Satyajit Ray

Satyajit Ray’s playback singer: মেওয়ালালকে খুন করলেন বিঠ্‌ঠনবাঈ! কোন অতীত ফাঁস করলেন সত্যজিতের ছবির কণ্ঠশিল্পী

সত্যজিৎ রায়ের জন্মদিন সোমবার, ২ মে। তাঁর দু’টি ছবিতে নেপথ্য শিল্পী রেবা মুহুরী। যাঁর লেখা ‘বিঠ্‌ঠনবাঈ’-এ উঠে এসেছে এক রোমহর্ষক কাহিনি।

Advertisement
নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ০১ মে ২০২২ ১৫:৪৭
Share:
০১ ৩৪

সত্যজিৎ রায়ের জন্মদিন সোমবার, ২ মে। তাঁর দু’টি ছবিতে নেপথ্য শিল্পী রেবা মুহুরী। যাঁর রচনা ‘বিঠ্‌ঠনবাঈ: গায়িকাদের জীবন-গল্প’-এ উঠে এসেছে এক রোমহর্ষক কাহিনি। সেই গল্পে যাব। তার আগে রেবা মুহুরী সম্পর্কে কিছু তথ্যে চোখ বুলিয়ে নেওয়া যাক।

০২ ৩৪

সত্যজিতের ‘শতরঞ্জ কে খিলাড়ি’-তে প্রথম প্লে-ব্যাক শিল্পী হিসাবে গান করেন রেবা।

ছবি: সংগৃহীত

Advertisement
০৩ ৩৪

এর পর ‘জয় বাবা ফেলুনাথ’। সেখানেও সত্যজিৎ বেছে নেন রেবাকেই। বেনারসের পটভূমিতে তৈরি ছবিতে রেবার গান বাড়তি মাত্রা সংযোজন করেছিল।

ছবি: সংগৃহীত

০৪ ৩৪

প্রথমে ‘শতরঞ্জ কে খিলাড়ি’-র ঠুংরি ও দাদরা এবং তার পর ‘জয়বাবা ফেলুনাথ’-এ মছলিবাবার ভজন রেবাকে রাতারাতি জনপ্রিয় করে তোলে।

ছবি: সংগৃহীত

০৫ ৩৪

রেবার বাবা ছিলেন চিকিৎসক তথা সঙ্গীততত্ত্ববিদ অমিয়নাথ সান্যাল। কৃষ্ণনগরের বাসিন্দা। রবীন্দ্রনাথের স্নেহধন্য।

০৬ ৩৪

বিয়ের আগে বাবার কাছে গান শিখেছেন। সে সময় দেশের প্রায় সব বড় শিল্পীর সঙ্গে অমিয়নাথের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ ছিল। দেশের তাবড় শিল্পীদের সান্নিধ্য, সঙ্গীত শিক্ষা এবং পাণ্ডিত্য তাঁকে ঋদ্ধ করেছিল।

০৭ ৩৪

ছোট থেকে বাইজিদের জীবন নিয়ে কৌতূহল ছিল রেবার। এক বার বাবাকে বলেন, ‘‘তুমি তো বাইজিদের থেকে অনেক গান শিখেছ, মেলামেশা করেছ। তাঁরা কি আমাদের মতো মানুষ নন? লোকে তাঁদের এত ঘৃণা করে কেন?’’

ছবি: সংগৃহীত

০৮ ৩৪

মেয়ের প্রশ্ন শুনে চিন্তায় পড়লেন প্রৌঢ় অমিয়নাথ৷ কিছু ক্ষণ ভেবে বললেন, ‘‘একটা সত্যি কথা শোনো৷ এই যে এত বড় বড় সব বাইজি, যাঁদের লোকে ঘৃণা করেন, আমার কাছে এঁরা এক এক জন গান্ধর্বী৷ আমাদের দুর্ভাগ্য যে গান্ধর্বীর সম্মান তাঁদের আমরা দিতে পারিনি৷’’ বাইজিজীবন নিয়ে সেই সুপ্ত অন্বেষা রয়েই গেল।

ছবি: সংগৃহীত

০৯ ৩৪

রেবা মুহুরীর জন্মের প্রায় ন’বছর পর শুরু হয় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ৷ চারদিকের পরিবেশ দ্রুত বদল হতে থাকে সে সময়।

ছবি: সংগৃহীত

১০ ৩৪

১৯৪১ সালের ৭ ডিসেম্বর পার্ল হারবার আক্রমণ করে জাপান৷ কিছু দিনের মধ্যে বর্মা (অধুনা মায়ানমার) আক্রমণ করে তারা৷ ১৯৪১ থেকে ’৪৫ সাল পর্যন্ত বর্মার বিভিন্ন প্রান্তে মিত্রশক্তির সঙ্গে মারাত্মক লড়াই চলে জাপানি সেনার।

ছবি: সংগৃহীত

১১ ৩৪

জাপানের হাত থেকে মান্দালয় উদ্ধারের সময় চরমে পৌঁছয় যুদ্ধ৷ সাহসী ১০ নম্বর গোর্খা রাইফেলসকে অনেক জায়গায় কুকরি নিয়ে লড়তে হয় বলেও শোনা যায়৷

ছবি: সংগৃহীত

১২ ৩৪

মান্দালয় যুদ্ধের দুঃসহ স্মৃতি তখনও টাটকা ব্রিটিশ ফৌজের ক্যাপ্টেন ডক্টর সন্তোষকুমার মুহুরীর৷ যুদ্ধ শেষে জিতেন্দ্রনাথ মুহুরীর ছেলে ফেরেন আদি বাড়ি শান্তিপুরের শ্যামবাজার পাড়ায়৷ দুই পরিবারের এক আত্মীয় মারফৎ সন্তোষবাবুর কথা অমিয়নাথের কানে পৌঁছয়৷ সে সময় দ্বিতীয় সন্তানের জন্য পাত্র খুঁজছেন সান্যালমশাই৷ ১৯৪৬ সালের বৈশাখে বিয়ে৷

১৩ ৩৪

অতঃপর, দেশ স্বাধীন হলে ভারতীয় সেনাবাহিনীতে যোগ দেন সন্তোষ। দেশের বিভিন্ন স্থানে বদলি হতে থাকেন তিনি। তাঁর সঙ্গে যেতে হয় রেবাকেও। কালক্রমে তিন সন্তানের জন্ম, স্বামীর বারংবার বদলির ফলে ছোট থেকে যে ভাবে গানের চর্চা করেছেন, তা বিঘ্নিত হতে থাকে।

১৪ ৩৪

থিয়েটার রোডের বাড়িতে রেবার গান শুনেছিলেন সত্যজিৎ রায়৷ ‘শতরঞ্জ কে খিলাড়ি’ পরিচালনার সময় সত্যজিৎ খোঁজে ছিলেন এমন এক শিল্পীর, যাঁর গানের ধরন ওঁর ছবিতে দেখানো সময়ের সঙ্গে খাপ খাবে৷ সত্যজিতের বন্ধু কুমারপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় ওঁকে রেবার কথা বলেন৷

১৫ ৩৪

ছবিতে সত্যজিৎ যে সময়টা ধরতে চেয়েছিলেন, সেই সময়ের মতো করে গানটা গাওয়ার দরকার ছিল৷ পুরনো বাইজিদের মতো কণ্ঠের খোঁজে ছিলেন তিনি৷ রেবার গান প্রথমবারেই সত্যজিতের পছন্দ হয়৷ তার অন্যতম কারণ অবশ্য ছিল, রেবা খোলা গলায় গান করতেন৷ বাইজিদের মতো তাঁর ওজনদার গলা৷

ছবি: সংগৃহীত

১৬ ৩৪

শতরঞ্জের শুটিং শুরু হয় ৬ ডিসেম্বর ’৭৬ সালে৷ রেবার গলায় ‘বাজায়ে বাঁশুরিয়া শ্যাম, যমুনা কিনারে’ এবং ‘ছবি দিখ লা যা, বাঁকে সাবরিয়া’ গান দু’টি জাতীয় স্তরে শিল্পী হিসেবে তাঁকে পৃথক আসনে অধিষ্ঠিত করে৷

ছবি: সংগৃহীত

১৭ ৩৪

ঠিক দু’বছর পর, অর্থাৎ ১৯৭৯ সালে বারাণসীর পটভূমিতে ‘জয়বাবা ফেলুনাথ’৷ যেখানে রেবা ছাড়া আর কারও কথা ভাবা সম্ভব ছিল না৷ প্রথম গানের দৃশ্যায়নটা মনে করা যেতে পারে৷ ফেলুদা, তোপসে, আর জটায়ু গঙ্গার পাড়ে মছলিবাবা দর্শনে৷ দূর থেকে জোছনার আলোর মতো ভেসে আসছে মীরার ভজন ‘মোহে লাগি লগন গুরু চরণ কি’৷

ছবি: সংগৃহীত

১৮ ৩৪

এই ছবির আরও দুটো ভজন ‘হে গোবিন্দ রাখু শরণ’ ও ‘পাগ ঘুঙ্ঘরু বাঁধ, মীরা নাচি রে’৷

ছবি: সংগৃহীত

১৯ ৩৪

সত্যজিতের ছবিতে পরের পর গানের সুযোগ আসায় নিজের ঘনিষ্ঠ আত্মীয়ের সঙ্গে কিছু ভুল বোঝাবুঝি হয়৷ কেউ কেউ নাকি বলতে শুরু করেন, অসামান্য সুন্দরী রেবা তাঁর রূপের গুণে কদর পাচ্ছেন৷ যদিও তিনি নিজে এ সবে বিচলিত হননি৷

২০ ৩৪

সত্যজিৎ এবং বিজয়া রায়ের সঙ্গে মুহুরী পরিবারের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ ছিল৷ অনুষ্ঠান থাকলে রেবা ওঁদের আমন্ত্রণ জানাতেন৷ সত্যজিৎও সময়-সুযোগ পেলে নিমন্ত্রণ গ্রহণ করতেন৷ দুই পরিবারের মধ্যে শ্রদ্ধার সম্পর্ক ছিল৷

২১ ৩৪

গানের পাশাপাশি লেখালিখিও করতেন। তাঁর একটি বই ‘ঠুম্‌রি ও বাইজী’। সেই বইয়ের পর আরও একটি লেখায় হাত দেন। সেই বইটিই ‘বিঠ্‌ঠনবাঈ’।

২২ ৩৪

বিঠ্‌ঠনের জীবনের গল্পই বলেছেন রেবা। বিঠ্‌ঠনের আসল নাম দুর্গা। রাজপুত পরিবারে জন্ম বিঠ্‌ঠনের। ধুমধাম করে বিয়ে হয় তাঁর।

২৩ ৩৪

বিয়ের পর দিন পালকি করে যাওয়ার সময় তাঁকে অপহরণ করা হয়। অতঃপর, তাঁকে পাচার করা হয় এক বাইজিবাড়িতে।

২৪ ৩৪

বিঠ্‌ঠনের দেখাশোনার ভার পড়ে এক মাসির উপর। সেখানেই বিঠ্‌ঠন জানতে পারেন, তাঁর বাবার সঙ্গে পুরনো শত্রুতার জেরে তাঁকে অপহরণ করা হয়। অপহরণ করেন মেওয়ালাল নামে এক ব্যক্তি। রাখা হয়েছে বাইজিবাড়িতে।

২৫ ৩৪

এর পর ধীরে ধীরে গ্রামের সাধারণ মেয়ে দুর্গা হয়ে উঠলেন বিঠ্‌ঠনবাই। সেই যাত্রাপথও মোটেই মসৃণ ছিল না। একাধিক প্রতিবন্ধকতা এবং লাঞ্ছনার মুখোমুখি হয়ে নিজের জায়গা করতে হয় তাঁকে। যে কাহিনির পরতে পরতে রহস্য এবং লড়াইয়ের কাহিনি।

২৬ ৩৪

কিছু দিনের মধ্যেই বিঠ্‌ঠন হয়ে উঠলেন নামকরা বাইজি। তাঁর ডাক পড়তে লাগল দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। সারেঙ্গিবাদক মেহরের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক।

২৭ ৩৪

পটনার ধনপতলালের বাড়িতে বিয়ে। সেই বিয়েতে তাঁর দল নিয়ে যাচ্ছেন বিঠ্‌ঠন। ট্রেনে সেই প্রথম চড়লেন তিনি।

২৮ ৩৪

গাড়িতে রয়েছেন মেওয়ালালও। ট্রেনে উঠেই বোতল খুলে নেশা করতে শুরু করেন তিনি। ধীরে ধীরে মত্ত হয়ে যান। মেওয়ালাল নেশার ঘোরে বিঠ্‌ঠনের এক বান্ধবী আতুরকে জড়িয়ে ধরলেন।

২৯ ৩৪

তখনই বিঠ্‌ঠন, আতুর এবং আরও এক বান্ধবী তাঁকে ট্রেন থেকে ধাক্কা মেরে ফেলে দেন।

৩০ ৩৪

তার পর কী হল? বিঠ্‌ঠনের আসল পরিচয় কী, মেহেরের সঙ্গে কি তাঁর বিয়ে হবে, শেষ জীবন কী ভাবে কাটবে বিঠ্‌ঠনের— এ সব নিয়েই আবর্তিত হয় রেবা মুহুরির আখ্যান। যে আখ্যানের শেষেও রয়েছে চমক।

৩১ ৩৪

সত্যজিতের ছবির নেপথ্য শিল্পীর কলমে উঠে এসেছে বাইজিদের অন্দরমহলের ছবি। নিজে দেশের একাধিক বাইজি মহল্লায় ঘুরে যা দেখেছেন, তা-ই তুলে ধরেছেন রেবা।

৩২ ৩৪

রেবার গাওয়া গানের সংখ্যা খুব কম। লেখার সংখ্যাও। তবে পরিমাণে স্বল্প হলেও রেবার কাজ স্মরণে রাখার মতো।

৩৩ ৩৪

৮১ বছরের রেবার জীবন স্তব্ধ হয়েছিল ১৩ মার্চ ২০১১ সালে৷ কলকাতার লেক গার্ডেন্সে মেজো ছেলের বাড়িতে।

৩৪ ৩৪

ঋণ: ঠুম্‌রি ও বাঈজী, রেবা মুহুরী, প্রতিভাস৷ বিঠ্‌ঠনবাঈ: গায়িকাদের জীবন-গল্প, দে’জ, স্মৃতির অতলে, অমিয়নাথ সান্যাল, জিজ্ঞাসা পাবলিকেশনস, মানিক অ্যান্ড আই: মাই লাইফ উইথ সত্যজিৎ রায়, বিজয়া রায়, পেঙ্গুইন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
আরও গ্যালারি
Advertisement