ক্যাপ্টেন শিবা চৌহান। বিশ্বের সর্বোচ্চ যুদ্ধক্ষেত্র সিয়াচেনে মোতায়েন প্রথম মহিলা সেনা। মঙ্গলবার ভারতীয় সেনাবাহিনীর তরফে এই ঘোষণা করা হয়েছে।
সিয়াচেনে মোতায়েন হওয়ার আগে অন্য সেনা অফিসারদের মতো শিবাকেও এক মাসের কঠোর প্রশিক্ষণের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছিল।
সঠিক প্রশিক্ষণের জন্য শিবাকে এক মাসের জন্য সিয়াচেন ব্যাটল স্কুলে রাখা হয়েছিল। সেই প্রশিক্ষণের মধ্যে বরফের প্রাচীরে ওঠা, তুষারপাতের মধ্যে উদ্ধারকাজ চালানো এবং কঠিন পরিস্থিতিতে বেঁচে থাকার মহড়া অন্তর্ভুক্ত ছিল।
সেনাবাহিনী এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ‘‘বিভিন্ন প্রতিকূলতা থাকা সত্ত্বেও ক্যাপ্টেন শিবা সফল ভাবে প্রশিক্ষণ শেষ করেছেন এবং সিয়াচেন সামলানোর জন্য প্রস্তুত।’’
২ জানুয়ারি, সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১৫ হাজার ৬০০ ফুট উচ্চতায় সিয়াচেনের কুমার পোস্টে, শিবাকে মোতায়েন করা হয়েছে। এই অঞ্চলের তাপমাত্রা মাইনাস ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
ক্যাপ্টেন শিবার নেতৃত্বে একটি সেনাদল যুদ্ধের প্রযুক্তিগত কৌশলের উপর কাজ করবে। আপাতত তিন মাসের জন্য কুমার পোস্টে মোতায়েন থাকবেন শিবা এবং তাঁর দল।
কেন্দ্রীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিংহ একটি টুইটে শিবাকে সিয়াচেনে মোতায়েন করার খবর প্রকাশ্যে আনার পর থেকে দেশবাসীর নজর তাঁর দিকে। সকলের এখন একটাই প্রশ্ন, কে এই শিবা?
ক্যাপ্টেন শিবা রাজস্থানের উদয়পুরের বাসিন্দা। ১১ বছর বয়সে তাঁর বাবা মারা যান।
দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত শিবা উদয়পুরের এক স্কুল থেকে পড়াশোনা করেছেন। পরে তিনি উদয়পুরেরই ‘এনজেআর ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি’ থেকে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং করেন।
শৈশব থেকেই ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীতে যোগ দেওয়ার স্বপ্ন দেখতেন শিবা। সেই জন্য পড়াশোনা শেষ করে তিনি চেন্নাইয়ের ‘অফিসারস ট্রেনিং অ্যাকাডেমি’ থেকে প্রশিক্ষণ নেন।
প্রশিক্ষণ নেওয়ার পর শিবা ২০২১ সালে ভারতীয় সেনার ‘ইঞ্জিনিয়ারিং রেজিমেন্ট’-এর সদস্য হন।
২০২২ সালের জুলাই মাসে কার্গিল বিজয় দিবস উপলক্ষে ক্যাপ্টেন শিবা সিয়াচেন ওয়ার মেমোরিয়াল থেকে ৫০৮ কিমি কার্গিল ওয়ার মেমোরিয়াল পর্যন্ত সুরা সোই সাইক্লিং অভিযানে সফল ভাবে নেতৃত্ব দেন।
এর পর শিবাকে সুরা সোই ইঞ্জিনিয়ারদের নেতৃত্ব দেওয়ার দায়িত্ব দেওয়া হয়। সিয়াচেনে তাঁর অভূতপূর্ব প্রদর্শনের কারণে তাঁকে সিয়াচেন ব্যাটল স্কুলে প্রশিক্ষণের জন্য বাছাই করা হয়েছিল। সেই প্রশিক্ষণের পরই তাঁকে সিয়াচেনে মোতায়েন করা হয়েছে।
বিশ্বের সর্বোচ্চ এবং শীতলতম যুদ্ধক্ষেত্র সুরক্ষিত করতে ভারতের ‘মেঘদূত অপারেশন’-এর পর থেকে গত ৪০ বছরে সিয়াচেনে কখনও কোনও মহিলা সেনা অফিসারকে মোতায়েন করা হয়নি।
শিবার বিষয়ে প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ টুইট করে লিখেছিলেন, ‘চমৎকার খবর! মহিলাদের আরও বেশি করে সশস্ত্র বাহিনীতে যোগ দিতে এবং প্রতিটি চ্যালেঞ্জকে এগিয়ে নিয়ে যেতে দেখে আমি রোমাঞ্চিত। ক্যাপ্টেন শিবাকে আমি শুভেচ্ছা জানাই।’’