এক ওভারে সাতটি ছয়! বিজয় হজারে ট্রফিতে নজির গড়লেন রুতুরাজ গায়কোয়াড়। ভারতীয় হিসাবে এর আগে ছ’বলে ছ’টি ছয় মেরেছেন রবি শাস্ত্রী এবং যুবরাজ সিংহের। এ বার সাতটি! কোনও ভারতীয়ের এই কৃতিত্ব নেই। সে ক্ষেত্রে রুতুরাজই প্রথম। তবে এক ওভারে সর্বোচ্চ রানের নিরিখে রুতুরাজের এই নজির শীর্ষে নয়। এর আগে এক ওভারে ৭৭ রান দিয়েছিলেন এক বোলার।
বিজয় হজারে ট্রফির কোয়ার্টার ফাইনালে উত্তরপ্রদেশের বিরুদ্ধে ঝোড়ো ব্যাটিং করেছেন রুতুরাজ। ১৫৯ বলে ২২০ রান করেছেন তিনি। গোটা ইনিংসে ১০টি চার এবং ১৬টি ছয় মেরেছেন।
ম্যাচের ৪৯তম ওভারে রুতুরাজ মারেন সাতটি ছয়। বল করছিলেন উত্তরপ্রদেশের বাঁ হাতি স্পিনার শিবা সিংহ। প্রথম চারটি বল মাঠের বাইরে পাঠান রুতুরাজ। পঞ্চম বলটি ছিল নো। সেটিও মাঠের বাইরে পাঠিয়ে দেন রুতুরাজ। পরের দু’টি বলের গন্তব্যও ছিল একই। পৌঁছে যায় মাঠের বাইরে।
২৫ বছরের রুতুরাজ মহেন্দ্র সিংহ ধোনির আইপিএলের সতীর্থ। তিনিও খেলেন চেন্নাই সুপার কিংসের হয়ে। ভারতের হয়ে একটি এক দিনে ম্যাচ এবং ন’টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলেছেন তিনি।
আন্তর্জাতিক এক দিনের ম্যাচে ছ’টি ছয় হাঁকানোর কৃতিত্ব প্রথম রয়েছে হার্সেল গিবসের।
২০০৭ সালের ১৬ মার্চ বিশ্বকাপে নেদারল্যান্ডসের বিরুদ্ধে রেকর্ড করেছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকার ওপেনিং ব্যাটার গিবস। ম্যাচের ৩০তম ওভারে ড্যান ভান বাঞ্জের করা ছ’টি বলকে মাঠের বাইরে পাঠিয়েছিলেন তিনি।
ওই ম্যাচে ৪০ বলে ৭২ রান করেছিলেন গিবস। ম্যাচটি ২২১ রানে জিতেছিল দক্ষিণ আফ্রিকা।
গিবসের পর ওই বছরই এক ওভারে ছ’টি ছয় হাঁকানোর নজির গড়েন যুবরাজ সিংহ। ২০০৭ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর টি২০ বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে এই নজির গড়েন ভারতীয় ব্যাটার।
ইংল্যান্ডের অ্যান্ড্রু ফ্লিনটফ এবং স্টুয়ার্ট ব্রডের সঙ্গে বচসায় জড়িয়েছিলেন যুবরাজ। তখন ইংল্যান্ড দল ভাবতেও পারেনি, পরের ওভারে তাঁদের জন্য কী অপেক্ষা করছিল। এক ওভারে ছ’টি ছয় হাঁকান যুবরাজ।
যুবরাজের আগে টি২০ ম্যাচে এক ওভারে ছ’টি ছয় মারার কৃতিত্ব কারও নেই। ওই ম্যাচে ১২ বলে অর্ধশতরান করেছিলেন যুবরাজ। সেটাও একটা রেকর্ড। টি২০ ম্যাচে দ্রুততম ৫০-এর রেকর্ডও এর পর চলে যায় যুবরাজের ঝুলিতে।
ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ওই টি২০ ম্যাচ জিতেছিল ভারত। ২০০৭ সালের টি২০ বিশ্বকাপও জিতেছিল ভারতই।
যুবরাজের পর টি২০ ম্যাচে এই নজির গড়েছেন কিয়েরন পোলার্ড। ২০২১ সালের ৩ মার্চ শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে টি২০ ম্যাচ খেলতে নেমেছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। সেখানেই এই কীর্তি গড়েছিলেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের অল রাউন্ডার পোলার্ড।
শ্রীলঙ্কার আকিলা ধনঞ্জয় পর পর তিন বলে তিন উইকেট নিয়ে হ্যাটট্রিক করেন। ভেঙে পড়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ব্যাটিং লাইন। তখনই ক্রিজে নেমে এক ওভারে ছ’টি ছয় হাঁকান পোলার্ড। সাত ওভার বাকি থাকতেই ম্যাচ জেতে ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
১৯৮৪ সালে রঞ্জি ট্রফিতে এই নজির গড়েছিলেন রবি শাস্ত্রী। বরোদার বিরুদ্ধে মুম্বইয়ের হয়ে নেমেছিলেন মাঠে। স্পিনার তিলক রাজের বিরুদ্ধে এক ওভারে ছ’টি ছয় মেরেছিলেন তিনি।
এই রেকর্ড প্রথম ছিল গ্যারি সোবার্সের। ১৯৬৮ সালে নটিংহ্যামশায়ারের হয়ে কাউন্টি খেলতে নেমেছিলেন তিনি। বিপক্ষের ফাস্ট বোলার ম্যালকম ন্যাশকে উড়িয়ে ছ’বলে ছ’টি ছয় মেরেছিলেন তিনি।
তবে সবাইকে ছাপিয়ে গিয়েছেন বার্ট ভ্যান্স। ১৯৯০ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি একটি ওভারে ৭৭ রান করেছিলেন তিনি।
নিউ জ়িল্যান্ডের ক্যান্টারবেরি দলের হয়ে বল করতে নেমেছিলেন বার্ট। বিপক্ষে ছিল ওয়েলিংটন। নিউ জ়িল্যান্ডের ল্যাঙ্কাস্টার পার্কে চলছিল ঘরোয়া ক্রিকেটের ম্যাচ।
ম্যাচ শেষ হতে দু’ওভার বাকি ছিল। সেই ১২ বলে ওয়েলিংটনকে করতে হত ৯৫ রান। যা ছিল এক প্রকার অসম্ভব। উইকেটে ছিলেন লি জার্মন। বল করতে আসেন বার্ট। ওভারের প্রথম বলটিই হয়েছিল নো। পরের বলে চার হাঁকিয়েছিলেন জার্মন।
এর পর ১৫টি নো বল করেন বার্ট। তাতে আটটি ছয় হাঁকিয়েছিলেন জার্মন। ১৫টি নো বলের পর দ্বিতীয় ও তৃতীয় বল ঠিক লেংথে করেছিলেন বার্ট। তার পর আবারও নো বল। তাতে চার হাঁকিয়েছিলে জার্মন। ওটাই ওই ওভারের শেষ নো বল।
ওই ওভারে প্রথম ১৭টি বলের মধ্যে মাত্র একটি ছিল বৈধ। এক ওভারে এতগুলি বল করতে হয়েছিল, আম্পায়ার গুনতে ভুল করে ফেলেন। পঞ্চম বলের পর তিনি ওভারটিও বাতিল করে দেন।