শ্রুতি শর্মা জানতেন তিনি এ বছর ইউপিএসসি পরীক্ষায় ভাল ফল করবেন। কিন্তু দেশের বাকি পরীক্ষার্থীদের টেক্কা দিয়ে প্রথম হবেন, ভাবতে পারেননি। উত্তরপ্রদেশের বিজনৌরের মেয়েটি তাঁর রেজাল্ট দেখার পর টানা বেশ কিছুক্ষণ ধরে ‘রিফ্রেশ’ করেছিলেন ওয়েবসাইটের পাতাটি। শেষে কিছু বদলাচ্ছে না দেখে সাহস করে খবর দিয়েছিলেন মাকে।
শ্রুতি এই প্রথমবার ইউপিএসসির সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় বসলেন তা নয়। এর আগে এই পরীক্ষায় বসেছেন। এবং ব্যর্থ হয়েছেন। এ বছরেরটি ছিল তাঁর দ্বিতীয় চেষ্টা। কিন্তু প্রথম চেষ্টায় ব্যর্থ হয়েই দ্বিতীয় বারে শীর্ষে পৌঁছনো! পারলেন কী করে?
পড়াশোনায় দারুণ মেধাবী ছিলেন বা জীবনে প্রথম ছাড়া দ্বিতীয় হননি জাতীয় কোনও গল্প নিজের সাফল্যের পর জানাননি শ্রুতি। জানায়নি তাঁর পরিবারও। তবে মেধায় ঘাটতি ছিল না নিশ্চয়ই দিল্লির সেন্ট স্টিফেন্স কলেজের ছাত্রীর। হবু আইএএস পড়াশোনা করেছেন দেশের অন্যতম সেরা জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ে।
দিল্লিতে জন্ম। পড়াশোনাও। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতকোত্তর পড়াশেনা সম্পূর্ণ করতে পারেননি। তার আগেই ঠিক করে ফেলেন তিনি ইউপিএসসি সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় বসবেন।
দেশের সরকারি জনসেবক বেছে নেওয়ার পরীক্ষা ইউপিএসসি। যে পরীক্ষা কঠিন হয় বলেই বহুশ্রুত। শ্রুতি প্রস্তুতি শুরু করেন ইউপিএসসির একটি নামকরা প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে ভর্তি হয়ে।
বাবা একজন পেশাদার স্থপতি। মা প্রাক্তন স্কুল শিক্ষিকা। অর্থাভাব কখনওই ছিল না শ্রুতির। তিনি পুরোপুরি মন দেন ইউপিএসসির পড়াশোনায়।
দীর্ঘদিন প্রশিক্ষণ নেওয়ার পর প্রথম বার পরীক্ষা দিয়ে ব্যর্থ হলেও হাল ছাড়েননি। পরের বছর আবারও পরীক্ষায় বসেন। আর এ বার সফল হন শ্রুতি।
তবে গন্ডগোল বাধে ইন্টারভিউ দিতে গিয়ে। লিখিত পরীক্ষার নম্বর ভালই হয়েছিল শ্রুতির। ভেবেছিলেন ইন্টারভিউ তিনি সামলে নেবেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা হয়নি।
শ্রুতি জানিয়েছেন ইন্টারভিউ দিয়ে বেরিয়ে বাবা-মায়ের কাছে এসে কেঁদে ফেলেছিলেন তিনি। কারণ তিনি অর্ধেক প্রশ্নেরই জবাব দিতে পারেননি।
শ্রুতির কথায়, ইন্টারভিউয়ে তাঁকে এমন সব প্রশ্ন করা হয়েছিল, যা তথ্য ভিত্তিক। আর সেই সব তথ্য জানা ছিল না তাঁর। শ্রুতি ভেবেই নিয়েছিলেন, এ বারও খারাপ ফল করবেন। রেজাল্ট দেখে তাই চমকে গিয়েছিলেন তিনি।
শ্রুতি বলেছেন, শেষ ভাল যার সব ভাল! তাই পুরনো কথা ভুলে তিনি এখন দারুণ খুশি।
বিজনৌরের কন্যা জানিয়েছেন, তিনি উত্তরপ্রদেশ ক্যাডারের অংশ হতে চান। আইএএস হতে চান। তবে তার আগে ভ্রমণপ্রেমী শ্রুতি একটু বেড়াতেও যেতে চান।
তাঁর কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল আইএএস হয়ে তিনি সমাজে কী বদল আনতে চান? শ্রুতি জানিয়েছেন তিনি মেয়েদের ক্ষমতায়ন এবং শিক্ষা নিয়ে কাজ করবেন।