জেফ্রি এডওয়ার্ড এপস্টিনের নাম শুনেছেন? আমেরিকার ধনকুবের। যদিও ধনী বলে তাঁকে কম মানুষই চেনেন। জেফ্রির আসল খ্যাতি (বা কুখ্যাতি) একজন যৌন অপরাধী হিসেবে।
কম করে ৪০ জন মহিলা যৌন হেনস্থার অভিযোগ এনেছেন জেফ্রির বিরুদ্ধে। প্রত্যেকেই জানিয়েছেন, তাঁরা ধনকুবেরের ইন্দ্রিয়াসক্তির শিকার হয়েছিলেন অল্প বয়সে। কেউই তখনও ১৮ উত্তীর্ণ হননি।
জেফ্রির কামিনী এবং কামনা কাহিনি প্রকাশ্যে এসেছে এই নির্যাতিতাদের বয়ানেই। ধনকুবের জেফ্রি ঠিক কতটা ইন্দ্রিয়াসক্ত, তাঁর কামনালিপ্সু চরিত্রের একটা আন্দাজ অনেকেই মনে মনে তৈরি করে নিয়েছিলেন ওই কাহিনি থেকে।
বোঝা হয়ে গিয়েছিল, ইনি এমন এক ধনকুবের যিনি অর্থের জোরে নাবালিকাদের অপরিণতমনস্কতার সুযোগ নিয়েছেন। কখনও ইচ্ছের বিরুদ্ধে, কখনও ভয় দেখিয়ে সহবাস করেছেন তঁদের সঙ্গে। সেই অত্যাচারের বিবরণও নানা ভাবে সামনে এসেছে বহুবার। মানুষ প্রতি পদে ঘৃণা করেছেন। কিন্তু জেফ্রির এই অদ্ভূত অভ্য়াসের কারণ খুঁজে পাননি।
পরে জেফ্রি তাঁর কুকীর্তির জন্য গ্রেফতার হয়েছেন। দোষী সাব্যস্ত হয়ে জেলও হয়েছে তাঁর। শেষে বছর দু’য়েক আগে জেলের ভিতরেই আত্মঘাতী হন আমেরিকার এই ধনকুবের।
তবে মৃত্যুর দু’বছর পর জেফ্রির ব্যাপারে এমন একটি তথ্য প্রকাশ্যে এসেছে যা তাঁর চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের কিছুটা ব্যখ্যা দিতে পারে।
দিন কয়েক আগেই জেফ্রির বিরুদ্ধে হওয়া নাবালিকাদের যৌন হেনস্থার মামলায় তাঁর প্রেমিকার হাত ছিল এমন অভিযোগ এনে নতুন একটি মামলা শুরু হয়েছে। সম্প্রতি সেই মামলায় সাক্ষ্য দেন কেট নামে এক মহিলা।
‘কেট’ অবশ্য তাঁর ছদ্মনাম। কেট জানিয়েছেন, একটা সময়ে জেফ্রির শিকার হয়েছিলেন তিনিও। তবে তাঁর সঙ্গে যখন জেফ্রির আলাপ হয়েছিল, তখন কেট প্রাপ্তবয়স্ক। পড়াশোনা করছেন কলেজে।
জেফ্রির সঙ্গে কেটের আলাপ করিয়ে দিয়েছিলেন স্বয়ং জেফ্রির প্রেমিকা ঘিসলাইন ম্যাক্সওয়েল। বলেছিলেন, জেফ্রি প্রতিভাধরদের পড়াশোনার খরচ জুগিয়ে সাহায্য করেন। কেট তখন নিজেকে সঙ্গীতকার হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে চাইছেন। সঙ্গীত নিয়ে উচ্চ শিক্ষার স্বপ্নও দেখছেন। জেফ্রির সঙ্গে আলাপ সুবর্ণ সুযোগ বলেই মনে হয়েছিল তাঁর।
কেট জানিয়েছেন, জেফ্রির সঙ্গে তাঁকে দেখা করাতে একরকম জোরই করেছিলেন তাঁর প্রেমিকা ম্যাক্সওয়েল। প্রথম সাক্ষাতেই তাঁকে দিয়ে ‘ফুট মাসাজ’ করিয়েছিলেন জেফ্রি। এমনকি ওইদিনই কেটকে দিয়ে নিজের শরীরের ঊর্ধ্বাঙ্গে ম্যাসাজ নেন জেফ্রি।
কেট অবাক হননি তা নয়। তবে একইসঙ্গে তিনি ভেবেছিলেন এই লোকটিকে খুশি রাখতে হবে তাঁকে। তাই সামান্য সেবার অনুরোধ ফেলেননি। কিন্তু পরে তাঁর ভুল ভাঙে যখন একদিন তাঁকে শুধু জেফ্রির ম্যাসাজের জন্যই ডেকে পাঠান ম্যাক্সওয়েল। একা ঘরে জেফ্রির সঙ্গে তাঁকে ছেড়ে বাইরে থেকে দরজা বন্ধ করে দেন।
ঘরের ভিতর শুধু একটি তোয়ালের পোশাক পরে দাঁড়িয়েছিলেন জেফ্রি। কেট-এর সঙ্গে তিনি ঘনিষ্ঠ হওয়ার চেষ্টাও করেন। কিন্তু ভয় পেয়ে চিৎকার করে দরজা ধাক্কা দিতে শুরু করেন কেট। ম্যাক্সওয়েল এসে উদ্ধার করেন তাঁকে।
এরপরই একান্তে ডেকে জেফ্রির ‘সমস্যা’র কথা কেটকে জানিয়েছিলেন ম্যাক্সওয়েল। আদালতকে নিজের বয়ানে কেট বলেছেন, ‘‘ম্যাক্সওয়েল আমাকে সেদিন বলেছিলেন, ওঁর (জেফ্রির) যৌনাকাঙ্খা অত্যন্ত বেশি। দিনে অন্তত তিনবার মিলনেচ্ছু হন। সেই চাহিদা একা সামাল দিতে পারেন না জেফ্রির প্রেমিকা ।’’ কেটদের শরণাপন্ন হওয়া সেই অসহায়তা থেকেই।
যদিও তথ্য বলছে, ম্যাক্সওয়েল শুধু জেফ্রির চাহিদার জোগান দিতেন তা-ই নয়, ইংল্যন্ডের রাজপুত্র অ্যান্ড্রু, যাঁর নামও একবার যৌন কেলেঙ্কারিতে জড়িয়েছিল, তাঁর সঙ্গেও দহরম মহরম ছিল ম্যাক্সওয়েলের। এমনকি বিষয়টি গল্পোচ্ছলে একবার কেটকে বলেও ফেলেছিলেন জেফ্রির ‘প্রেমিকা’। জেফ্রির অত্যধিক কামনেচ্ছার কথাও এ ভাবেই মুখ ফসকে বলে ফেলেছিলেন ম্যাক্সওয়েল।