মূলত ভারতের উৎসব হলেও, বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় উদ্যাপিত হয় ‘আলোর উৎসব’ দীপাবলি। ভারতের প্রায় প্রতিটি গ্রাম এবং শহরের মানুষ দীপাবলির দিন আনন্দে মেতে ওঠেন।
তবে কর্নাটকের চামরাজানগর জেলার গুন্ডলুপেট তালুকের নেনেকাট্টে, মালাভাল্লি, মাদারহাল্লি, বীরানপুরা, এগারওয়াদি, বেনথালাপুরা এবং চিন্নাজানা হুন্ডি— এই ছয় গ্রামে দীপাবলি পালন হয় কালেভদ্রে। নেপথ্যে এক অভিশাপ।
গুন্ডলুপেট তালুকের ছ’টি গ্রামে দীপাবলি পালন করেনি দীর্ঘ ন’বছর। আবার কবে ওই গ্রামগুলির বাসিন্দারা আলোর উৎসব উদ্যাপন করবেন, তা তাঁরা নিজেরাও জানেন না।
কিন্তু কেন এই অদ্ভুত নিয়ম এই ছয় গ্রামে? কেনই বা তাঁরা প্রতি বছর দীপাবলি উদ্যাপন করতে পারেন না?
এই ছয় গ্রামের একটির প্রধান মালিয়াপ্পা জানান, এই বছর দেশের অনেক জায়গায় দীপাবলি পালিত হবে বুধবার। আর সেই কারণেই তাঁরা এই উৎসব উদ্যাপন করার সুযোগ পেয়েছেন, দীর্ঘ ন’বছর পর।
কেন এই নিয়ম? মালিয়াপ্পার মতে, কয়েকশো বছর আগে এই ঘটনার সূত্রপাত।
লোকমুখে প্রচলিত রয়েছে, অনেক বছর আগে নেলুর গ্রামে এক জন প্রধান বাস করতেন যিনি নেনেকাট্টে-সহ এই ছ’টি গ্রাম নিয়ন্ত্রণ করতেন। স্থানীয়রা তাঁকে ডাকতেন পালেগারা নামে।
এই ছ’টি গ্রামের পাশে পদগুর গ্রাম নামে একটি গ্রাম ছিল। এক বার দীপাবলির আগে এই গ্রামের দুই কিশোর উৎসব পালনের জন্য ওই ছয় গ্রামের একটিতে কলা গাছ কাটতে গিয়েছিল।
কিন্তু সেই গ্রামের বাসিন্দারা ওই দুই কিশোরকে ধরে নিয়ে যান পালেগারার কাছে।
সমস্ত অভিযোগ শুনে প্রধান রেগে আগুন হয়ে যান। শাস্তিস্বরূপ গাছে বেঁধে ওই দুই কিশোরকে বেধড়ক মারধর করেন গ্রামের মুরুব্বিরা।
ওই দুই কিশোর সম্পর্কে ছিল দুই ভাই। তাদের মার খেতে দেখে গ্রামবাসীদেরই কয়েক জন তাদের মা মারাম্মাকে পুরো বিষয়টি জানান। মারাম্মা তৎক্ষণাৎ ঘটনাস্থলে যান।
ছেলেদের ও ভাবে মার খেতে দেখে মারাম্মা প্রচণ্ড রেগে যান। রেগে গিয়ে দুই সন্তানের মা প্রধানকে অভিশাপ দেন যে নেলুর-সহ ছয় গ্রামেই মড়ক নেমে আসবে। সেটাই নাকি হয়েছিল। রাতারাতি পুড়ে ছাই হয়ে যায় নেলুর গ্রামের একাধিক বাড়ি। গবাদি পশুরাও বিনা কারণে মরতে শুরু করে।
গ্রামবাসীদের মধ্যে আগেই গুজব ছিল যে, মারাম্মা কোনও বিশেষ শক্তির উপাসক এবং ভয়ঙ্কর শক্তির অধিকারিণী।
অবস্থা সামলাতে ছয় গ্রামের বাসিন্দারা ক্ষমা চেয়ে মারাম্মার পায়ে হুমড়ি খেয়ে পড়েন। গ্রামবাসীদের দেখে মারাম্মার মন নরম হয়ে যায়। মারাম্মা জানান যে তিনি যে অভিশাপ দিয়েছেন তা ফিরিয়ে নেওয়া সম্ভব নয় কিন্তু কমানো সম্ভব।
মারাম্মা গ্রামবাসীদের নিদান দেন যে, গ্রামবাসীরা যেন সেই দীপাবলির দিনগুলিই উদ্যাপন করেন, যে দীপাবলি বুধবার পড়বে। মারাম্মার নিদানই গুরুত্ব সহকারে মেনে নিতে বাধ্য হন গ্রামবাসীরা।
মারাম্মা আরও জানান যে, এঙ্গালাওয়াড়ির কাছে মহাদেশশ্বরা মন্দির থেকে পবিত্র জল এবং রাগি শস্য এনে গবাদি পশুদের খাওয়ালে তাদেরও প্রাণে বাঁচবে।
মালিয়াপ্পা জানান, অতীতে গ্রামবাসীরা এমনও কয়েক বার এই উৎসবে মেতেছিলেন যে বার দীপাবলি বুধবার ছাড়া অন্য দিনে পড়েছিল।
কিন্তু সেই উৎসব উদ্যাপনের পরই গ্রামবাসীদের জীবনে নেমে আসে দুর্যোগের কালো মেঘ। মারা যেতে থাকে গবাদি পশু। তবে এখন আর সেই ‘ভুল’ করেন না গ্রামবাসীরা। বুধবার ছাড়া অন্য কোনও দিন দীপাবলি পড়লে সন্তর্পণে এড়িয়ে যান তাঁরা।