নায়ক হিসেবে বলিউডে অভিষেকের আগে একটি রোগাপাতলা ছেলেকে বডি বিল্ডিংয়ের নানা টিপ্স দিয়েছিলেন সলমন খান। সে সময় অনেকেই ওই ছেলেটিকে চিনতেন অভিনেতা তথা প্রযোজক-পরিচালক রাকেশ রোশনের পুত্র বলে।
তবে ২০০০ সালে ওই রোগাপাতলা ছেলেটির ফিল্ম ‘কহো না প্যায়ার হ্যায়’ মুক্তির পর থেকে সে ছবি প্রায় উল্টে গিয়েছিল। রাকেশকেই লোকজন ‘হৃতিক রোশনের বাবা’ বলে পরিচয় দিতে শুরু করেন।
‘কহো না প্যায়ার হ্যায়’ মুক্তির পর রাতারাতি তারকা হয়ে উঠেছিলেন হৃতিক। শাহরুখ, আমির এবং সলমন— বলিউডের তিন খানের রাজত্বেও থাবা বসিয়েছিলেন তিনি। এর আঁচ নাকি পড়েছিল হৃতিক এবং সলমনের বন্ধুত্বেও। অন্তত বলিউডের অন্দরে তেমনই জল্পনা।
২০০০ সালের আগে থেকেই সলমনের সঙ্গে বন্ধুত্ব হৃতিকের। ফিল্মিপাড়ায় বেড়ে ওঠা সলমন এবং হৃতিকের মধ্যে বন্ধুত্বের চেয়েও খানিকটা গুরু-শিষ্যের সম্পর্ক ছিল। বলিউডের অন্দরের অনেকেই এ কথা বলেন।
তবে যে হৃতিককে প্রায় হাতে ধরে দেহসৌষ্ঠব তৈরির খুঁটিনাটি শিখিয়েছিলেন, তাঁকেই কিনা অপমান করে বসলেন সলমন!
‘কহো না... ’ মুক্তির পর প্রায় দশ বছর টিকেছিল হৃতিক-সলমনের বন্ধুত্ব। তার পরই ছন্দপতন! ২০১০ সালে মুক্তি পেয়েছিল সঞ্জয় লীলা ভন্সালীর ‘গুজারিশ’। সমালোচকদের প্রশংসা কুড়োলেও তা বক্স অফিসে মুখ থুবড়ে পড়েছিল।
নায়িকা ঐশ্বর্যা রাই। নায়ক হৃতিক রোশন। এমন মুখরোচক ‘কাস্টিং’-ও বাঁচাতে পারেনি ভন্সালীর ‘গুজারিশ’-কে। সেই ফিল্ম নিয়েই সলমন-হৃতিকের মধ্যে ‘তু তু ম্যায় ম্যায়’ শুরু হয়েছিল।
ভন্সালীর ‘গুজারিশ’-এ এক জাদুকরের ভূমিকায় দেখা গিয়েছিল হৃতিককে। তবে দুর্ঘটনায় তাঁর হাত-পা অসাড়। ১৪ বছর ধরে হুইলচেয়ারেই দিন কাটছে। এমনকি, একটি মাছি তাঁর নাকে এসে বসলে তা তাড়াতেও পারেন না। শরীরের সেই অবস্থাতেই রে়ডিয়ো জকি জাদুকর। সেই ইথান মাসকারেনহাসের পরিচর্যার ভার নার্স সোফিয়া ডি’সুজার উপর। ১২ বছর ধরে ইথানের ‘সঙ্গী’ বলতে একমাত্র সোফিয়া।
রেডিয়োর শোয়ে আশার কথা শোনান ইথান। তবে নিজের দুর্ঘটনার ১৪ তম বার্ষিকীতে স্বেচ্ছামৃত্যুর সিদ্ধান্ত নেন। এর পর ফিল্মে নানা নাটকীয় ঘাত-প্রতিঘাত। ফিল্মের সোফিয়া-ইথানের চরিত্র ঐশ্বর্যা-হৃতিককে প্রশংসা ভরিয়ে দিয়েছিলেন সমালোচকেরা। তবে ততটা সহৃদয় হননি দর্শক।
‘গুজারিশ’ মুখ থুবড়ে পড়ায় তা নিয়ে হৃতিককে খোঁচা দিতে ছাড়েননি সলমন। সাক্ষাৎকারে চাঁছাছোলা ভাবে বলেন, ‘‘আরে! ওই ফিল্মে তো মাছি উড়ে বেড়াচ্ছিল। কিন্তু কোনও মশাও তা দেখতে যায়নি। এমনকি, কোনও কুকুরও দেখেনি।’’
সলমনের ওই কটূক্তি নিয়ে ফিল্মি দুনিয়ায় শোরগোল পড়তে দেরি হয়নি। চুপ ছিলেন না হৃতিকও। তবে সলমনের মন্তব্যের জবাবে শালীনতা বজায় রেখেছিলেন হৃতিক।
হৃতিকের জবাব ছিল, ‘‘সলমন খানকে সব সময় ভাল মানুষ হিসেবেই চিনি। যাঁর থেকে অনুপ্রেরণা পেয়েছি, যাঁকে তারিফ করেছি। এখনও করি। উনি সব সময়েই আমার হিরো। তা-ই থাকবেন। তবে হ্যাঁ, এক জন পরিচালক বক্স অফিসে তোমার ফিল্মের মতো টাকা না কামালেই তাঁর কাজ নিয়ে তাঁকে হেয় করব, হাসিঠাট্টা করব, এটা খুব একটা নায়কোচিত নয়। ‘গুজারিশ’ নিজের মতো করে চূড়ান্ত সফল। এ ভাবে মিস্টার ভন্সালীর বিরুদ্ধে কেউ মন্তব্য করলে আমি খুব ব্যথিত হব।’’
সলমনকে খানিকটা উপদেশও দিয়েছিলেন হৃতিক। বলেছিলেন, ‘‘আমার মতে, হিরোরা কখনও অন্যের ব্যর্থতায় আনন্দ পান না। আপনি চূড়ান্ত সফল হলে বরং আরও দয়ালু হবেন। অন্যের ব্যর্থতায় তার সঙ্গে শত্রুতার বদলে বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে দেবেন...। সকলকে ভালবাসায় ভরিয়ে তুলুন। তাদের নিয়ে ঠাট্টা করবেন না। আমি এখনই ওঁকে ক্ষমা করে দিয়েছি। কারণ, মনে হয় যে ওঁর মধ্যে আসলে আমার প্রতি ভালবাসা ছাড়া আর কিছু নেই। একটা বেহিসেবি মুহূর্তে ওই মন্তব্য করেছেন (সলমন)। পরের বার দেখা হলে উনি আমাকে জড়িয়ে ধরবেন বলেই আশা রাখি।’’
হৃতিকের মন্তব্যের পরেও অবশ্য বিষয়টি মিটমাট হয়নি। পরের বছর নিজের টেলিভিশনে তাঁর টক-শোয়ে সরাসরি না হলেও সে প্রসঙ্গ তুলে আনেন কর্ণ জোহর। ২০১১ সালের ওই শোয়ে হৃতিকের কাছে কর্ণ জানতে চান, বাস্তবে সুপারহিরো হলে সলমনের কাছ থেকে কী কেড়ে নিতে চাইবেন? উত্তরে সাফ জবাব হৃতিকের, ‘‘সকলেই সলমনকে ভালবাসেন। তবে সলমন ভাবেন, সকলেই তাঁর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছেন। তাই মনে হয়, সলমনের মধ্যে ‘ভিক্টিম সিনড্রোম’ রয়েছে। সেটা কেড়ে নিতে চাইব।’’
তবে কি সলমন-হৃতিকের মনোমালিন্য মেটেনি? তা অবশ্য নয়। ২০১৯ সালে সলমনের টেলিভিশন রিয়ালিটি শো ‘বিগ বস্’-এ গিয়েছিলেন হৃতিক। এক সময়ে দেখা গেল দু’জনেই বলিউডি গানের তালে কোমর দোলাচ্ছেন। কোন গান? ‘কহো না প্যায়ার হ্যায়’। সেটাই তো অত দিন পরস্পরকে বলছিলেন সলমন-হৃতিক!