ফ্রান্স সফরে গিয়ে যে প্রাসাদে উঠেছেন সৌদির যুবরাজ মহম্মদ বিন সলমন, সেটিই নাকি বিশ্বের সবচেয়ে দামি বাড়ি। এক কালে এমনই দাবি করেছিল ‘ফোর্বস’ পত্রিকা।
আমেরিকার ওই পত্রিকার দাবি কতটা সত্যি, তা যাচাই করা যায়নি। তবে সৌদির যুবরাজের মালিকানাধীন ওই ‘বাড়ি’টির সঙ্গে নিহত সাংবাদিক জামাল খাশোগির ক্ষীণ যোগসূত্র মিলেছে।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাকরঁর সঙ্গে তাঁর বাসভবন এলিজি প্যালেসে বৈঠক করেন সৌদির যুবরাজ।
বস্তুত, ইউক্রেন-যুদ্ধের আবহে রাশিয়ার বিকল্প জ্বালানি সরবরাহকারী হিসাবে পশ্চিমী দেশগুলির কাছে এই মুহূর্তে সৌদির গুরুত্ব যথেষ্ট। ফলে বৃহস্পতিবারের বৈঠক ঘিরে উৎসাহের অন্ত ছিল না পশ্চিমী সংবাদমাধ্যমগুলির। ওই বৈঠকের পাশাপাশি যুবরাজের প্রাসাদ ঘিরেও কম কৌতূহল নেই তাদের।
প্যারিস থেকে দূরে ল্যুভসিয়েন্স নামে একটি কমিউনে ওই প্রাসাদটি সৌদি যুবরাজের। ২০১৫ সালে সেটি কিনেছিলেন তিনি। ঘটনাচক্রে, তার কয়েক বছর পরই যুবরাজের বিরুদ্ধে সৌদির সাংবাদিক জামাল খাশোগিকে হত্যায় জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছিল।
২০১৮ সালের অক্টোবরে তুরস্কের ইস্তানবুলের সৌদি দূতাবাসে ঢোকার পর থেকে খাশোগির খোঁজ পাওয়া যায়নি। অভিযোগ, দূতাবাসেই তাঁকে খুন করে দেহ লোপাট করে দেওয়া হয়।
খাশোগি ছিলেন সৌদি সরকারের কট্টর সমালোচক। আমেরিকার প্রথম সারির একটি দৈনিকের দাবি, সৌদির যুবরাজের নির্দেশেই খাশোগিকে খুন করা হয়েছিল। একই দাবি করেছেন আমেরিকার গোয়েন্দারাও।
সে দাবি ঘিরে শোরগোল পড়ে গেলেও সৌদির যুবরাজের বিরুদ্ধে খুনে জড়িত থাকার অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি। কূটনীতিকদের একাংশের দাবি, সৌদির সঙ্গে আমেরিকার বাণিজ্যিক ও কৌশলগত সুসম্পর্কের জেরেই এ নিয়ে বিশেষ উচ্চবাচ্য করেনি তৎকালীন ডোনাল্ড ট্রাম্প সরকার।
কাকতালীয় ভাবে, ২০০৯ সালে ‘চতুর্দশ লুই’ নামে ওই প্রাসাদটির নির্মাতা ছিলেন খাশোগির তুতো ভাই ইমাদ খাশোগি। ফ্রান্সে অভিজাত নির্মাণকাজের ব্যবসা রয়েছে তাঁর।
ফ্রান্সের রাজপরিবারের সদস্যদের এক কালের বাসভবন ভার্সেই প্যালেসের অনুকরণেই নাকি চতুর্দশ লুই শ্যাতো বা দুর্গটি গড়ে তোলা হয়েছিল। পরে সেটি কিনে নেন সৌদির যুবরাজ।
ল্যুভসিয়েন্সে ৭,০০০ বর্গমিটারের ওই সম্পত্তিটি সৌদির যুবরাজ কার কাছ থেকে কিনেছিলেন, সেটি আজও অজানা।
বিলাসবহুল ওই প্রাসাদটির জন্য নাকি ৩০ কোটি ডলার (ভারতীয় মুদ্রায় ২৩৭,৬৮,২৫,০০০ টাকা) খরচ করেছিলেন তিনি। ২০১৫ সালে সেটিকে সবচেয়ে দামি বাড়ির তকমা দিয়েছিল ফোর্বস।
যুবরাজের ওই প্রাসাদের অন্দরে বিলাসের যাবতীয় উপকরণই মজুত রয়েছে। নাইটক্লাব, সিনেমা হল, স্কোয়াশ কোর্ট, সুইমিং পুল, সোনার পাতায় মোড়া কৃত্রিম ঝর্না— কী নেই!
ভূগর্ভস্থ একটি অ্যাকারিয়ামের ধাঁচে গড়া চামড়ার সোফায় মোড়া একটি কাচের চেম্বারও রয়েছে প্রাসাদে। এ ছাড়া, তাতে দামি সুরা রাখার এলাহি বন্দোবস্তও করেছেন যুবরাজ। তাতে ৩,০০০ সুরার বোতল রাখা যায়।
যুবরাজের ৫৭ একরের ওই দুর্গের ভিতরে বসবাসের জায়গা নাকি প্রায় ৫৪ হাজার বর্গফুট। প্রাসাদের দরজাগুলি প্রতিটিই সোনায় মোড়া। গোটা প্রাসাদ জুড়েই নাকি বহুমূল্য শিল্পকর্ম ছড়িয়ে রয়েছে।