‘মিটু’ নিয়ে যখন পৃথিবীর সমস্ত দেশের সমস্ত ক্ষেত্রের মানুষ কথা বলছেন, তখন অন্যধারার কিছু অভিযোগও প্রকাশ্যে আসে।
অভিনেত্রীদের একাংশ জানান, তাঁদের সঙ্গেও যৌনহেনস্থার ঘটনা ঘটছে। কিন্তু তাঁরা বাকিদের মতো বিষয়টিকে যৌনহেনস্থা বলে চিহ্নিত করতে পারছেন না। কারণ তাঁরা নিজেরাই ওই ঘটনার অনুমতি দিয়েছেন। এমনকি চুক্তিপত্রে সইও করেছেন।
ঘটনাগুলি যখন ঘটে, তখন ওই নায়িকারা ক্যামেরার সামনে ঘনিষ্ঠদৃশ্যে অভিনয় করছিলেন। তাঁরা জানিয়েছেন, ওই দৃশ্যে অভিনয়ের সময়ই তাঁদের মনে হয় তাঁদের যৌনহেনস্থা করা হচ্ছে।
হলিউড অভিনেত্রী শ্যারন স্টোন বলেছিলেন, ‘বেসিক ইনস্টিংট’ ছবিতে বিখ্যাত জেরার দৃশ্যে এক ঘর অভিনেতার সামনে তাঁকে নিম্নাঙ্গের অন্তর্বাস খুলতে বাধ্য করা হয়েছিল। তাঁকে বলা হয়েছিল পর্দায় তাঁর গোপনাঙ্গ দেখা যাবে না। শ্যারনের ঘটনাটি ভাল লাগেনি। কিন্তু তিনি প্রতিবাদও করতে পারেননি। কারণ তিনি চুক্তিতে সই করেছিলেন।
‘গেম অফ থ্রোনস’ অভিনেত্রী এমিলি ক্লার্কও কিছুটা একই ধরনের অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন। এমিলি অভিনীত ‘মাদার অফ ড্রাগন’ চরিত্রটি ‘গেম অফ থ্রোনস’-এর জনপ্রিয় চরিত্রগুলির মধ্যে অন্যতম। এমিলি বলেছেন, তাঁর বহু বার মনে হয়েছে নগ্ন হয়ে ঘনিষ্ঠদৃশ্যে অভিনয় করতে বাধ্য করা হচ্ছে তাঁকে। কিন্তু এমিলিও এর প্রতিবাদ করতে পারেননি।
ভারতীয় সিনেমাতেও এমন ঘটনা ঘটেছে বহু বার। কমল হাসন এক বার দক্ষিণী অভিনত্রী রেখাকে তাঁর অনুমতি ছাড়াই চুম্বন করেছিলেন। স্ক্রিপ্টে চুম্বনের দৃশ্য ছিল না। ওই দক্ষিণী অভিনেত্রী জানিয়েছিলেন, স্ক্রিপ্টে ওই দৃশ্যের কথা বলা হলে তিনি রাজি হতেন না।
কিন্তু কে জানাত তাঁদের? স্ক্রিপ্টের প্রয়োজনে ঘনিষ্ঠদৃশ্যে কোনও বদল হবে কি না। বা হলে কতটা বদল হবে। অভিনেতাদের শরীর কতখানি স্পর্শ করবে পরস্পরকে, তা আগে থেকে জানা যাবে কী করে, যাতে শর্ত ভাঙা হলে অভিনেতা বা অভিনেত্রীর হাতে আইনি পদক্ষেপ করার সুযোগ থাকে!
ভারতীয় সিনেমায় এই অভাবের জায়গাটি পূরণ করেছেন আস্থা খন্না। তিনি দেশের প্রথম ঘনিষ্ঠ দৃশ্য সমন্বয়কারী বা ওই সব দৃশ্যে অভিনেতাদের ‘শিক্ষক’। তাঁর কাজ ঘনিষ্ঠদৃশ্যে অভিনয়ের সময় অভিনেতারা যাতে অস্বস্তিবোধ না করেন, তা নিশ্চিত করা।
একই সঙ্গে যাঁরা অভিনয় করছেন, তাঁদের অধিকার ভঙ্গ হচ্ছে কি না, বা তাঁদের অনিচ্ছায় কিছু করতে হচ্ছে কি না, সেই বিষয়গুলিও দেখেন আস্থা। ইতিমধ্যে বেশ কিছু ছবিতে এই কাজ করেও ফেলেছেন তিনি। তবে আস্থার মতে, ভারতীয় ছবির দুনিয়ায় যেখানে মুখের কথায় কাজ হয় বেশি, সেখানে তাঁর কাজটি একটু কঠিন।
ইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন নিয়ে পড়াশোনা করেছেন আস্থা। তাঁর ইচ্ছে ছিল পরিচালক হওয়ার। সহকারী পরিচালক হিসেবে কাজও শুরু করেছিলেন।
এখন সেই আস্থাই আইনি কাগজ প্রস্তুত করেন। তাঁর বিশেষ ব্যাগে থাকে মহিলা অভিনেত্রীর শারীরিক উত্তেজনার অভিনয়ের জন্য কৃত্রিম পুরুষাঙ্গ, পুরুষের উত্তেজনার মুহূর্তকে আড়াল করার জন্য অ্যাথলেটিক গার্ড, নগ্ন দৃশ্যে যাতে অভিনেতা অভিনেত্রীদের সম্পূর্ণ নগ্ন না হতে হয়, তার জন্য বিশেষ পোশাক, এ ছাড়া মিন্ট ট্যাবলেট, দাঁতের ব্রাশ, ডিওডোরেন্ট স্প্রে, নেল কাটার, লিস্টেরিন ইত্যাদি।
একটি ছবির সহ পরিচালকের দায়িত্ব পালন করতে গিয়েই ঘনিষ্ঠ দৃশ্যে অভিনয়ের এই সমস্যার বিষয়টি নজরে পরে আস্থার। তিনি দেখেন বিদেশে এই ধরনের দৃশ্যায়নের জন্য আলাদা পেশাদার থাকলেও ভারতে এমন কোনও পেশাদারের পরামর্শ নেওয়ার প্রচলন নেই। তিনি দায়িত্ব নেন।
নিজের চেষ্টাতেই তৈরি করেন ঘনিষ্ঠ দৃশ্যের বিশেষ নির্দেশিকা। তবে আস্থা জানিয়েছেন, ভারতীয় সিনেমায় এখনও এই নিয়ে অনেক মানসিকতার সমস্যা রয়েছে। ওটিটি প্ল্যাটফর্মে কাজের ক্ষেত্রে তাঁকে কোনও অসুবিধায় পড়তে হয় না ঠিকই। তবে এখনও সিনেমার ঘনিষ্ঠদৃশ্যের শ্যুটিংয়ের সময়ে অনেক প্রশ্নের উত্তর দিতে হয় তাঁকে।