ইউক্রেনের হাতছাড়া হতে চলেছে সেভেরোদোনেৎস্ক। এই গুরুত্বপূর্ণ শহর থেকে ইতিমধ্যেই পিছু হটতে শুরু করেছে ইউক্রেনীয় সেনাবাহিনী। একাধিক আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম এমনটাই জানিয়েছে।
সূত্রের খবর, ইউক্রেন সেনা প্রত্যাহার করে এই শহর এক প্রকার রাশিয়ার হাতে তুলে দিয়েছে। যদিও রাশিয়া আগেই দাবি করেছিল যে, এই শহর তাদের দখলে এসেছে।
ইউক্রেনীয়দের জন্য সেভেরোদোনেৎস্ক শহর নিজেদের দখলে রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল। যদি রুশ সেনারা লিসিচানস্ক এবং সেভেরোদোনেৎস্ক শহর দখলে নেয়, তা হলে সমগ্র লুহানস্ক অঞ্চল মস্কোর নিয়ন্ত্রণে আসতে পারে।
সেভেরোদোনেৎস্ক পূর্ব ইউক্রেনীয় অঞ্চলের শহরগুলির মধ্যে প্রধান এবং শেষ ইউক্রেনীয় দুর্গগুলির মধ্যে একটি। ইউক্রেনের এক শীর্ষ সেনাকর্তার মতে, যুদ্ধদীর্ণ এই অঞ্চলে মৃতের সংখ্যা প্রতিনিয়তই বাড়ছে। আর সেই কারণেই নিজেদের অবস্থান থেকে সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইউক্রেন।
প্রসঙ্গত, অনেক দিন আগে থেকেই ইউক্রেনের সেভেরোদোনেৎস্ক শহর দখলের লড়াইয়ে ভয়ানক যুদ্ধে মেতেছিল মস্কো এবং কিভের সেনাবাহিনী।
সেভেরোদোনেৎস্ক রক্ষার দায়িত্বে থাকা সেনাবাহিনীর প্রধান ওলেক্সান্ডার স্ট্রাইউক আগে জানিয়েছিলেন, শহরের সাধারণ নাগরিকদের অবস্থা দুর্বিষহ। বাইরে থেকে পণ্য সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছে না। শহরে জল সরবরাহও বন্ধ রয়েছে। যার ফলে ভয়ঙ্কর দুর্দশায় নাগরিকরা।
গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেন আক্রমণ করে রাশিয়া। ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসন চার মাস পেরিয়ে পঞ্চম মাসে পড়ল। বর্তমানে দেশটির পূর্বাঞ্চলে তীব্র লড়াই হচ্ছে।
এরই মধ্যে, ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্যপদ পাওয়ার ক্ষেত্রে আরও এক ধাপ অগ্রসর হয়েছে ইউক্রেন।
বৃহস্পতিবার ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য দেশগুলো ইউক্রেনকে সদস্যপদ দেওয়ার বিষয়টি সরকারি ভাবে স্বীকৃতি দিয়েছে।
এর পর আরও কিছু ধাপ পার করলেই ইউরোপীয় ইউনিয়নের স্থায়ী সদস্য হতে পারে ইউক্রেন।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভোলোদিমির জেলেনস্কি ইইউ-এর এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, ‘‘ঐতিহাসিক মুহূর্ত। ইউক্রেন ইইউ-এর কাছে কৃতজ্ঞ।’’
যদি ইউরোপীয় ইউনিয়নের এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হয়, তা হলে বলতে হবে, ২০১৩ সালের পর ফের কোনও দেশকে সদস্য করার সিদ্ধান্ত নিল ২৭ দেশের জোট ইউরোপীয় ইউনিয়ন। ইইউ-এর শেষ সদস্যপদ দেওয়া হয়েছিল ক্রোয়েশিয়াকে।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের পরামর্শদাতা বৃহস্পতিবার জানিয়েছেন, ডনবাস (লুহানস্ক ও ডোনেৎস্ক) অঞ্চলে তীব্র লড়াই চলছে। কার্যত ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে গোটা এলাকা। তাঁর দাবি, ডনবাস দখল করার জন্যই নতুন করে খারকিভে আক্রমণ শুরু করেছে রাশিয়া।
এই যুদ্ধের ফলে গ্যাস সরবরাহে সঙ্কট দেখা গিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলিতে। ইউরোপীয় দেশগুলির গ্যাসের মজুত ক্রমশ কমছে। রাশিয়া থেকে ৬০ শতাংশ গ্যাস নিত ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলো। নরওয়ে থেকে নেওয়া হত ২০ শতাংশ।
যুদ্ধের কারণে রাশিয়া থেকে গ্যাস আমদানি ক্রমশ কমিয়েছে ইইউ-এর দেশগুলি। রাশিয়াও বেশ কিছু দেশে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে বৃহস্পতিবার নরওয়ের সঙ্গে ইইউ একটি চুক্তি সই করেছে। এর ফলে ইইউ-এর দেশগুলিতে নরওয়ে অনেক বেশি গ্যাস সরবরাহ করবে।
এই পরিস্থিতিতে এক দিকে তাদের যেমন নরওয়ের সাহায্য প্রয়োজন, তেমনই বিকল্প ব্যবস্থা গড়ে তোলা প্রয়োজন।
সব মিলিয়ে বলতে হচ্ছে, এখনই যুদ্ধ থামার কোনও সম্ভাবনা নেই। লক্ষ লক্ষ মানুষ গৃহহীন সেখানে।
নেটো-প্রধান বলেছেন, ইউক্রেনের যুদ্ধ বছরের পর বছর চলতে পারে এবং এ জন্য তিনি কিভকে সহযোগিতা করতে প্রস্তুত থাকতে পশ্চিমী দেশগুলোকে আহ্বানও জানিয়েছেন।
নেটোর মহাসচিব ইয়েন্স স্টলটেনবার্গ বলেছেন, ‘‘এই যুদ্ধের চড়া মূল্য দিতে হচ্ছে ঠিকই, কিন্তু মস্কোকে যদি তাদের সামরিক লক্ষ্য অর্জন করতে দেওয়া হয়, তা হলে তার জন্য আরও বেশি মূল্য চোকাতে হবে।’’
অতঃপর, পাঁচ মাস কেটে গেলেও শান্তি এখনও অধরা ইউক্রেনে। কবে শান্তি ফিরবে, যুদ্ধ থামবে— তার কোনও সদুত্তর কোনও পক্ষের কাছেই আপাতত নেই।