প্রতারককে গাল পেড়ে আর বলা যাবে না ‘চারশো বিশ’! রাজ কপূর বেঁচে থাকলে ছবির নামও কি বদলে ফেলতেন? কী করবেন কমল হাসন? ভারতীয় দণ্ডবিধিতে বদল হয়েছে। তার সঙ্গেই বদল হয়েছে প্রতারণার অভিযোগে দায়ের করা ৪২০ ধারা। সেই ৪২০ এখন ৩১৮।
১৮৬০ সালে তৈরি হয় ‘ইন্ডিয়ান পেনাল কোড’ (ভারতীয় দণ্ডবিধি)। তার পরিবর্তে সোমবার থেকে কার্যকর হয়েছে ‘ভারতীয় ন্যায় সংহিতা’।
পাশাপাশি, ১৮৯৮ সালের ‘ক্রিমিনাল প্রসিডিওর অ্যাক্ট’ (ফৌজদারি বিধি)-এর পরিবর্তে ‘ভারতীয় নাগরিক সুরক্ষা সংহিতা’ এবং ১৮৭২ সালের ‘ইন্ডিয়ান এভিডেন্স অ্যাক্ট’ (ভারতীয় সাক্ষ্য আইন)-এর বদলে ‘ভারতীয় সাক্ষ্য অধিনিয়ম’— মোট এই তিনটি নতুন ফৌজদারি আইন কার্যকর হয়েছে সোমবার থেকে।
সোমবার থেকে তাই বাতিল হল ৪২০ ধারা। ১৬৪ বছর পর আর থাকছে না এই ধারা।
এক্স (সাবেক টুইটার)-এ জনৈক লিখেছেন, ‘‘এ বার কি তা হলে প্রবাদেরও বদল হবে!’’ শুধু আইনের পাতায় নয়, নিত্য দিন, চলিত কথোপকথনে ব্যবহার করা হয় ‘চারশো বিশ’। সেখানেও কি বদল আসবে?
প্রবীণ আইনজীবী তথা সাংসদ মহেশ জেঠমালানি একদা বলেছিলেন, ভারতীয় দণ্ডবিধির কিছু অংশ তিনি ‘মিস্’ করবেন। তার মধ্যে অবশ্যই রয়েছে ৪২০ ধারা।
২০২৩ রাজ্যসভায় তিন ফৌজদারি সংশোধনী বিল নিয়ে বিতর্কের সময় অতীতে মহেশ বলেছিলেন, ‘‘৪২ বছর ধরে আইনের জগতে রয়েছি। কিছু পুরনো আইন অবশ্যই বাতিল করা উচিত। তার মধ্যে কিছু বিষয় আমরা মিস্ও করব। ৪২০ ধারা আমাদের মাথায় ছাপা হয়ে রয়েছে।’’
প্রতারণার অভিযোগে দায়ের হওয়া ৪২০ ধারা ভারতীয় দণ্ডবিধিতে যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ ছিল। ভারতের সংস্কৃতি, ভাষাতেও ছাপ ফেলেছে এই ৪২০।
প্রচারের মঞ্চে রাজনীতিকেরা প্রায়ই বিরোধীদের বলে থাকেন, ‘চারশো বিশ’। হাটে-বাজারে লোকজন অনায়াসে বলে থাকে ‘চারশো বিশ’।
২০২৩ সালে রাজ্যসভায় জেঠমালানি বলেছিলেন, ‘‘কখনও কখনও অভিভাবকেরা বকা দিয়ে বলেন চারশো বিশি কোরো না। এ সব বিষয়কে মিস্ করব।’’ তাঁর কথায়, ‘‘এটা বলিউডেরও অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছে। রাজ কপূরের একটি ছবির নাম ছিল শ্রী ৪২০।’’
১৯৫৫ সালে মুক্তি পেয়েছিল রাজ কপূরের সেই ছবি ‘শ্রী ৪২০’। মূল চরিত্র মুম্বইয়ে টিকে থাকার জন্য একাধিক পরিচয় দিতেন নিজের। শেষ পর্যন্ত সততার পথে ফিরেছিলেন ছবির নায়ক রাজ।
১৯৯৭ সালে মুক্তি পেয়েছিল কমল হাসনের ‘চাচি ৪২০’। রবিন উইনিয়ামসের ‘মিসেস ডাউটফায়ার’ থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে তৈরি হয়েছিল ছবিটি। ছবিতে বিবাহবিচ্ছেদের পর নায়ক কমলকে তাঁর মেয়ের সঙ্গে দেখা করতে দিতেন না স্ত্রী তব্বু। মেয়েকে দেখভালের জন্য ন্যানি সেজে যেতেন কমল। তাঁকে সকলে ডাকতেন চাচি বলে। সেই থেকেই ‘চাচি ৪২০’।
পাকিস্তানের দণ্ডবিধিতেও ‘প্রতারণা এবং অসততা’র অভিযোগে ৪২০ ধারাতেই মামলা করা হয়ে থাকে।
ব্রিটিশেরা এ দেশে শাসন শুরু করার পর ১৮৬০ সালে তৈরি করেছিল ভারতীয় দণ্ডবিধি। প্রতারণা ঠেকাতে এনেছিল ৪২০ ধারা। এ বার সেই ধারার অবলুপ্তি। প্রতারণার নতুন ধারা ৩১৮ কি ততটাই জনপ্রিয় হবে দৈনন্দিন জীবন, সংস্কৃতি, ভাষায়! রয়েছে প্রশ্ন।