পরমাণু যুদ্ধের জন্য রাশিয়া প্রস্তুত, সে দেশের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে পশ্চিমি দুনিয়াকে এ ভাবেই হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন ভ্লাদিমির পুতিন। এর পর রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বিপুল ভোটে জয়ী হয়েছেন তিনি। ষষ্ঠ বারের জন্য তিনি প্রেসিডেন্টের আসনে বসেছেন।
তবে পুতিনের এই পরমাণ যুদ্ধ সংক্রান্ত বাণী মোটেও ভাল ভাবে নেয়নি আমেরিকা। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশও করেছে জো বাইডেনের দেশ। যদিও আমেরিকার সেই ক্ষোভকে পুতিন আমল দিতে নারাজ বলেই মনে করা হচ্ছে।
বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, এ বার মহাকাশেও পরমাণু শক্তিকেন্দ্র স্থাপন করতে চাইছেন পুতিন। এ নিয়ে তিনি সংশ্লিষ্ট আধিকারিকদের নির্দেশ দিয়েছেন বলেও শোনা গিয়েছে।
আগেও এক বার জল্পনা তৈরি হয়েছিল যে, পুতিন মহাকাশে পরমাণু অস্ত্র পাঠাতে চাইছেন। তবে পরে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট জানান, ক্ষমতা থাকলেও মহাকাশে পারমাণবিক অস্ত্র পাঠানোর কোনও ইচ্ছা নেই রাশিয়ার।
রাশিয়ার সরকারি সংবাদমাধ্যম তাস-এর একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত বৃহস্পতিবার সংশ্লিষ্ট সরকারি আধিকারিকদের মহাকাশে পরমাণু শক্তিকেন্দ্র নির্মাণ-সহ বাকি মহাকাশ প্রকল্পগুলিকে অগ্রাধিকার দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট।
পাশাপাশি, মহাকাশ প্রকল্পগুলিতে যাতে সঠিক ভাবে অর্থের জোগান বজায় থাকে, সে বিষয়েও নজর দেওয়ার কথা জানিয়েছেন পুতিন।
ফেব্রুয়ারিতে সূত্রকে উদ্ধৃত করে সংবাদমাধ্যম ‘সিএনএন’-এর একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, মস্কো এমন একটি পরমাণু অস্ত্র তৈরি করতে চলেছে, যা বিপুল সংখ্যক বাণিজ্যিক এবং সরকারি উপগ্রহকে বিকল করতে সক্ষম।
এর পর আবার রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে সরকারি আধিকারিকদের সঙ্গে এক বৈঠকে পুতিন নাকি বলেন, ‘‘রাশিয়ার দক্ষতা রয়েছে। আমাদের কাছে এমন সম্পদ রয়েছে, যা নিয়ে আমরা গর্ব করতে পারি। এই সব সম্পদের ভবিষ্যৎ নিয়েও বিশ্বাস রাখতে পারি।’’
পুতিন মন্তব্য করেন, সঠিক সময়ে পরমাণু শক্তিকেন্দ্রের প্রকল্পে অর্থ প্রদান করা হবে। শুধু কোন প্রকল্পে আগ্রাধিকার দেওয়া হবে, সেটা ঠিক করে নিতে হবে। যেখানে সমস্যা রয়েছে, সেখানে অতিরিক্ত মনোযোগ দিতে হবে বলেও সরকারি কর্তাদের নির্দেশ দেন পুতিন।
পুতিন নাকি সেই বৈঠকে বলেন, ‘‘আমরা সকলেই জানি, আমাদের এমন দক্ষতা রয়েছে যা অন্য দেশগুলির নেই। আমাদের কাজে মনোযোগ দিতে হবে যাতে প্রকল্পগুলিকে ভবিষ্যতে সমস্যা সমাধানের জন্য ব্যবহার করা যায়। প্রযুক্তির সাহায্যেই আমাদের লক্ষ্যপূরণ করতে হবে।’’
সামরিক বিশেষজ্ঞদের মতে, রাশিয়া মহাকাশে যে পরমাণু শক্তিকেন্দ্র স্থাপন করতে চলেছে, তা ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক শক্তির মাধ্যমে পৃথিবীর কক্ষপথে থাকা উপগ্রহগুলিকে বিকল করতে পারে। এই ধরনের যন্ত্রকে বিজ্ঞানের ভাষায় ‘নিউক্লিয়ার ইএমপি’ বলে।
‘সিএনএন’-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, আমেরিকার জো বাইডেন সরকার প্রকাশ্যে বলেছে যে, রাশিয়া মহাকাশে পাঠানোর জন্য একটি বিশেষ পরমাণু অস্ত্র তৈরি করছে।
আমেরিকার মতে, এই অস্ত্র যদি মহাকাশে পাঠানো হয়, তা হলে তা বিপজ্জনক হতে পারে।
অন্য দিকে, রাশিয়ার মহাকাশ সংস্থা ‘রসকসমস’-এর প্রধান ইউরি বোরিসভ গত সপ্তাহে জানিয়েছেন, রাশিয়া এবং চিন এমন একটি প্রকল্পে কাজ করছে, যা চাঁদে একটি পারমাণু রিঅ্যাক্টর স্থাপন করতে পারে।
৫ মার্চ বোরিসভ বলেছিলেন, ‘‘চিনকে অংশীদার করে ২০৩৩ থেকে ২০৩৫ সালের মধ্যে আমরা চাঁদে পৌঁছব। সেখানে যৌথ ভাবে একটি পরমাণু রিঅ্যাক্টর বসানোর কথাও গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করে দেখা হচ্ছে।’’