কৌতুকাভিনেতা সতীশ শাহ কি আজকাল মুখ ব্যাজার করে বসে রয়েছেন? হবেও বা! নেটমাধ্যম থেকে তাঁর দিকে যা সব প্রশ্নবাণ ধেয়ে আসছে! মুখ ব্যাজার হওয়ারই কথা।
বড় সাধ করে জাতীয় পতাকা হাতে একটি ছবি পোস্ট করেছিলেন সতীশ। ‘দোষ’ বলতে এটুকুই! তার পর থেকেই সে নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। কী ছিল সেই পোস্টে?
৯ অগস্ট ‘ভারত ছাড়ো’ আন্দোলনের ৮০তম বার্ষিকী উদ্যাপনে দেশ জুড়ে নানা অনুষ্ঠান হয়েছে। অনেকেই নেটমাধ্যমে তা নিয়ে ছবি পোস্ট করেছেন। মন্তব্যের বন্যাও বইয়ে দিয়েছেন। সে দিনটি স্মরণ করে সতীশও একটি ছবি টুইট করেছিলেন।
টুইটারে ওই ছবিতে দেখা গিয়েছে, জাতীয় পতাকা মেলে ধরে হাসিমুখে দাঁড়িয়ে প্রবীণ সতীশ। সঙ্গে লেখা, ‘এই সেই আদি অকৃত্রিম তেরঙ্গাধ্বজা যা ১৯৪২ সালের ভারত ছাড়ো আন্দোলনের সময় পেয়েছিলেন আমার মা!’ ব্যস! তার পর থেকেই সতীশের দিকে একের পর এক তির ছোড়া শুরু হয়।
ওই পতাকাটি ’৪২-এর আন্দোলনের সময়কার হল কী ভাবে? পতাকার মাঝে তো অশোকচক্র রয়েছে। ’৪২-এর সময়কালে দেশে এমন পতাকা ছিল নাকি? লোকজন প্রশ্ন তুলেছেন সতীশের দাবির সত্যতা নিয়ে।
ছোট, বড় সব পর্দাতেই অনায়াসে লোক হাসাতে জুড়ি নেই সতীশের। তবে ৯ অগস্টের পর তাঁর কি মুখ ব্যাজার হয়ে গিয়েছে? অনেকেই এমন ভাবতে শুরু করেছেন।
নেটমাধ্যমে সতীশের ওই ছবিটি মনে ধরেছে অনেকেরই। ওই টুইটটি নিজেদের মধ্যে চালাচালি করেছেন সাড়ে ছ’হাজার জন। সঙ্গে ভেসে উঠেছে নানা জনের নানা প্রশ্ন এবং মন্তব্য।
সতীশের টুইট দেখার পর ব্যঙ্গের সুরে এক জনের মন্তব্য, ‘আপনার মাকে অশ্রদ্ধা করছি না। তবে আপনার মা কি এখনকার সময় থেকে পিছিয়ে ১৯৪৭-এ চলে গিয়েছিলেন আর ’৪২-এর ভারত ছাড়ো আন্দোলনের জন্য এই পতাকাটা নিয়ে এসেছেন?’
প্রসঙ্গত, ব্রিটিশ শাসকদের হাত থেকে দেশ স্বাধীন হওয়ার মাসখানেক আগে ১৯৪৭ সালের ২২ জুলাই গণপরিষদ জাতীয় পতাকা গ্রহণ করেছিল। তবে ’৪২-এর ভারত ছাড়ো আন্দোলনের সময় যে পতাকাটি দেখা যেত, সেই তেরঙ্গার মাঝে অশোকচক্রের বদলে চরকা আঁকা ছিল।
সতীশকে সে তথ্য মনে করিয়ে দিয়েছেন অনেকে। তাঁর টুইটের নীচে লিখেছেন, ‘এই পতাকাটি তো ১৯৪৭ সালে গৃহীত হয়েছিল! ১৯৪২ সালের পতাকায় একটি চরকা বসানো ছিল।’
নেটমাধ্যমে সতীশকে উদ্দেশ করে আর এক জন লিখেছেন, ‘জাতীয় কংগ্রেসের জন্য একটি পতাকার নকশা তৈরি করেছিলেন শ্রীপিঙ্গলি বেঙ্কাইয়া। তাতে গাঁধীর ঘুরন্ত চরকা ছিল। জুলাইয়ে গণপরিষদের অধিবেশনে বিআর অম্বেডকরের দাবি মেনে সেই পতাকার বদলে অশোকচক্র সম্বলিত পতাকা গৃহীত হয়।’
প্রশ্নবাণ বা ইতিহাস সম্পর্কিত তথ্যের পাশাপাশি অনেকে আবার সতীশকে ব্যঙ্গ করতে ছাড়েননি। এক জনের সরস পর্যবেক্ষণ, ‘আমি বলছি না যে তিনি (সতীশ) মিথ্যে বলছেন। তবে ১৯৪৭ সালের পতাকার রংটা বেশ চকচকে লাগছে না! তা ছাড়া, ওই পতাকার মাঝখানে একটা চরকা ছিল না?’
‘জানে ভি দো ইয়ারো’, ‘ম্যায় হুঁ না’, ‘কল হো না হো’, ‘ফনা’, ‘ওম শান্তি ওম’— সতীশের কেরিয়ারে উজ্জ্বল মুহূর্ত তৈরি করেছে এ সব ছবি।
সিনেমার পাশাপাশি টেলিভিশনেও কৌতুকাভিনেতা হিসাবে দাপিয়ে বেড়িয়েছেন সতীশ। ‘ইয়ে জো হ্যায় জিন্দেগি’ বা ‘সারাভাই ভার্সাস সারাভাই’-এর মতো ধারাবাহিকে আজও সতীশকে মনে রেখেছেন অনেকে। সেই অভিনেতা যে সাধারণ মানুষকে বোকা বানাচ্ছেন, এমন অভিযোগও তুলেছেন এক জন। তিনি লিখেছেন, ‘খ্যাতনামী মানুষজন কী ভাবেই না সাদাসিধে ভারতীয়দের জাতীয়তাবাদের নামে বোকা বানান!’