Arshad Warsi

মোটা সুদের লোভে সর্বস্ব হারিয়েছেন মুন্নাভাইয়ের ‘সার্কিট’! সেবির চাপ, খুনের হুমকিতে জেরবার জীবন

শেয়ার বাজার নিয়ে বিতর্কে জড়িয়েছেন আরশাদ ওয়ারসি। সচরাচর কোনও রকম বিতর্কিত আলোচনা এড়িয়ে চলেন অভিনেতা। তবুও কয়েক বছর আগে জনতার রোষে পড়েছিলেন তিনি।

Advertisement
সংবাদ সংস্থা
মুম্বই শেষ আপডেট: ০৬ মার্চ ২০২৩ ১৫:৪২
Share:
০১ ২২

প্রায় তিন দশক ধরে শুধুমাত্র সিনেমাজগতের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন আরশাদ ওয়ারসি। বিতর্ক থেকে সব সময় নিজেকে শত হস্ত দূরে রাখার চেষ্টা করেছেন তিনি। তবুও ভারতের শেয়ার বাজারে বেআইনি লেনদেনের সঙ্গে নাম জড়িয়ে পড়ল বলি অভিনেতার। বেআইনি ভাবে শেয়ার কেনাবেচার অভিযোগে সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ বোর্ড অফ ইন্ডিয়া (সেবি) বৃহস্পতিবার ভারতের শেয়ার মার্কেট থেকে আরশাদ এবং তাঁর স্ত্রী মারিয়া গোরেত্তির উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।

০২ ২২

ভারতের একটি টেলিভিশন চ্যানেলের শেয়ার মূল্য কারচুপি করে বাড়ানো হয়েছে। সেবি সূত্রে খবর, আরশাদ এবং মারিয়াও ওই চ্যানেলের শেয়ার কেনাবেচার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। আরশাদ ২৯.৪৩ লক্ষ টাকা এবং তাঁর স্ত্রী ৩৭.৫৬ লক্ষ টাকার লাভও করেছেন এই শেয়ার কেনাবেচার মাধ্যমে।

Advertisement
০৩ ২২

২০১৬ সাল থেকে দু’টি ইউটিউব চ্যানেল থেকে শেয়ার মার্কেট সংক্রান্ত ভিডিয়ো পোস্ট করা হত। একটি টেলিভিশন চ্যানেলের মূল্য শেয়ার বাজারে বাড়তে পারে বলে ইউটিউব চ্যানেল দু’টির তরফে জানানো হয়। পরে চ্যানেলের শেয়ারের কেনাবেচা হঠাৎ বাড়তে থাকায় সেবির নজরে পড়ে যে, ওই চ্যানেল সংস্থার শেয়ার মূল্য কারচুপি করে বাড়ানো হয়েছে।

০৪ ২২

সেবি সূত্রে খবর, চ্যানেল সংস্থা বেআইনি ভাবে মোট ৪১.৮৫ কোটি টাকা উপার্জন করেছে। এর সঙ্গে ৩১ জনের নামও জড়িয়ে রয়েছে। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন আরশাদ এবং তাঁর স্ত্রী। সেবির নির্দেশানুযায়ী, আগামী ১৫ দিনের মাথায় ৪১.৮৫ কোটি ৩১ জনকে জমা করতে হবে।

০৫ ২২

শেয়ার বাজারের সঙ্গে আরশাদের নাম জড়িয়ে পড়ায় বৃহস্পতিবার তিনি টুইট করে তাঁর অনুরাগীদের কাছে অনুরোধ করে বলেছেন, ‘‘খবরে আমার ব্যাপারে যা পড়ছেন, তা দয়া করে বিশ্বাস করবেন না। শেয়ার মার্কেটের বিষয়ে আমার বা আমার স্ত্রীর জ্ঞান শূন্য। সকলের কথা শুনে এক বার শার্দায় বিনিয়োগ করেছিলাম। কিন্তু সকলের মতো আমাদের টাকাও ডুবে গিয়েছিল।’’

০৬ ২২

শেয়ার বাজার নিয়ে বিতর্কে জড়িয়েছেন আরশাদ। সচরাচর কোনও রকম বিতর্কিত আলোচনা এড়িয়ে চলেন অভিনেতা। তবুও কয়েক বছর আগে জনতার রোষে পড়েছিলেন তিনি। তাঁকে জ্যান্ত পুড়িয়ে মারার হুমকিও দিয়েছিলেন অনেকে।

০৭ ২২

২০১৬ সাল। মণীশ ঝার পরিচালনায় প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেয়েছিল ‘দ্য লিজেন্ড অফ মাইকেল মিশ্র’। এই ছবিতে মুখ্যচরিত্রে অভিনয় করেছিলেন আরশাদ। ছবিতে আরশাদের মুখে একটি সংলাপ রাখা হয়েছিল— ‘ডাকু বাল্মীকি সে সন্ত বাল্মীকি বন জায়েঙ্গে।’ যার অর্থ, ডাকাত বাল্মীকি থেকে সাধু বাল্মীকি হয়ে যাবেন।

০৮ ২২

আরশাদের মুখে বাল্মীকিকে নিয়ে সংলাপ শুনে অভিনেতার উপর ক্ষুব্ধ হয়ে পড়েন অনেকেই। তাঁদের দাবি, বাল্মীকি সম্পর্কে এমন মন্তব্য করে হিন্দু ধর্মের প্রতি আঘাত করেছেন আরশাদ। তাই আরশাদের বেঁচে থাকার অধিকার নেই বলে মনে করেন তাঁরা।

০৯ ২২

আরশাদকে ফোন করে প্রাণে মারার হুমকি দেওয়া হত। কখনও মেসেজ করে, কখনও আবার চিঠি পাঠিয়ে আরশাদকে ভয় দেখানো হত। এমনকি, তাঁর শরীর টুকরো টুকরো করে কেটে ফেলা হবে, জ্যান্ত পুড়িয়ে মারা হবে বলেও হুমকি পেয়েছেন আরশাদ।

১০ ২২

হুমকি পাওয়ার পর আরশাদ এক সাক্ষাৎকারে এই বিষয় নিয়ে সরব হন। তিনি বলেন, ‘‘যাঁরা এই সংলাপ লিখেছেন, তাঁরা বাল্মীকিকে নিয়ে যথেষ্ট পড়াশোনা করেই লিখেছেন। বাল্মীকির কাহিনি সকলে জানেন। সংলাপ থেকে শুরু করে ছবির কোনও কিছুই যদি আমার কাছে আপত্তিকর মনে হয়, তবে আমি সে কাজ করি না। নিজের কেরিয়ারে আমি সাধারণত এমন কাজ এড়িয়ে চলার চেষ্টা করি।’’

১১ ২২

তবে এই প্রথম বার নয়, এর আগেও ছবিতে অভিনয় করার জন্য হুমকি পেয়েছেন আরশাদ। ২০০৬ সালে কবির খানের পরিচালনায় প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায় ‘কাবুল এক্সপ্রেস’। এই ছবিতে জন আব্রাহামের সঙ্গে অভিনয় করেছিলেন আরশাদ। এই ছবিতে অভিনয়ের জন্য তালিবানিরা তাঁকে প্রাণনাশের হুমকি দিয়েছিলেন।

১২ ২২

১৯৬৮ সালের ১৮ এপ্রিল মুম্বইয়ের এক মুসলিম পরিবারে জন্ম আরশাদের। তাঁর বাবা বলিউডে সঙ্গীতশিল্পী হিসাবে কাজ করতেন। নাসিকের একটি বোর্ডিং স্কুলে ভর্তি কয়ারনো হয় তাঁকে। ১৪ বছর বয়সে বাবা-মাকে হারিয়ে অনাথ হয়ে পড়েন আরশাদ।

১৩ ২২

দশম শ্রেণির পর আর নিজের পড়াশোনা চালিয়ে নিয়ে যেতে পারেননি আরশাদ। স্কুল ছেড়ে দেওয়ার পর মুম্বইয়ে রোজগারের পথ খুঁজতে শুরু করেন তিনি। ১৭ বছর বয়স থেকে বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে প্রসাধন সামগ্রী বিক্রি করতেন তিনি।

১৪ ২২

এমনকি, একটি ফোটো-ল্যাবেও কিছু দিন কাজ করেছেন আরশাদ। ধীরে ধীরে নাচের প্রতি আগ্রহ জন্মায় তাঁর। মুম্বইয়ের একটি নাচের দলে যোগ দেন তিনি। সেখান থেকে হিন্দি ছবিতে কাজ করার সুযোগও পেয়ে যান তিনি। ‘ঠিকানা’ এবং ‘কাশ’ ছবিতে কোরিয়োগ্রাফির দায়িত্বে ছিলেন আরশাদ।

১৫ ২২

নাচের বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করতেন আরশাদ। ১৯৯১ সালে একটি প্রতিযোগিতায় জেতার পর ২১ বছর বয়সে তিনি নিজের ‘ডান্স স্টুডিয়ো’ খোলেন। তাঁর স্টুডিয়োতেই প্রথম দেখা হয় মারিয়ার সঙ্গে। কলেজ পড়ুয়া মারিয়া তখন আরশাদের নাচের দলের সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন।

১৬ ২২

১৯৯৩ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘রূপ কি রানি চোরোঁ কা রাজা’ ছবিতে মূল কোরিয়োগ্রাফার ছিলেন আরশাদ। সেই সময় তাঁর আলাপ হয় জয়া বচ্চনের সঙ্গে। আরশাদের প্রতিভা দেখে জয়া মুগ্ধ হন এবং তাঁকে একটি ছবিতে অভিনয়ের সুযোগ দেন।

১৭ ২২

১৯৯৬ সালে অমিতাভ বচ্চনের প্রযোজনা সংস্থার তরফে মুক্তি পায় ‘তেরে মেরে সপনে’। এই ছবিতেই প্রথম অভিনয় করেছিলেন আরশাদ। মুক্তির পর তাঁর অভিনয় দেখে বলিপাড়ার অধিকাংশ আরশাদের অভিনয়ের প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়ে পড়ে। তার পর ‘বেতাবি’, ‘হোগি প্যার কি জিত’, ‘হিরো হিন্দুস্তানি’, ‘ত্রিশক্তি’র মতো বহু হিন্দি ছবিতে অভিনয় করতে দেখা গিয়েছে আরশাদকে।

১৮ ২২

কিন্তু কেরিয়ারের ঝুলিতে ছবির সংখ্যা বাড়লেও সাফল্যের স্বাদ পাচ্ছিলেন না আরশাদ। শেষ পর্যন্ত রাজকুমার হিরানীর ‘মুন্নাভাই এমবিবিএস’ ছবিতে সার্কিট চরিত্রটি তাঁর জীবনে মাইলফলক গড়ে দেয়। মুন্নাভাই এবং সার্কিটের জুটি নিয়ে তখন দর্শকমহলে মাতামাতি। আরশাদ ইতিমধ্যেই বলিপাড়ায় পরিচিত মুখ হয়ে গিয়েছিলেন।

১৯ ২২

১৯৯৯ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি মারিয়াকে বিয়ে করেন আরশাদ। ২০০৪ সালে পুত্রসন্তানের জন্ম দেন মারিয়া। তার তিন বছর পর কন্যাসন্তান কোলে আসে মারিয়ার। আরশাদের স্ত্রী এবং পুত্রকে ‘সালাম নমস্তে’ ছবিতে অতিথিশিল্পী হিসাবে অভিনয় করতে দেখা গিয়েছে।

২০ ২২

‘হলচল’, ‘কুছ মিঠা হো যায়ে’, ‘ম্যায়নে প্যার কিঁউ কিয়া’, ‘সালাম নমস্তে’, ‘গোলমাল’, ‘ধামাল’ ছবিতে অভিনয় করেছিলেন আরশাদ। সার্কিট চরিত্রে তাঁকে কৌতুকাভিনেতা হিসাবে পছন্দ করেছিলেন সকলে। তাই এর পর অধিকাংশ ক্ষেত্রে কমেডি ঘরানার ছবিতেই অভিনয়ের প্রস্তাব পেয়েছিলেন তিনি।

২১ ২২

কিন্তু আরশাদ যে উঁচু দরের অভিনেতা, তার প্রমাণ পাওয়া যায় ‘কাবুল এক্সপ্রেস’, ‘ইশকিয়াঁ’, ‘জলি এলএলবি’ ছবিতে তাঁর অভিনয় দেখে। বড় পর্দার পাশাপাশি ছোট পর্দাতেও কাজ করেছিলেন তিনি। ২০০৩ সালে করিশ্মা কপূরের সঙ্গে ‘করিশ্মা- দ্য মিরাকলস অফ ডেস্টিনি’ ধারাবাহিকে অভিনয় করেছেন আরশাদ।

২২ ২২

এ ছাড়াও বিভিন্ন রিয়্যালিটি শো থেকে শুরু করে পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে সঞ্চালনার দায়িত্বে ছিলেন আরশাদ। ২০২২ সালের ১৮ মার্চ প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায় ফারহাদ সামজির পরিচালনায় মুক্তি পায় ‘বচ্চন পান্ডে’ ছবিটি। এই ছবিতে অক্ষয় কুমার, কৃতি শ্যানন, জ্যাকলিন ফার্নান্ডেজের সঙ্গে অভিনয় করতে দেখা গিয়েছিল আরশাদকে। এখনও পর্যন্ত সেটিই আরশাদের সর্বশেষ ছবি। চলতি বছরে সঞ্জয় দত্তের সঙ্গে একটি ছবিতে অভিনয় করবেন বলে জানিয়েছেন তিনি।

সকল ছবি সংগৃহীত

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
আরও গ্যালারি
Advertisement