স্ত্রীকে খুনের মামলায় গত ২৮ বছর ধরে তিনি জেলে বন্দি। এই দীর্ঘ বছরে এক বারের জন্যও প্যারোলে ছাড়া পাননি তিনি। বেশ কয়েকটি সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত নভেম্বরে সুপ্রিম কোর্টে মুক্তির আবেদন জানিয়েছিলেন। কিন্তু সেই আবেদন মঞ্জুর হয়নি। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
স্ত্রীকে হত্যার অপরাধীর নাম শ্রদ্ধানন্দ ওরফে মুরলী মনোহর মিশ্র। মধ্যপ্রদেশের সাগরের বাসিন্দা। স্ত্রীকে খুনের অভিযোগে ১৯৯৪ সালের ৩০ এপ্রিল তাঁকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ২০০০ সালে কর্নাটকের নিম্ন আদালত শ্রদ্ধানন্দকে মৃত্যুদণ্ড দেয়। ২০০৫ সালে কর্নাটক হাই কোর্ট সেই শাস্তি বহাল রাখে। এর পর সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করেন তিনি। ২০০৭ সালে খণ্ডিত রায় দেয় শীর্ষ আদালত। ২০০৮ সালে মৃত্যুদণ্ড বদলে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়। প্রতীকী ছবি।
প্রথমে শ্রদ্ধানন্দকে বেঙ্গালুরুর সেন্ট্রাল জেলে রাখা হয়েছিল। ২০১১ সালে তাঁর অনুরোধে মধ্যপ্রদেশের সাগর সেন্ট্রাল জেলে পাঠানো হয় শ্রদ্ধানন্দকে। বর্তমানে তাঁর বয়স ৮০।
মহীশূর (তৎকালীন) রাজঘরানার দেওয়ান স্যর মির্জা ইসমাইলের বাড়িতে পরিচারকের কাজ করতেন শ্রদ্ধানন্দ। প্রতীকী ছবি।
মহীশূরের দেওয়ানের নাতনি ছিলেন শাকিরা নামাজি খলিলি। তাঁর সঙ্গে বিয়ে হয়েছিল আইএফএস (ইন্ডিয়ান ফরেন সার্ভিস) অফিসার মির্জা খলিলির সঙ্গে। মির্জা খলিলিকে বিয়ে করার পর শাকিরার মা তাজ নমাজি তাঁকে বিপুল সম্পত্তি এবং ব্যাঙ্গালোরের (তৎকালীন) রিচমন্ড রোডে একটি সুবিশাল বাড়ি উপহার দিয়েছিলেন। প্রতীকী ছবি।
আইএফএস অফিসার হিসাবে কাজ করার সুবাদে বেশির ভাগ সময় বিদেশেই কাটাতে হত আকবর খলিলিকে। কাজ করেছেন অস্ট্রেলিয়া এবং ইরানে ভারতের হাইকমিশনার হিসাবে। স্বামীর বদলির চাকরি হওয়ায় প্রথম প্রথম তাঁর সঙ্গে বিদেশেই থাকতেন শাকিরা। তাঁদের চার মেয়ে— সাবা, এজমেথ, হরেহানা এবং জিবুন্দা। প্রতীকী ছবি।
দিল্লিতে এক বন্ধুর বিয়েতে গিয়েছিলেন শ্রদ্ধানন্দ। তিনি আবার শাকিরারও বন্ধু ছিলেন। শ্রদ্ধানন্দ দিল্লির ওই বন্ধুর সম্পত্তির যাবতীয় বিষয় দেখাশোনা করতেন। এই বিয়েতেই শাকিরার সঙ্গে আলাপ হয় শ্রদ্ধানন্দের। প্রতীকী ছবি।
সেই আলাপে শাকিরা এবং তাঁর পরিবারের বিশ্বাস অর্জন করে নিয়েছিলেন শ্রদ্ধানন্দ। শাকিরার পরিবার তাঁকে ব্যাঙ্গালোরে (তৎকালীন) তাঁদের বাড়িতে আমন্ত্রণ জানান শ্রদ্ধানন্দকে। বেঙ্গালুরুর পুলিশ কমিশনার এস মারিস্বামী এক সাংবাদমাধ্যমকে এমনটাই জানিয়েছিলেন। প্রতীকী ছবি।
ধীরে ধীরে শাকিরার পরিবারের আরও ঘনিষ্ঠ হয়ে ওঠেন শ্রদ্ধানন্দ। পুলিশ সূত্রে খবর, একটা সময় শ্রদ্ধানন্দকে সম্পত্তির হিসাব, কর সংক্রান্ত বিষয় দেখাশোনার দায়িত্ব দিয়ে দেন শাকিরা। আর এখান থেকেই শ্রদ্ধানন্দ এবং শাকিরার সম্পর্ক গড়ে ওঠে।
১৯৮৫ সালে শাকিরা তাঁর স্বামী আকবরকে ডিভোর্স দেন। তার পরই ১৯৮৬ সালে বিয়ে করেন শ্রদ্ধানন্দকে। আসল নাম মুরলী মনোহর মিশ্র হলেও, নিজেকে শ্রদ্ধানন্দ বলে পরিচয় দিয়েছিলেন তিনি। শুধু তাই-ই নয়, স্বঘোষিত ‘গডম্যান’ বলেও নিজেকে পরিচয় দিয়েছিলেন।
শ্রদ্ধানন্দকে বিয়ের বিষয়টি শাকিরার মেয়েরা মেনে নিতে পারেননি। তিন মেয়ে শাকিরার সঙ্গে সম্পর্ক ত্যাগ করেন। একমাত্র সাবা তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেন। তিনি মডেলিংয়ের জন্য মুম্বইয়ে চলে গিয়েছিলেন। প্রতীকী ছবি।
বিয়ের পাঁচ বছর পর্যন্ত সব ঠিকঠাক ছিল। পাঁচ বছর ধরে শাকিরার মায়ের থেকে পাওয়া ৬০০ কোটির সম্পত্তির দেখাশোনা করতেন শ্রদ্ধানন্দ। আর বিলাসবহুল জীবনযাপন করতেন। ১৯৯১ সালে দু’জনের সম্পর্কে তিক্ততা আসে। প্রতীকী ছবি।
শ্রদ্ধানন্দের নজর ছিল শাকিরার বিপুল সম্পত্তির উপর। দু’জনের সম্পর্ক তিক্ত হওয়ার পর শাকিরাকে খুন করে সেই সম্পত্তি হাতানোর পরিকল্পনা করেন শ্রদ্ধানন্দ।
এক দিন বেঙ্গালুরুর রিচমন্ড রোডের বাড়িতে আসেন শ্রদ্ধানন্দ। ওই বাড়ির পরিচারকদের একটি বড় কাঠের বাক্স বানাতে নির্দেশ দেন। তাঁদের জানান, সোনা-রুপোর গয়না রাখতে ওই বাক্স প্রয়োজন। কয়েক জন পরিচারককে বাড়ির পিছনে বড় গর্ত খুঁড়তে নির্দেশ দেন শ্রদ্ধানন্দ। তাঁদের জানানো হয়, জলের একটা বড় ট্যাঙ্ক বানানো হবে ওখানে। সেই মতো পরিচারকরা বড় একটি গর্ত খোঁড়েন। প্রতীকী ছবি।
পরিকল্পনা মতো শাকিরাকে চায়ের সঙ্গে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে দেন শ্রদ্ধানন্দ। তিনি অচৈতন্য হয়ে পড়লে রিচমন্ড রোডের বাড়িতে নিয়ে আসেন তিনি। আগে থেকে বানানো কাঠের বাক্সে শাকিরার দেহ ভরে বন্ধ করে দেন। বাড়ির পিছনে বানানো বড় গর্ততে সেই কাঠের বাক্স ফেলে মাটি চাপা দিয়ে দেন শ্রদ্ধানন্দ। দমবন্ধ হয়ে মৃত্যু হয় তাঁর। প্রতীকী ছবি।
১৯৯১ সালের এপ্রিল-মে নাগাদ শাকিরার মেয়ে সাবা খেয়াল করেন যে, বেশ কয়েক মাস তাঁর মায়ের কোনও সাড়াশব্দ নেই। তখন তিনি শ্রদ্ধানন্দের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। শ্রদ্ধানন্দ তাঁকে জানান, শাকিরা বিদেশে গিয়েছেন। কিন্তু সাবার সন্দেহ হয়। প্রতীকী ছবি।
১৯৯২ সালের ১০ জুন একটি নিখোঁজ ডায়েরি করেন সাবা। অভিযোগে তিনি জানিয়েছিলেন, ১৯৯১ সালের ১৯ এপ্রিল শাকিরার সঙ্গে শেষ বার ফোনে কথা হয়েছিল। তিন বছর ধরে তদন্তের পর পুলিশ শ্রদ্ধানন্দকে গ্রেফতার করে। পরে এক পরিচারক অপরাধ দমন শাখার কাছে স্বীকার করেছিলেন যে, শাকিরাকে খুনে তিনি শ্রদ্ধানন্দকে সহযোগিতা করেছিলেন। প্রতীকী ছবি।
১৯৯৪ সালে শাকিরার দেহ কবর থেকে তোলা হয়। সেই দেহের ময়নাতদন্ত করা হয়। তদন্তকারীরা জানতে পারেন, শ্রদ্ধানন্দকে সম্পত্তির ‘পাওয়ার অফ অ্যাটর্নি’ দেওয়ার পর এবং ইচ্ছাপত্র তার নামে করে দেওয়ার পরই শাকিরাকে খুন করেন তিনি। ১৯৯৪ সালে শ্রদ্ধানন্দকে গ্রেফতার করে কর্নাটক পুলিশ। প্রতীকী ছবি।