে সারা রাত ধরে। সকাল হতেই সান্দাকফু যেন ভোল বদলে তুষারস্নাত হয়ে ওঠে। তাপমাত্রা তখন শূন্যেরও বেশ অনেকটা নীচে।
পাহাড়ে বসন্ত কাটাতে গিয়েছিলেন বেশ কয়েক জন পর্যটক। বরফের দেখা পাবেন, এমনটা স্বপ্নেও ভাবতে পারেননি তাঁরা। আচমকা তুষারপাত দেখে তাঁরা সবাই অবাক! অনেকেই জীবনে প্রথম বার নিজের চোখে পরখ করলেন কী করে বরফ পড়ে। অনেকেই হোটেলের ব্যালকনিতে কম্বলমুড়ি দিয়ে তারিয়ে তারিয়ে উপভোগ করছেন বাসন্তিক তুষারপাত।
এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত সান্দাকফুতে বরফ পড়া থামার নাম নেই। এ দিকে দার্জিলিং শহরেও এক ধাক্কায় তাপমাত্রা নীচে নেমে গিয়েছে। বৃষ্টির সঙ্গে সঙ্গেই ঝোড়ো হাওয়া সেখানেও বরফ পড়ার সম্ভাবনা তৈরি করেছে। তবে, দার্জিলিং পাহাড়ের বাসিন্দারা জানেন, তেমন কিছু ব্যতিক্রমী ঘটনা না ঘটলে বসন্তের বরফ দেখবে না শহর।
বেলা সাড়ে ১২টা নাগাদ দার্জিলিং রাজভবনের কাছে লাগানো থার্মোমিটার বলেছে ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর বরফে ঢাকা সান্দাকফুতে এখনও তাপমাত্রা শূন্যের নীচে। সান্দাকফুতে লাগাতার তুষারপাত হয়েই চলেছে। থামার নাম নেই।
সিকিমের আবহাওয়া দফতরের ডিরেক্টর গোপীনাথ রাহা বলেন, ‘‘সান্দাকফুতে তুষারপাত এবং বৃষ্টিপাত আরও বেশ কয়েক দিন চলবে। বসন্তোৎসব পর্যন্তও হতে পারে তুষারপাত।’’ আর আবহাওয়ার পূর্বাভাস দেখে মুখের হাসি বন্ধই হচ্ছে না পর্যটকদের।
বছরের এই সময় সাধারণত বরফ দেখতে অভ্যস্ত নয় দার্জিলিং পাহাড়। যদিও বসন্তে মাঝেমাঝে যে বরফ পড়ে, সে কথাও মনে করিয়ে দিচ্ছেন স্থানীয়েরা। সান্দাকফুতে তুষারপাত জারি থাকলেও তার আশপাশের নেপাল সীমান্ত এলাকায় এখনও পর্যন্ত বরফের দেখা নেই।
তুষারপাতের মধ্যেই অনেকে বেরিয়ে পড়েছেন হোটেল থেকে। কেউ নিজস্বী তুলছেন বরফকে সাক্ষী রেখে, আবার কেউ বরফের বল বানিয়ে প্রিয়জনদের দিকে ছুড়তে ব্যস্ত। সব মিলিয়ে বসন্তের বাংলায় বরফের দেখা পেয়ে মহাখুশি পর্যটকেরা।