উচ্চতা মাত্র তিন ফুট চার ইঞ্চি। উচ্চতার বাধাকে আমল দেননি। গুরুত্ব দিয়েছেন ইচ্ছা এবং স্বপ্নকে। সেই স্বপ্নে ভর করে চিকিৎসক হয়েছেন গণেশ বারাইয়া। তিনি পৃথিবীর ‘সব থেকে খর্বকায়’ চিকিৎসক।
গণেশ গুজরাতের বাসিন্দা। উচ্চতা কম হওয়ার কারণে শারীরিক প্রতিবন্ধকতাও রয়েছে তাঁর। শরীরে ৭২ শতাংশে তার প্রভাব পড়েছে। কিন্তু সে সবে আমল দেননি গণেশ।
খর্বকায় হওয়ার কারণে পেশাগত জগতেও একাধিক বাধা, চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছেন গণেশ। বৈষম্যের শিকার হয়েছেন। তাঁর যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে। সব কিছুর মোকাবিলা করেছেন গণেশ।
একটি সাক্ষাৎকারে গণেশ জানিয়েছিলেন, লোকজনের কটাক্ষ তাঁকে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে। জেদ বাড়িয়েছে। সব কিছু ভুলে এগিয়ে গিয়েছেন তিনি।
২০১৮ সালে উচ্চ মাধ্যমিকে ৮৮ শতাংশ নম্বর পেয়েছিলেন গণেশ। ডাক্তারির প্রবেশিকা নিট-এ ২৩৩ নম্বরে ছিলেন তিনি। তার পরেও গুজরাত সরকার তাঁকে ডাক্তারি পড়ার অনুমতি দেয়নি প্রথমে।
গণেশ ভেঙে পড়েননি। তিনি সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হন। ২০১৮ সালে সেই মামলা জেতেন।
২০১৯ সালে ডাক্তারিতে ভর্তি হন তিনি। এ বছর এমবিবিএস পাশ করেছেন গণেশ। ভাবনগরের একটি হাসপাতালে ইন্টার্নশিপ করছেন তিনি।
এএনআইকে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে গণেশ বলেন, ‘‘দ্বাদশ শ্রেণির বোর্ড পরীক্ষা পাশ করে ডাক্তারির প্রবেশিকা নিটও পাশ করি। এমবিবিএসে ভর্তির আবেদনপত্র জমা করি। কিন্তু আমার উচ্চতার জন্য মেডিক্যাল কাউন্সিল অফ ইন্ডিয়া তা খারিজ করে।’’
মেডিক্যাল কাউন্সিল অফ ইন্ডিয়া গণেশকে জানিয়েছিল যে, গুরুতর অসুস্থ হয়ে কোনও রোগী হাসপাতালে এলে, সেই পরিস্থিতি তিনি সামাল দিতে পারবেন না। তাঁর উচ্চতা বাধা হয়ে দাঁড়াবে। এই বিষয়ে কী পদক্ষেপ করবেন, তা নিয়ে আলোচনা করেছিলেন তাঁর স্কুল নীলকণ্ঠ বিদ্যাপীঠের প্রধানশিক্ষকের সঙ্গে।
গণেশ জানান, প্রধানশিক্ষকের পরামর্শ মেনে জেলাশাসক এবং গুজরাতের শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেন তিনি। ভাবনগরের জেলাশাসকের পরামর্শে তিনি গুজরাত হাই কোর্টের দ্বারস্থ হন।
গণেশের সঙ্গেই মামলা করেছিলেন আরও দুই প্রার্থী। তাঁরাও বিশেষ ভাবে সক্ষম। গুজরাত হাই কোর্টে মামলা হেরে যান গণেশরা। তার পর দ্বারস্থ হন সুপ্রিম কোর্টের।
২০১৮ সালে সুপ্রিম কোর্ট রায় দেয়, এমবিবিএস পড়তে পারবেন তিনি। তত দিনে ওই বছরের জন্য ডাক্তারিতে ভর্তি বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। সে কারণে ২০১৯ সালে ডাক্তারি পড়তে ভর্তি হন গণেশ।
২০১৯ সালে ভাবনগরের মেডিক্যাল কলেজে ডাক্তারি পড়তে ভর্তি হন গণেশ।
গণেশ যখন হাসপাতালের ওয়ার্ডে পরিদর্শনে বার হন বা কোনও রোগী দেখতে যান, অনেক সময় বিস্মিত হন তাঁরা। রোগীরা ভাবেন, কোনও শিশু হয়তো চিকিৎসকের পোশাক পরে এসেছেন। পরে গণেশ আশ্বস্ত করলে বিষয়টি বুঝতে পারেন।
গণেশ জানান, প্রথম ধাক্কা কাটিয়ে ওঠার পর রোগীরা তাঁর সঙ্গে ভাল ভাবে মিশে যান। গল্পগুজবও করেন। তাঁর চিকিৎসায় ভরসাও রাখেন। তবে প্রথম দেখার পর রোগীদের সেই ‘ধাক্কা’ খাওয়া এখন সয়ে গিয়েছে গণেশের। ও সবে কান না দিয়ে নিজের কাজটাই শুধু করেন তিনি।