বিশ্ব অপরাধ জগতের ‘ডন’ দাউদ ইব্রাহিম। তিনি কোথায় কখন কী করছেন, কাকপক্ষীতেও টের পায় না। আর সেই কারণেই তাঁর খবর জানার জন্য এত আগ্রহ সকলের। দাউদ সম্বন্ধে সামান্যতম তথ্য মিললেও তোলপাড় পড়ে যায় বিশ্বে।
সেই দাউদ নাকি গুরুতর অসুস্থ। করাচির হাসপাতালে তাঁকে ভর্তি করানো হয়েছে। অবস্থা সঙ্কটজনক। সমাজমাধ্যমে জল্পনা, দাউদকে নাকি বিষ খাওয়ানো হয়েছে।
পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যমে রবিবার রাত থেকে দাউদের স্বাস্থ্যের খবর নিয়ে চর্চা শুরু হয়েছে। কিন্তু কোনও তরফ থেকে এখনও নিশ্চিত করে কিছুই জানানো হয়নি। সবটাই জল্পনার স্তরেই রয়েছে।
পাক সংবাদমাধ্যম সূত্রে খবর, সোমবার সকাল থেকে নাকি পাকিস্তানের একাধিক এলাকায় ইন্টারনেট পরিষেবা ব্যাহত হয়েছে। এক্স, ফেসবুক, ইনস্টাগ্রামের মতো অ্যাপ চলছে না। একে ‘বড়’ কোনও ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা বলে মনে করছেন কেউ কেউ।
দাউদ সম্বন্ধে মুম্বই পুলিশের তরফেও খোঁজখবর চালানো হচ্ছে বলে জানা গিয়েছে। তবে তাঁর আত্মীয়েরা উড়িয়ে দিয়েছেন বিষক্রিয়ার জল্পনা।
দাউদের অসুস্থতার খবরে পাকিস্তানে নিরাপত্তা আরও নিশ্ছিদ্র করে তোলা হয়েছে। বলা হচ্ছে, যে হাসপাতালে দাউদকে রাখা হয়েছে, সেখানে আর কোনও রোগী নেই। কাউকে কাছে ঘেঁষতেই দেওয়া হচ্ছে না।
বস্তুত, দাউদ সম্বন্ধে এই ধরনের অসুস্থতার খবর নতুন নয়। জল্পনা এবং দাউদ যেন সমার্থক হয়ে গিয়েছে। তাঁর নানা রকম শারীরিক অসুস্থতার কথা প্রকাশ্যে এসেছে বার বার। এমনকি, একাধিক বার রটেছে তাঁর মৃত্যুর খবরও। কোনও ক্ষেত্রেই নিশ্চয়তা মেলেনি।
এর আগে ২০১৬ সালে দাউদের গুরুতর অসুস্থতার খবর রটেছিল। জানা গিয়েছিল, তাঁর রক্তে শর্করার মাত্রা অত্যধিক পরিমাণে বেড়ে গিয়েছে। পচে যাচ্ছে অঙ্গপ্রত্যঙ্গ।
দাউদের রক্তচাপও অনেক বেশি বলে দাবি করা হয়েছিল। শোনা গিয়েছিল, উচ্চ রক্তচাপ এবং উচ্চমাত্রায় সুগারের কারণে তাঁর দুই পায়ে পৌঁছচ্ছে না পর্যাপ্ত পরিমাণে রক্ত। এই সমস্যার নাম ‘গ্যাংগ্রিন’।
রক্ত না পৌঁছনোয় দাউদের পা নাকি ধীরে ধীরে অবশ হয়ে এসেছিল। পা কেটে বাদ দেওয়ার নিদানও নাকি দিয়েছিলেন চিকিৎসকেরা। মনে করা হয়েছিল, মৃত্যুশয্যায় কাতরাচ্ছেন দাউদ।
সেই খবর যেমন হাওয়ায় ভেসে উঠেছিল, তেমনই হাওয়ায় মিলিয়ে যায়। পরে ২০১৭ সালে আরও এক বার দাউদের গ্যাংগ্রিন নিয়ে জল্পনা জোরালো হয়েছিল। তখন বলা হচ্ছিল, দাউদ মৃত্যুশয্যায়। এ যাত্রায় হয়তো আর তাঁকে বাঁচানো যাবে না।
পাক সংবাদমাধ্যমের একাধিক রিপোর্টে দাবি করা হয়েছিল, দাউদের পায়ের বহু কোষ, পেশি ইতিমধ্যে অসাড়, নষ্ট হয়ে গিয়েছে রক্তের অভাবে। কেউ কেউ বলছিলেন, দাউদের পা কেটে বাদ দেওয়া হয়েছে।
২০১৭ সালের এপ্রিল মাসে এক বার রটেছিল, দাউদ হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন। পাকিস্তানের হাসপাতালে তার পর তাঁকে ভর্তি করানো হয়েছিল।
২০২০ সালে সারা বিশ্বে করোনা আতঙ্কের মাঝে রটেছিল, দাউদের মৃত্যু হয়েছে করোনাভাইরাসের হানায়। এমনকি, তাঁর স্ত্রী-ও করোনা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি বলে শোনা গিয়েছিল।
ওই একই সময়ে লন্ডনের একটি প্রভাবশালী সংবাদপত্রে দাবি করা হয়, করোনা নয়, দাউদকে বিষ প্রয়োগ করা হত্যা করা হয়েছে। আর তা হয়েছে পাক সেনার নির্দেশেই। এ ক্ষেত্রে বিষ ইঞ্জেকশন ব্যবহার করা হয়েছে বলেও জানানো হয়েছিল।
দীর্ঘ দিন ধরেই করাচিতে থাকেন দাউদ। সম্প্রতি জানা গিয়েছিল, পাক গুপ্তচর সংস্থা ইন্টার সার্ভিস ইন্টেলিজেন্স (আইএসআই)-এর সহকারী ডিরেক্টর জেনারেল (এডিজি) নামের সাম্মানিক পদে দাউদকে বসানো হয়েছে। পাক গুপ্তচর ব্যবস্থায় অবদানের জন্য এই পদ তাঁকে দেওয়া হয়েছে।
মুম্বইয়ের পুলিশ কনস্টেবলের পুত্র দাউদ আশির দশকে ভারত থেকে পালিয়ে দুবাই যান। সেখান থেকে পাকিস্তানের সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ। ১৯৯৩ সালের ১২ মার্চ মুম্বইয়ে যে ধারাবাহিক বোমা বিস্ফোরণ হয়েছিল, তার মাস্টারমাইন্ড ছিলেন এই দাউদ।
আমেরিকা থেকে শুরু করে রাষ্ট্রপুঞ্জ, সবার খাতাতেই ঘোষিত বিশ্বমানের জঙ্গি দাউদ। আল কায়েদা, তালিবানের সঙ্গেও তাঁর যোগ ছিল বলে অভিযোগ। কাজ করেছেন ওসামা বিন লাদেনের সঙ্গেও।
বিশ্ব জুড়ে নিষিদ্ধ মাদক পাচার চক্র চালান দাউদ। জঙ্গি নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে রমরমিয়ে চলে সেই কারবার। তাঁর সংগঠনের নাম ডি-কোম্পানি। দাউদ এবং তাঁর এই সংগঠনের সদস্যদের ধরতে মরিয়া ভারত-সহ একাধিক দেশ।
২০১৮ সালে এক বার শোনা গিয়েছিল, দাউদ দেশে ফিরতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন। শর্তসাপেক্ষে তিনি নাকি আত্মসমর্পণ করতেও চেয়েছেন। কিন্তু তাঁর শর্তগুলি মেনে নেওয়া ভারত সরকারের পক্ষে সম্ভব ছিল না।
দাউদকে নিয়ে নানা সময়ে নানা খবর রটলেও কোনওটারই সত্যতা জানা যায়নি। কারণ এই সংক্রান্ত কোনও খবর নিশ্চিত করেনি কেউ। এক রাশ গোপনীয়তা আজীবন ঘিরে রেখেছে দাউদকে। অনেকের মতে, তাঁর মৃত্যুর খবর সত্য হলেও সে বিষয়ে নিশ্চিত হতে আরও অনেক সময় পেরিয়ে যাবে।