ক্রিকেটের মাঠ থেকে বিনোদনজগৎ— সর্বত্রই গুঞ্জন এবং জল্পনার ছড়াছড়ি।সচিন তেন্ডুলকরের কন্যা সারা তেন্ডুলকর এবং শুভমন গিল নাকি প্রেম করছেন। এক দিকে ক্রিকেটের কিংবদন্তির কন্যা, অন্য দিকে ভারতের উদীয়মান তরুণ ক্রিকেটারের ‘বান্ধবী’। সচিন-কন্যার পরিচয় থেকে সারা যে ধীরে ধীরে তাঁর নামের পাশে ‘ভাবী’ (বৌদি) শব্দবন্ধটিও যোগ করে ফেলেছেন, ভারত বনাম শ্রীলঙ্কার ম্যাচ চলাকালীন তার প্রমাণ পাওয়া গেল।
বৃহস্পতিবার মুম্বইয়ের ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে যখন ভারত বনাম শ্রীলঙ্কার ম্যাচ চলছিল তখন খেলার মাঠের পাশাপাশি দর্শক এবং ছবিশিকারিদের নজর কেড়েছিল গ্যালারির দর্শকাসনে বসে থাকা সারা। শুভমন যখন বিশ্বকাপের প্রথম সেঞ্চুরির দোড়গোড়ায় পৌঁছেও ফিরে গেলেন তখন সারার চোখেমুখে আক্ষেপের ছায়া। মুখের উপর দু’হাত চেপে ধরেন তিনি। পরক্ষণেই আসন ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে হাততালি দিয়ে ভাল খেলার জন্য শুভমনকে শুভেচ্ছা জানাতেও ভুললেন না সচিন-কন্যা।
ভারত ফিল্ডিং করতে মাঠে নামলে বিরাট কোহলি এবং শুভমন পাশাপাশি দাঁড়িয়ে ফিল্ডিং করছিলেন। সে সময় শুভমনের উদ্দেশে দর্শক চিৎকার করে উঠে বলেন, ‘‘হমারি ভাবী কয়সি হো? সারা ভাবী জয়সি হো’’ (আমাদের বৌদি কেমন হবে? সারা বৌদির মতো হবে)। শুভমনের পাশে দাঁড়িয়ে থাকা বিরাট দর্শকদের দিকে ইশারা করে চুপ করার ইঙ্গিত করলে ‘সারা ভাবী’র পরিবর্তে শুভমনের নাম ধরে চিৎকার শুরু করেন দর্শক।
সারা-শুভমনের প্রেমের জল্পনা তুঙ্গে থাকলেও কানাঘুষো শোনা যায় মুকেশ অম্বানীর পুত্রের সঙ্গেও নাকি সম্পর্কে জড়িয়েছিলেন সারা। সচিন-কন্যার বিশেষ বন্ধুর তালিকায় রয়েছে বিনোদন জগতের মধ্যমণি ওরহান অবত্রমানি ওরফে ওরির নামও।
১৯৯৭ সালের ১২ অক্টোবর মহারাষ্ট্রের মুম্বইয়ে জন্ম সারার। বাবা-মা এবং ভাইয়ের সঙ্গে থাকেন তিনি। সারার মা অঞ্জলি তেন্ডুলকর পেশায় চিকিৎসক। অধিকাংশের দাবি, মায়ের সঙ্গে চেহারার অসামান্য সাদৃশ্য রয়েছে সারার।
ইতিমধ্যেই সমাজমাধ্যমের ‘সেনসেশন’ হয়ে উঠেছেন সচিন-কন্যা সারা। ইনস্টাগ্রামে তাঁর অনুরাগী সংখ্যা ৪৯ লক্ষের গণ্ডি পার করেছে। সমাজমাধ্যমের পাতায় কোনও ছবি বা ভিডিয়ো পোস্ট করলে নিমেষের মধ্যে ভালবাসা দিয়ে তা ভরিয়ে তোলেন সারার অনুরাগীরা।
মুম্বইয়ের ধীরুভাই অম্বানী ইন্টারন্যাশনাল স্কুল থেকে পড়াশোনা শেষ করেন সারা। তার পর মায়ের পদাঙ্ক অনুসরণ করে চিকিৎসাবিদ্যা নিয়ে পড়াশোনা করার সিদ্ধান্ত নেন তিনি।
ইউনিভার্সিটি কলেজ অফ লন্ডন থেকে মেডিসিন নিয়ে পড়াশোনা শেষ করে মুম্বই ফিরে যান সারা। কানাঘুষো শোনা যেতে থাকে, খুব তাড়াতাড়ি বড় পর্দায় অভিনয় করতে দেখা যাবে সারাকে।
২০২১ সালের ডিসেম্বর মাসে সারা তাঁর সমাজমাধ্যমের পাতায় একটি ভিডিয়ো পোস্ট করে ইঙ্গিত দেন যে, মডেলিংয়ে হাতেখড়ি করছেন তিনি।
নামী সংস্থার বিজ্ঞাপনী প্রচারেও দেখা গিয়েছে সারাকে। মডেলিংয়ের পাশাপাশি সমাজসেবার সঙ্গেও যুক্ত সচিন-কন্যা।
শিল্পপতি মুকেশ অম্বানীর পুত্র অনন্ত অম্বানীর সঙ্গেও নাম জড়িয়ে পড়ে সারার। যদিও এই বিষয়ে দু’জনের কেউই মুখ খোলেননি।
সংবাদমাধ্যমের একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, খুব তাড়াতাড়ি বলিউডে আত্মপ্রকাশ করবেন সারা। তাঁর প্রথম ছবির তোড়জোড়ও নাকি শুরু হয়ে গিয়েছে। পেশাদার অভিনয়ের পাঠও সারা নিয়ে ফেলেছেন ইতিমধ্যেই।
মেডিসিনের পাঠ শেষ করলেও গ্ল্যামার দুনিয়াতেই নাকি কেরিয়ার গড়ার স্বপ্ন সচিন-কন্যার। কানাঘুষো শোনা গিয়েছিল, বলি অভিনেতা শাহিদ কপূরের বিপরীতে বড় পর্দায় অভিনয় করতে দেখা যাবে সারাকে। তবে সচিন যাবতীয় জল্পনায় জল ঢেলেছিলেন। সচিন বলেছিলেন, ‘‘সারা তার পড়াশোনা নিয়ে ব্যস্ত, সে দিকটাই উপভোগ করছে। বলিউডে তার আসার খবর একেবারে ভিত্তিহীন।’’
শুধুমাত্র ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামেই নয়, সারা-শুভমনের সম্পর্ক নিয়ে চর্চা আরও জোরালো হয়েছে মঙ্গলবার অম্বানীদের জিয়োওয়ার্ল্ড প্লাজ়ার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পর। অম্বানীদের আমন্ত্রণে সেই অনুষ্ঠানে বসেছিল চাঁদের হাট। বিনোদন জগতের তাবড় তারকারা হাজির ছিলেন সেখানে। তবে অনুষ্ঠান শেষে জো়ড়ায় দেখা যায় সারা-শুভমনকে।
অনুষ্ঠান শেষ হওয়ার পর শুভমনের সঙ্গে অনুষ্ঠান কক্ষ থেকে বেরিয়ে যেতে দেখা যায় সারাকে। সচিন-কন্যার পরনে ছিল লাল বডিকন ড্রেস।কালো স্যুটে দেখা যায় শুভমনকে। দু’জনে একে অপরের সঙ্গে কথা বলতে বলতে বেরিয়ে যাচ্ছিলেন।
কিন্তু ক্যামেরা দেখামাত্রই আড়াল খুঁজতে শুরু করেন শুভমন। মুখ ঘুরিয়ে ক্যামেরার বিপরীতদিকে হাঁটতে শুরু করেন তিনি। হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ শুভমনকে পাশে না দেখতে পেয়ে তাজ্জব বনে যান সারা। তাঁরা যে নিজেদের সম্পর্কের কথা গোপন রাখতে চাইছেন, এই ঘটনা কি তারই ইঙ্গিত?
তবে বিনোদন জগতের মধ্যমণি ওরির সঙ্গেও যে সারার বন্ধুত্ব রয়েছে, তা ধরা পড়েছে কয়েক দিন আগেই। নবরাত্রি উপলক্ষে একটি পার্টিতে ওরি বলিপাড়ার প্রায় সমস্ত তারকাসন্তানকে নিমন্ত্রণ করেছিলেন। সে অনুষ্ঠানে অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন সারাও। সচিন-কন্যাকে জড়িয়ে ধরে ছবিও তুলতে দেখা যায় ওরিকে।
তবে সারা-শুভমনের সম্পর্ক-বিচ্ছেদ নিয়ে জলঘোলাও কম হয়নি। কানাঘুষো শোনা যায়, সাধারণ মানুষের নজর এড়িয়ে মাঝে মধ্যেই দেখা করতেন তাঁরা। তবে কোনও এক কারণে তাঁদের মধ্যে দূরত্ব তৈরি হয়। সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে আসেন দু’জনেই।
গত টেস্ট বিশ্বকাপ ফাইনালের সময় সচিনের সঙ্গে লন্ডনে গিয়েছিলেন সারা। ভারত-অস্ট্রেলিয়ার খেলাও দেখতে গিয়েছিলেন। তার পর থেকেই নাকি ধীরে ধীরে আবার জোড়া লেগেছে সম্পর্ক। যদিও সম্পর্ক বা দূরত্ব— কোনও কিছু নিয়েই শুভমন বা সারা কখনও মুখ খোলেননি।
সচিন-কন্যা সরে যাওয়ার পর শুভমন অবশ্য সারাতেই মজে ছিলেন। বলিউড অভিনেত্রী সারা আলি খানের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি হয়েছিল তাঁর। কয়েক বার ‘ডেট’-এও গিয়েছেন তাঁরা। সইফ আলি খানের কন্যার সঙ্গে সেই সম্পর্কও টেকেনি শুভমনের।
অম্বানীদের যে অনুষ্ঠানে সচিন-কন্যা এবং শুভমন একসঙ্গে প্রকাশ্যে ধরা দেন, সেই অনুষ্ঠানে ফ্যাশনসরণি মাতাতে দেখা গিয়েছিল সারা আলিকে। তবু একে অপরকে নাকি এড়িয়ে গিয়েছেন সারা আলি এবং শুভমন।
বলিপাড়ার একাংশের দাবি, ক্রিকেটের মাঠে সারা তেন্ডুলকর যাতায়াত বৃদ্ধি করলে ধীরে ধীরে নিজেকে গুটিয়ে নেন সইফ-কন্যা। বিশ্বকাপ শুরু হওয়ার পরই তীর্থ করতে বেরিয়ে যান সারা। মুম্বই ফিরে কাজে মন দিয়েছেন তিনি। কানাঘুষো শোনা যায়, এর মাঝে প্রাক্তন প্রেমিক কার্তিক আরিয়ানের সঙ্গে নতুন করে সখ্য গড়ে উঠেছে সারা আলির।
গত ১৪ ফেব্রুয়ারি সমাজমাধ্যমের পাতায় ইঙ্গিতবাহী ছবি পোস্ট করেছিলেন তরুণ ব্যাটার। লন্ডনের একটি ক্যাফেতে গিয়েছিলেন তিনি। সঙ্গে লিখেছিলেন, ‘‘আজ যেন কোন দিন?’’ সমাজমাধ্যমে একই ক্যাফের ছবি দিয়েছিলেন সারাও।
গত ৯ সেপ্টেম্বর শুভমনের জন্মদিনে তাঁকে শুভকামনা জানিয়েছিলেন সচিন স্বয়ং। তবে কি মেয়ের চর্চিত সম্পর্কে সিলমোহর দিয়েছিলেন বাবা?