গত কয়েক মাস ধরে পাকিস্তান যে প্রবল অর্থনৈতিক সঙ্কটের মুখোমুখি হয়েছিল, তার প্রতিঘাত কিছুটা কমেছে। একাধিক দেশের কাছ থেকে অর্থসাহায্য পেয়েছে ভারতের পড়শি। তাই আপাতত পাক অর্থনীতি স্থিতিশীল হওয়ার পথে।
পাকিস্তান অবশ্য নিজের পায়ে ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি। অর্থনীতিকে স্থিতিশীল করার জন্য তাকে অন্য দেশের কাছে হাত পাততে হয়েছে। চিন থেকে শুরু করে সৌদি আরব, সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে পাকিস্তানের ‘মিত্রেরা’।
আন্তর্জাতিক অর্থভান্ডার (আইএমএফ) ঋণ দেওয়া বন্ধ করার পর থেকেই পাকিস্তানের দুর্দিনের সূত্রপাত। দীর্ঘ সঙ্কটের পথ পেরিয়ে দেশটি আবার আইএমএফ-এর অর্থসাহায্য পেয়েছে।
আইএমএফের সঙ্গে পাকিস্তানের ৩০০ কোটি ডলারের অর্থসাহায্যের একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। এই চুক্তি আন্তর্জাতিক অর্থনীতিতে মাথা তুলে দাঁড়ানোর জন্য পাকিস্তানের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
চিনের সঙ্গে পাকিস্তানের সম্পর্ক বরাবরই ভাল। সেই বন্ধু দেশের কাছ থেকেও অর্থসাহায্য পেয়েছে পাকিস্তান। জুন মাসে ভারতের পড়শিকে প্রায় ৮১৯২ কোটি টাকা দিয়ে সাহায্য করেছে চিন।
এ ছাড়া, সম্প্রতি সৌদি আরব এবং সংযুক্ত আরব আমিরশাহির কাছ থেকেও অর্থসাহায্য পাচ্ছে পাকিস্তান। গত ১১ জুলাই সৌদি সরকার সঙ্কটদীর্ণ পাকিস্তানকে ২০০ কোটি ডলার দিয়েছে।
সংযুক্ত আরব আমিরশাহি পাকিস্তানকে ১০০ কোটি ডলার দিয়েছে। পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কে ওই টাকা জমা পড়েছে। এতে পাকিস্তানের বৈদেশিক মুদ্রার ভান্ডার সমৃদ্ধ হয়েছে।
পাকিস্তানের এই পর পর সাফল্যের নেপথ্যে উঠে আসছে একটাই নাম। প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ। দেশের চূড়ান্ত সঙ্কটের সময়ে তিনিই বৈতরণী পার করিয়েছেন পাকিস্তানকে।
শাহবাজের নেতৃত্বেই সঙ্কটের ধাক্কায় টলে যাওয়া পাক অর্থনীতি আবার সচল হয়েছে। ভিক্ষার ঝুলি নিয়ে তিনিই ঘুরেছেন মিত্র দেশগুলির দোরে দোরে। তাতেই এসেছে সাফল্য।
তবে প্রধানমন্ত্রীর কুর্সিতে শাহবাজ আর বেশি দিন নেই। অগস্টেই ইস্তফা দিতে চলেছেন তিনি। সে কথা ঘোষণাও করে দিয়েছেন। তাঁর পরবর্তীতে কে হবেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী? দেশটির ভবিষ্যতই বা কী?
২০১৮ সালের অগস্ট মাসে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন ইমরান খান। ২০২২ সালের এপ্রিলে তাঁকে সরিয়ে দেওয়া হয়। নতুন প্রধানমন্ত্রী হন শাহবাজ। প্রধানমন্ত্রী হিসাবে তাঁর মেয়াদ ২০২৩-এর অক্টোবর পর্যন্ত।
পাকিস্তানে আবার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে অক্টোবর মাসে। কিন্তু তত দিন শাহবাজ প্রধানমন্ত্রী থাকছেন না। তিনি অগস্টেই ইস্তফা দিচ্ছেন। তিনিই ঘোষণা করেছেন, দেশে কার্যনির্বাহী সরকার (কেয়ারটেকার সরকার) গঠন করবেন তিনি।
কেয়ারটেকার সরকার অক্টোবরের নির্বাচন পর্যন্ত দেশ চালাবে। শাসকদল এবং প্রধান বিরোধী দলের দুই প্রতিনিধিদের মধ্যে থেকে প্যানেলের মাধ্যমে বেছে নেওয়া হবে যে কোনও এক জনকে। তিনিই নির্বাচন পর্যন্ত সরকারের প্রধান হিসাবে থাকবেন।
নির্বাচনের আগে পাকিস্তানের আমজনতার একটা বড় অংশ সরকার গঠনের বিষয়ে শাহবাজের দিকেই ঝুঁকে আছেন বলে মনে করা হচ্ছে। কারণ অবশ্যই প্রধানমন্ত্রী হিসাবে তাঁর কাজ।
ইমরান সরকারের পতনের পর পাকিস্তান ঘোর অর্থনৈতিক সঙ্কটের মুখোমুখি হয়েছিল। ঋণে জর্জরিত সরকারের দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিয়েছিলেন শাহবাজ।
পাক সরকার যে যে চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়েছিল, শাহবাজের নেতৃত্বেই সেই প্রতিকূলতাগুলি কাটিয়ে উঠেছে। মিত্র দেশগুলিকে অর্থসাহায্যে রাজি করিয়েছেন তিনিই।
আবার, ইমরানের দলের দিকেও জনমতের একটা বড় অংশ ঝুঁকে আছে। ইমরানের সেনাবিরোধী অবস্থান অনেককেই আকৃষ্ট করেছে। কিছু দিন আগে তাঁর গ্রেফতারির পর পাকিস্তান অভিনব প্রতিবাদের সাক্ষী থেকেছিল।
ইমরানকে গ্রেফতার করা হলে পাকিস্তানের সাধারণ মানুষ রাস্তায় নেমে সেনার বিরুদ্ধে বিক্ষোভে শামিল হয়েছিল। দেশের ইতিহাসে যে ছবি আগে দেখা যায়নি। ফলে অক্টোবরের নির্বাচনে জনগণ কাকে বেছে নেয়, সে দিকে নজর থাকবে।