ইউক্রেন হামলার পর ভ্লাদিমির পুতিনকে ‘শিক্ষা দিতে’ রাশিয়াকে ‘ভাতে মারা’র পরিকল্পনা করেছিলেন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন-সহ অন্য শক্তিশালী দেশের রাষ্ট্রপ্রধানেরা। সেই ‘ফন্দি’ মুখ থুবড়ে পড়েছে বলেই দাবি একাধিক আন্তর্জাতিক সংবাদসংস্থার।
রাশিয়াকে শাস্তি দিতে সে দেশ থেকে পণ্য আমদানি করায় নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছিল। আমদানি বন্ধও করেছিল বহু দেশ। তার পরও রাশিয়ার জ্বালানি বিক্রি বেড়েছে বলে দাবি করেছে একাধিক সংবাদমাধ্যম।
অপরিশোধিত তেল উৎপাদনে রাশিয়া বিশ্বে তৃতীয় স্থানে রয়েছে। যুদ্ধের আগে এই তেল রফতানিতেও তৃতীয় স্থানে ছিল রাশিয়া। একটি বেসরকারি অর্থনৈতিক নজরদার সংস্থা ভিজ্যুয়াল ক্যাপিটালিস্ট ডট কমের সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, রাশিয়া এই তেল রফতানি করেই সবচেয়ে বেশি আয় করেছে ইউক্রেন আক্রমণের পর থেকে।
অপরিশোধিত তেল-সহ অন্যান্য জীবাশ্ম জ্বালানির রফতানিও বেড়েছে। ইউক্রেনে হামলার পরবর্তী ১০০ দিনে ৯ হাজার ৭৭০ কোটি ডলারের জীবাশ্ম জ্বালানি রফতানি করেছে রাশিয়া। অর্থাৎ গড়ে প্রতি দিন প্রায় ৯৮ কোটি ডলারের জ্বালানি অন্য দেশে রফতানি করেছে পুতিনের দেশ।
তবে এই রফতানি হওয়া জ্বালানির অর্ধেকের বেশিই ‘কালো সোনা’ অর্থাৎ অপরিশোধিত তেল। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইউক্রেন হামলার দিন কয়েক আগে থেকেই তেলসঙ্কট চলছিল বহু দেশে। রাশিয়ার অপরিশোধিত তেলের চাহিদা বৃদ্ধির একটি কারণ সেটিও হতে পারে।
কিন্তু কারা নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও জ্বালানি কিনছে রাশিয়া থেকে? বস্তুত, রাশিয়া থেকে জ্বালানি আমদানি করার অর্থ যেখানে পরোক্ষে আমেরিকার বিরোধিতা বোঝায় এবং একই সঙ্গে যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেনের প্রতি সহমর্মিতা না জানানোর প্রতি ইঙ্গিত করে, তা স্পষ্ট করে দেওয়ার পরও কোন কোন দেশ সেই নিষেধাজ্ঞা মানছে না?
সমীক্ষা বলছে, এই তালিকায় সবার আগে রয়েছে চিন, তারপরেই জার্মানি এবং ভারত। রয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত দেশগুলিও।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত দেশগুলি বরাবরই তাদের প্রাকৃতিক গ্যাস আমদানির জন্য মূলত রাশিয়ার উপর নির্ভর করেছে। এই দেশগুলির প্রয়োজনের ৪১ শতাংশ প্রাকৃতিক গ্যাস আমদানি করা হয় রাশিয়া থেকেই।
ইউক্রেন হামলার পর যে আড়াই হাজার কোটি ডলারের পাইপলাইন গ্যাস রাশিয়া অন্য দেশে রফতানি করেছে, তার ৮৫ শতাংশ গিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত দেশগুলিতে।
ইউক্রেন আক্রমণের পরের ১০০ দিনে রাশিয়ার জীবাশ্ম জ্বালানি রফতানির ৬১ শতাংশও হয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশেই।
বিস্ময়ের কথা হল, এই আমদানিকারী দেশগুলির তালিকায় রয়েছে জার্মানি, ইতালি, নেদারল্যান্ডসের মতো বহু নেটোভুক্ত দেশের নাম। রাশিয়ার সঙ্গে লড়ার জন্য যাদের সাহায্যপ্রার্থী ইউক্রেন।
তবে এই সব দেশকে আমদানিতে টেক্কা দিয়েছে চিন।
মে মাসে রাশিয়া থেকে গড়ে প্রতি দিন ২০ লক্ষ ব্যারেল তেল আমদানি করেছে চিন। যা আগের বছরের তুলনায় ৫৫ শতাংশ বেশি।
যুদ্ধের এবং তৎপরবর্তী নিষেধাজ্ঞার পর রাশিয়া থেকে আমদানি সবচেয়ে বেশি বাড়িয়েছে ভারতই। যুদ্ধের পরের ১০০ দিনে রাশিয়ার মোট রফতানি করা তেলের ১৮ শতাংশই পাঠানো হয়েছে ভারতে।
তবে সবাই যে নিষেধাজ্ঞা অমান্য করেছে, তা নয়। রাশিয়া থেকে জ্বালানি ক্রয় পুরোপুরি বন্ধও করে দিয়েছে কিছু দেশ।
ইউক্রেন হামলার সমালোচনা করে এই সমস্ত দেশ রাশিয়ার বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান গ্রহণ করেছে। জীবাশ্ম জ্বালানি-সহ নানা ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে এ সব দেশের প্রশাসন।
রাশিয়া থেকে অপরিশোধিত তেল আমদানি করা পুরোপুরি বন্ধ করে দিয়েছে আমেরিকা এবং সুইডেন। মে মাসে তাদের আমদানি ১০০ শতাংশ থেকে ৯৯ শতাংশ পর্যন্ত কমানো হয়েছে।
আমদানি অনেকটাই কমিয়েছে লিথুয়ানিয়া, মিশর, স্পেন, ফিনল্যান্ড, পোল্যান্ড, এস্তোনিয়া এবং জাপানের মতো দেশও।
যার প্রেক্ষিতে রাশিয়া থেকে জ্বালানি আমদানি ১৫ শতাংশ কমেছে গত এক মাসে।
সূত্রের খবর, খুব শীঘ্রই রাশিয়া থেকে তেল আমদানির ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা জারি করতে চলেছে ইউরোপীয় ইউনিয়নও। সে ক্ষেত্রে রাশিয়া থেকে আমদানি করা ৯০ শতাংশ তেলের উপর এই নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হবে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই নতুন নিষেধাজ্ঞা রাশিয়াকে সঙ্কটে ফেলতে চলেছে কি না, তা বোঝা যাবে ছ’ থেকে আট মাস পর।
তবে একইসঙ্গে তাঁরা বলেছেন, যেহেতু রাশিয়া থেকে আমদানি করা জ্বালানির উপর ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলি ব্যাপক ভাবে নির্ভরশীল, তাই এতে ইউরোপীয় ইউনিয়নের অর্থনীতিতেও প্রভাব পড়বে।