কারাগারেই বিয়ে করার পরিকল্পনা করছে ইংল্যান্ডের কুখ্যাত সিরিয়াল কিলার লেভি বেলফিল্ড । একজন মহিলা দীর্ঘ দিন ধরে তার সঙ্গে দেখা করতে আসার পর ওই মহিলাকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়ে বসে লেভি। ওই মহিলাও খুব সহজেই সেই প্রস্তাব মেনে নেন। জানান, তিনিও বিয়ে করতে রাজি।
কুখ্যাত সিরিয়াল কিলার লেভি বেলফিল্ড ১৩ বছর বয়সি মিলি ডাওলার-সহ একাধিক মহিলাকে খুন করার শাস্তিস্বরূপ যাবজ্জীবন কারাবাসে রয়েছে।
তিনটি খুনের মামলায় দোষী প্রমাণিত হওয়ার পর তাকে যাবজ্জীবন কারাবাসের সাজা শোনানো হয়। যদিও অনেকের দাবি, লেভি তিন জনের বেশি মহিলাকে খুন করেছে। কিন্তু প্রমাণ হয়েছে মাত্র তিনটি খুন।
২০০৮ সালে মার্শা ম্যাকডোনেল (১৯) এবং অ্যামেলি ডেলাগ্র্যাঞ্জ (২২)-কে খুন এবং ১৮ বছর বয়সি কেট শেডিকে খুনের চেষ্টা করার জন্য লেভিকে দোষী সাব্যস্ত করে আদালত।
পুলিশ যখন লেভিকে গ্রেফতার করে তখন তিন জন মহিলার সঙ্গে তার সম্পর্ক ছিল এবং সাতটি সন্তান ছিল। এই মহিলাদের যৌন নির্যাতন করার অভিযোগেও তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা করা হয়।
২০০২ সালে স্কুল পড়ুয়া মিলিকে খুন করার অপরাধেও তাকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়।
'হ্যামার কিলার' নামে পরিচিত এবং হাতুড়ি দিয়ে খুন করতে পারদর্শী লেভি জেলের মধ্যেই হাঁটু গেড়ে বসে নিজের প্রেমিকাকে বিয়ের প্রস্তাব দেয়।
৫৩ বছর বয়সি লেভি প্রেমিকার আঙুলে একটি আংটি পরিয়ে দেয়। এর পরই উচ্ছ্বসিত মহিলা তাঁর সেই প্রস্তাব মেনে নেন।
বর্তমানে ডারহাম কাউন্টির এইচএমপি ফ্রাঙ্কল্যান্ড জেলে সাজা কাটাচ্ছে লেভি। তবে ইতিমধ্যেই বিয়ের তোড়জোড় শুরু করেছে সে। এই নিয়ে লেভি নিজের আইনজীবীর সঙ্গে পরামর্শও শুরু করেছে।
লেভির বিয়ে করার ইচ্ছের বিরোধিতা করে সরব হয়েছেন দেশের বেশির ভাগ প্রশাসনিক কর্মকর্তা। কারামন্ত্রী ভিক্টোরিয়া অ্যাটকিন্স জানিয়েছেন, এই বিয়ে আটকাতে তিনি তাঁর সমস্ত ক্ষমতা প্রয়োগ করবেন। বিয়ে আটকাতে তিনি আধিকারিকদের সঙ্গে ইতিমধ্যেই বেশ কয়েকটি জরুরি বৈঠক সেরেছেন।
প্রাক্তন আইন সচিব রবার্ট বাকল্যান্ড এই ঘটনার তীব্র বিরোধিতা করেছেন। তিনি বলেন, ‘‘মিলি নামক যে কিশোরীকে লেভি খুন করেছে, তার বিয়ের অনেক আগেই তাকে খুন হতে হয়। মিলি নিজের বিয়ে দেখে যেতে পারেনি। তাই লেভিরও বিয়ে করার কোনও অধিকার নেই।’’
রবার্ট বলেন, ‘‘মানুষ এই বিয়ের কথা শুনে হতবাক হয়েছে। যে এই ধরনের ঘৃণ্য অপরাধে করতে সক্ষম, সে কী ভাবে কাউকে বিয়ে করতে পারে তা ভেবেই মানুষ অবাক হচ্ছেন।
‘সেন্টার ফর ক্রাইম প্রিভেনশন’-এর ডিরেক্টর ডেভিড স্পেন্সার জানান, এই বিয়ে হলে তা লিভের হাতে খুন হওয়া পরিবারগুলির প্রতি অপমান বলে গণ্য হবে।
রিচার্ড হোল্ডেন, উত্তর-পশ্চিম ডারহামের আইনসভার সদস্য মন্তব্য করেছেন যে, লেভির প্রতি তাঁর কোনও সমবেদনা নেই এবং লেভির কখনই কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়া উচিত নয়।
কনজারভেটিভ দলের পার্লামেন্ট সদস্য অ্যান্ড্রু ব্রিজেন বলেন: ‘‘লেভির কারাগারে বিয়ে করার অধিকার রয়েছে। কিন্তু সে অনেক মহিলাকে খুন করে তাঁদের বিয়ে করার স্বপ্নকে বাস্তবায়িত হতে দেয়নি।’’
জেল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, লেভির বিয়ের প্রস্তাবে সাড়া দেওয়া মহিলা একজন বছর ৪০-এর স্বর্ণকেশী। এ ছাড়া ওই মহিলার সম্পর্কে আর বিশেষ কোনও তথ্য তাঁরা জানাতে পারেননি।
সূত্রের খবর, দু’বছর আগে ওই মহিলাকে চিঠি পাঠিয়েছিলেন লেভি। তার পর থেকে প্রায়ই লেভির সঙ্গে প্রায়শই দেখা করতে আসতেন ওই মহিলা। প্রায় প্রতি সপ্তাহেই ওই মহিলা ১-২ ঘণ্টার জন্য লেভির সঙ্গে দেখা করতে আসতেন বলেও কারা সূত্র থেকে জানা গিয়েছে।
কারাগারের হলের একটি টেবিলে বসে তাঁরা পরস্পরের সঙ্গে দীর্ঘ ক্ষণ কথা বলতেন বলেও আধিকারিকরা জানিয়েছেন।
লেভি ওই মহিলাকে আংটি দিয়ে বিয়ের প্রস্তাব দেওয়ার পর ওই মহিলাও একটি আংটি দেন লেভিকে। কিন্তু লেভিকে সেই আংটি পরতে দেওয়া হয়নি। জেল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, বিয়ের অনুমতি না পাওয়া পর্যন্ত লেভিকে এই আংটি পরতে দেওয়া যাবে না।
সূত্রের খবর অনুযায়ী, জেলে থাকা অন্য বন্দিদের কাছে লেভি নিজের প্রেমিকাকে নিয়ে বড়াই শুরু করেছে। আর এর ফলে হেফাজতে থাকা বাকি বন্দিরা বিরক্ত হচ্ছেন বলেও সূত্র জানিয়েছে।