৪ বছর পর বড় পর্দায় ‘পাঠান’ ঝড় তুলতে সফল শাহরুখ খান। সিনেমায় অভিনেতার ‘অ্যাবস’ এবং ‘ম্যান ব্যান’ দেখে কে বলবে যে, ৩ দশক আগে এই নায়কই ছোট পর্দায় ‘ফৌজি’ ধারাবাহিকে অভিনয় করেছিলেন।
সেই ১৯৮৯ সালে ‘সার্কাস’ ধারাবাহিকে শাহরুখের অভিনয় দেখে দর্শক প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়েছিলেন। তখনই শাহরুখ বুঝিয়ে দিয়েছিলেন যে, তিনি লম্বা রেসের ঘোড়া।
১৯৯১ সালে শাহরুখ সিদ্ধান্ত নেন যে তিনি আর ধারাবাহিকে অভিনয় করবেন না। বড় পর্দায় অভিনয় করবেন তিনি।
শুরু হয় শাহরুখের বলিপাড়ার যাত্রা। বিভিন্ন জায়গায় অডিশন দেওয়ার পর ৪টি ছবিতে সই করেন তিনি। ঋষি কপূর এবং দিব্যা ভারতীর সঙ্গে প্রথম ছবি তাঁর। ১৯৯২ সালে মুক্তি পাওয়া ‘দিওয়ানা’ বক্স অফিসে সাড়া ফেলে।
প্রথম ছবিতে বাজিমাত করার পর ‘রাজু বন গ্যায়া জেন্টলম্যান’, ‘চমৎকার’ প্রভৃতি ছবিতে অভিনয় করলেও নেতিবাচক চরিত্রে শাহরুখের অভিনয় মনে রাখার মতো।
‘বাজিগর’ এবং ‘ডর’ ছবিতে শাহরুখের অভিনয় দেখে গা শিউরে ওঠে। সেই ‘ক..ক..কিরণ’ ডাক শুনলেই রক্তবর্ণ চোখ এবং অদ্ভুত হাসির কথা মনে পড়ে।
১৯৯৫ সালে সলমন খানের সঙ্গে জুটি বেঁধে ‘কর্ণ অর্জুন’ ছবিতে অভিনয় করেছিলেন শাহরুখ।
ম্যান্ডোলিন এবং সর্ষের ক্ষেত। এই দু’টি শব্দ বললেই ‘দিলওয়ালে দুলহনিয়া লে জায়েঙ্গে’ ছবিতে শাহরুখ-কাজলের সম্পর্কের রসায়নের কথা মনে পড়ে।
১৯৯৭ সালে ‘পরদেশ’ ছবিতে পরিচালক সুভাষ ঘাইয়ের সঙ্গে হাত মিলিয়েছিলেন শাহরুখ।
শাহরুখ যে রোম্যান্স ঘরানার রাজা, তা ‘দিলওয়ালে দুলহনিয়া লে জায়েঙ্গে’র পর আবার প্রমাণ করলেন ‘দিল তো পাগল হ্যায়’ ছবির মাধ্যমে। মাধুরী দীক্ষিত এবং করিশ্মা কপূরের সঙ্গে তাল মিলিয়ে শাহরুখের নাচও মনে রাখার মতো।
ট্রেনের ছাদের উপর উঠে নাচের দৃশ্য ‘দিল সে’ ছবিতে অভিনয় করে আইকনিক করে তুলেছিলেন শাহরুখ।
ত্রিকোণ প্রেমের সম্পর্ক নিয়ে ‘কুছ কুছ হোতা হ্যায়’ ছবিটি আজও শাহরুখ অনুরাগীদের কাছে প্রিয়।
১৯৯৯ সালে মুক্তি পাওয়া ‘বাদশা’ ছবিটি বক্স অফিসে হিট না হলেও এই ছবিতে শাহরুখের কালো চশমা পরা লুক হিট করেছিল।
‘মহব্বতে’ ছবিতে গুরুকুলের কড়া অনুশাসনের মধ্যেও ‘মিউজ়িক টিচার’-এর চরিত্রে শাহরুখের অভিনয় ভোলার নয়।
২০০১ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘অশোক’ ছবিতে সম্রাট অশোকের লুকে ভাল মানিয়েছিল শাহরুখকে।
২০০১ সালেই মুক্তি পেয়েছিল ‘কভি খুশি কভি গম’। অমিতাভ বচ্চন, জয়া বচ্চন, কাজল, করিনা কপূর, হৃতিক রোশনের মতো তারকারা এই ছবিতে অভিনয় করেছিলেন।
সঞ্জয় লীলা ভন্সালীর পরিচালনায় মুক্তি পায় ‘দেবদাস’ ছবিটি। উপন্যাসের পাতা থেকে ‘দেব’-এর চরিত্রকে বড় পর্দায় নিখুঁত ভাবে ফুটিয়ে তুলেছিলেন শাহরুখ।
‘দেবদাস’ মুক্তির পর শাহরুখকে বহু ছবিতে দেখা গেলেও ‘বীর জ়ারা’ সিনেমায় নায়কের অভিনয়দক্ষতার অন্য দিক ধরা দিয়েছিল।
২০০৫ সালে অমল পালেকরের পরিচালনায় মুক্তি পায় ‘পহেলি’। এই ছবিতে শাহরুখকে গোঁফ এবং পাগড়ি পরে যেন চেনাই যাচ্ছিল না।
অমিতাভ বচ্চনের পর বড় পর্দায় ‘ডন’ হিসাবে শাহরুখকে সঠিক নির্বাচন করেছিলেন পরিচালক ফারহান আখতার।
২০০৭ সালে আদিত্য চোপড়ার প্রযোজনায় মুক্তি পেয়েছিল ‘চক দে! ইন্ডিয়া’। হেড কোচ কবীর খান চরিত্রে শাহরুখের অভিনয় দুর্দান্ত। তাঁর মুখে ‘সত্তর মিনিট’-এর সংলাপ লোকের মুখে মুখে ঘোরে।
একই বছর ফারাহ খানের পরিচালনায় মুক্তি পেয়েছিল ‘ওম শান্তি ওম’ ছবিটি। এই ছবির মাধ্যমে দীপিকা পাড়ুকোনের বড় পর্দায় প্রথম আবির্ভাব। তবে ‘দর্দ-এ-ডিস্কো’ গানের দৃশ্যে শাহরুখের সিক্স প্যাক কি ভুলে থাকার মতো?
২০০৮ সালে আদিত্য চোপড়ার পরিচালনায় ‘রব নে বনা দি জোড়ি’ ছবিতে শাহরুখের বিপরীতে অভিনয় করতে দেখা যায় অনুষ্কা শর্মাকে।
২০১০ সালে কর্ণ জোহরের পরিচালনায় ‘মাই নেম ইজ খান’ ছবিতে শাহরুখের অভিনয় দেখে দর্শক অভিভূত হয়ে গিয়েছিলেন। চিত্রনাট্যও ছিল মন ছুঁয়ে যাওয়ার মতো।
অনুভব সিনহার পরিচালনায় ২০১১ সালে মুক্তি পেয়েছিল ‘রা.ওয়ান’ ছবিতে। এই ছবিতে ভিডিয়ো গেমসের এক সুপারহিরোর চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন শাহরুখ।
লাদাখের রাস্তার উপর দিয়ে বাইক চালিয়ে নিয়ে যাওয়ার দৃশ্য মনে উঁকি মারলেই ‘যব তক হ্যায় জান’ ছবিতে শাহরুখের অভিনয়ের কথা মনে পড়ে।
‘হ্যাপি নিউ ইয়ার’, ‘চেন্নাই এক্সপ্রেস’, ‘দিলওয়ালে’র মতো বাণিজ্যিক ছবিতে অভিনয় করেছিলেন শাহরুখ। ২০১৬ সালের ‘ফ্যান’ ছবিতে তাঁকে দ্বৈত চরিত্রে অভিনয় করতে দেখা যায়।
গৌরী শিণ্ডের পরিচালনায় ২০১৬ সালে মুক্তি পায় ‘ডিয়ার জিন্দেগি’। মনোবিদের চরিত্রে শাহরুখের অভিনয় এবং তাঁর সংলাপ দুই-ই মনে রাখার মতো।
‘ডিয়ার জিন্দেগি’ ছবি মুক্তির এক বছর পর মুক্তি পায় ‘রইস’। এই ছবিতে শাহরুখের লুক-ই বলে বলে দশ গোল দিতে পারে।
আনন্দ এল রাই পরিচালিত ‘জিরো’ ছবিতে শাহরুখকে বামনের চরিত্রে অভিনয় করতে দেখা যায়। এই ছবিতে শাহরুখের সঙ্গে অনুষ্কা শর্মা এবংক ক্যাটরিনা কইফ অভিনয় করেছিলেন। ক্যামিয়ো চরিত্রে ছিলেন সলমন খান।
বড় পর্দা থেকে বিরতি নিয়েছিলেন শাহরুখ। তবে, ‘ব্রহ্মাস্ত্র’ ছবির প্রথম পর্বে ক্যামিয়ো চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন তিনি। ক্ষণিকের জন্য পর্দায় আবির্ভাব হলেও ওইটুকু সময়ের মধ্যে কী ভাবে দর্শকের মনে জায়গা করে নিতে হয় তা ভালই জানেন অভিনেতা।
৪ বছরের দীর্ঘ বিরতির পর আবার পর্দায় ফিরে এলেন শাহরুখ। তবে কোনও ক্যামিয়ো চরিত্রে নয়। জমজমাট অ্যাকশন ছবিতে মুখ্য চরিত্রে অভিনয় করেই ‘পাঠান’ ঝড় তুলেছেন সারা দেশে।