সিঁদুর উড়ে গিয়ে আটকে পড়ল বউমার কপালে। তা দেখে হতবাক শাশুড়ির মাথা ঘুরপাক খেল বার তিনেক। বউমা-শাশুড়ির কাজিয়া মেটাতে দৌড়ে আসা দেওরের একই কথা পাঁচ বার শোনা গেল। সাত চড়ে রা কাড়েন না, এমন শান্তশিষ্ট ছোট বউ আসলে ‘ডাইনি’! টেলি-সিরিজে এমন কত আজগুবি কাণ্ডই তো দেখা যায়। তবে তা গ্রোগাসে গেলার সংখ্যাটা বড় একটা কম নয়। যাঁদের টানে ফি-পর্বে টেলিভিশনের সামনে বসে পড়েন দর্শক, সেই ‘বউমা’ বা ‘ডাইনি’রা কে কত রোজগার করেন?
অভিনয়ে নয়। টেলিভিশনের পর্দায় শ্রীনগরের হিনা খান প্রথম দেখা দিয়েছিলেন ‘ইন্ডিয়ান আইডল’-এ। নিজের গায়কীর জোরে ওই মিউজিক রিয়্যালিটি শোয়ের সেরা তিরিশেও পৌঁছে যান। সেটা ছিল ২০০৮ সাল। পরের বছর কলেজে পড়াশোনার ফাঁকে ‘ইয়ে রিস্তা ক্যায়া কহেনা’ নামের সিরিয়ালে অডিশন দেন। সুযোগও পেয়ে যান। বাকিটা ইতিহাস!
প্রায় দু’দশক ধরে টিভি-র পর্দায় দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন ৩৪ বছরের হিনা। ‘কসৌটি জিন্দেগি কে’ বা ‘নাগিন-৫’-এর মতো সিরিয়াল ছাড়াও ‘হামকো তুম মিল গয়ে’, ‘মহব্বত হ্যায়’ কিংবা ‘বারিশ বন যানা’-র মিউজিক ভিডিয়োতেও হিনাকে দেখা গিয়েছে। আবার ‘ফিয়ার ফ্যাক্টর: খতরোঁ কি খিলাড়ি-৮’ এবং ‘বিগ বস্-১১’-র মতো রিয়্যালিটি শোয়েও অংশ নিয়েছেন। দেশের টিভি ইন্ডাস্ট্রির অন্যতম তারকা হিসাবে সহজেই তাঁর নাম উঠে আসে। প্রতি পর্বে নাকি দেড় থেকে দু’লক্ষ টাকা ছাড়া কাজ করতে রাজিই নন হিনা!
সাক্ষী তনবরের পরিচয় দিতে গিয়ে বেশি কিছু বলতে হয় না। ইন্ডাস্ট্রির লোকজন তো বটেই, বহু টেলি-দর্শকও তাঁকে একডাকে চেনেন। ‘কহানি ঘর ঘর কি’ সিরিয়ালে বছরের পর বছর ধরে তাঁদের মুগ্ধ করেছেন সাক্ষী। বেশ কয়েকটি বলিউড ফিল্মে কাজ করেছেন বটে। তবে টেলি সিরিয়ালেই তাঁকে বেশি দেখা গিয়েছে। অভিনয়ের জগতে পা রাখার আগে অবশ্য পাঁচতারা হোটেলে সেলস ট্রেনি হিসেবে কাজ করতেন। এর পর ১৯৯৮ সালে দূরদর্শনের ‘আলবেলা সুর মেলা’ নামে একটি অনুষ্ঠানের সঞ্চালিকাও ছিলেন। তবে ৪৯ বছরের সাক্ষীকে খ্যাতির শিখরে পৌঁছে দেয় ‘কহানি... ’!
হোটেলের কাজ দিয়ে পেশাদার জীবন শুরু করলেও কলেজ জীবন থেকেই অভিনয়ের সঙ্গে সাক্ষীর পরিচয়। কলেজের ড্রামাটিক সোস্যাইটির সচিব তথা সভাপতি হিসেবেও সক্রিয় ছিলেন। দূরদর্শনে কাজ করার পরের বছরই টেলি-দুনিয়ায় পা রাখেন সাক্ষী। ওটিটি প্ল্যাটফর্মেও এসেছেন। কাজ করেছেন আমির খানের পাশে ‘দঙ্গল’-এ। আজকাল এক দিনের কাজের জন্য নাকি ১ থেকে ১ লাখ ২৫ হাজার টাকা নেন তিনি।
এক সময় করণ সিংহ গ্রোভারের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক নিয়ে বার বারই শিরোনামে থাকতেন জেনিফার উইনগেট। তবে করণের সঙ্গে প্রেম-বিয়ে-বিচ্ছেদ ছাড়াও বহু বার আলোয় তলায় এসেছেন। ‘কসৌটি জিন্দেগি কে’, ‘দিল মিল গয়ে’, ‘কুমকুম— এক প্যায়ারা সা বন্ধন’-এর মতো একের পর পর এক হিট সিরিয়াল করেছেন জেনিফার। পাশাপাশি, ‘কোড এম’ নামে একটি ওয়েবসিরিজেও দেখা গিয়েছে ৩৬ বছরের জেনিফারকে।
জেনিফারের অভিনয় জীবন শুরু হয়েছিল বেশ কম বয়সে। সেই ১৯৯৫ সালে। আমির খান এবং মনীষা কৈরালা জুটির ফিল্ম ‘অকেলে হম অকেলে তুম’-এ বেশ কয়েকটি দৃশ্যে ছিলেন তিনি। ২০০৩ সালে অভিষেক বচ্চনের বিপরীতে নায়িকার ভূমিকাতেও আসেন। তবে বলিউডে সে ভাবে কেরিয়ার জমেনি। কিন্তু ছোটপর্দায় তিনি প্রথমসারিতেই রয়েছেন। সাক্ষীর মতোই পারিশ্রমিক নেন জেনিফার। তবে এক দিনে নয়, শোনা যায় যে প্রতিটি পর্বে তাঁর রোজগার ১ থেকে ১ লাখ ২৫ হাজার টাকা।
বিদ্যা সিংহ এবং দিব্যা শুক্লকে মনে পড়ে? টেলিভিশনের পর্দায় ‘বনু ম্যায় তেরি দুলহন’-এ ওই জোড়া চরিত্রে এসেছিলেন দিব্যাঙ্কা ত্রিপাঠী। ২০০৬ সাল থেকে তিন বছর ধরে একটানা অভিনয়। তার পর থেকে ‘ইন্তেজার’, ‘তেরি মেরি লভ স্টোরিজ’ এবং ‘ইয়ে হ্যা মহব্বতে’-এর মতো সিরিয়াল দিব্যাঙ্কার কেরিয়ারে সোনালি রেখা এঁকে দিয়েছে। ২০২০ সালে দেশীয় টেলিভিশনের সবচেয়ে জনপ্রিয় মুখেরও তকমা পান তিনি।
মধ্যপ্রদেশের ভোপালে বেড়ে ওঠা দিব্যার কেরিয়ার শুরু হয়েছিল অল ইন্ডিয়া রেডিয়োয়। ভোপালে থাকাকালীন ২০০৫ সালে একটি সৌন্দর্য প্রতিযোগিতায়ও সেরা হয়েছেন। ‘ইন্ডিয়াজ বেস্ট সিনে স্টার কি খোঁজ’-এর মতো রিয়্যালিটি শোয়ে নেমেছেন। দূরদর্শনের টেলিফিল্ম দিয়ে যাত্রা শুরু তাঁর। ‘আকাশ বাণী’ নামে একটি অনুষ্ঠানের সঞ্চালনাও করেছেন। ‘বনু ম্যায় তেরি দুলহন’ দিয়েই ছোটপর্দায় বড়সড় বিস্ফোরণ ঘটান জেনিফার। এর মধ্যে রাজীব খাণ্ডেলওয়ালের সঙ্গে করে ফেলেছেন ‘কোল্ড লস্যি অউর চিকেন মসালা’-র মতো ওয়েবসিরিজও। প্রতি পর্বে নাকি ১ থেকে দেড় লাখ টাকায় কাজ করেন জেনিফার।
টেলিভিশনের বহু ‘নাগিন’কেই নাকি স্রেফ জনপ্রিয়তার দৌড়ে হারিয়ে দিতে পারেন নিয়া শর্মা। ‘এক হাজারো মে মেরি বহনে হ্যায়’ বা ইশ্ক মে মরজাঁওয়া’ অথবা ‘জামাইরাজা’— নিয়ার কাজে মুগ্ধ অনেকেই। ‘ওয়াদা’, ‘আঁখিয়া দা ঘর’-এর মতো বেশ কয়েকটি মিউজিক ভিডিয়োতেও কাজ করেছেন।
আদতে দিল্লির বাসিন্দা। এখনও পর্যন্ত বলিউডি ফিল্মে অভিনয় করেননি। তবে ওয়েবসিরিজ এবং টেলিভিশনের দুনিয়ায় নিজের জায়গা প্রায় পাকা করে নিয়েছেন নিয়া। টিভির পর্দায় যতই কুচক্রীর ভূমিকায় দেখা যাক না কেন, দর্শক বা সংবাদমাধ্যমের বিচারে ‘আকর্ষণীয়’ নারীর তকমা পেয়েছেন ৩১ বছরের নিয়া। ইন্ডাস্ট্রির অন্দরের খবর, টেলিসিরিজের পর্ব পিছু ৭৫ থেকে ৮০ হাজার টাকা রোজগার করেন নিয়া।
ছোটপর্দায় আর এক পরিচিত নাম সুরভি জ্যোতি। ‘আঁখিয়া তো দূর যায়ে না’, ‘কবুল হ্যায়’, ‘ইশ্কবাজ’ বা ‘নাগিন’— সুরভির ঝুলিতে রয়েছে একের পর এক জনপ্রিয় সিরিয়ালে কাজের অভিজ্ঞতা। পঞ্জাবি ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতেও বেশ নাম কামিয়েছেন তিনি। ‘এক কুড়ি পঞ্জাব দি’ বা ‘মুন্ডে পাটিয়ালা দে’-র মতো বক্সঅফিসে সফল ফিল্মও করেছেন।
পঞ্জাবের জলন্ধরে বেড়ে ওঠা। সেখানেই ইংরেজি সাহিত্যে স্নাতরোত্তর পর্যন্ত প্রথাগত পড়াশোনা। জলন্ধরের থিয়েটার করতে করতে পঞ্জাবি ফিল্ম। ৩৩ বছরের সুরভি যে অভিনয়কেই পেশা হিসেবে বাছবেন, তা আর নতুন কী! ২০১২ সালে ছোটপর্দায় পা রাখেন। করণ সিংহ গ্রোভারের সঙ্গে ‘কবুল হ্যায় ২.০’-সহ বেশ কয়েকটি ওয়েবসিরিজও করেছেন সুরভি। অনেকে বলেন, ৭০-৭৫ হাজার টাকায় এক একটি পর্বে কাজ করেন তিনি।
দেহরাদূন থেকে মুম্বই। অভিনয় করার নেশায় ছুটে গিয়েছিলেন ৩২ বছরের আশা নেগি। কলেজের দিনগুলি থেকেই সৌন্দর্য প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ। তার পর বিজ্ঞাপনে কাজও করেন। বেশ কয়েকটি সিরিয়ালে কাজের মধ্যেও ‘পবিত্র রিস্তা’-য় সুযোগ পাওয়ার পর তাঁর কেরিয়ারের মোড় ঘুরে যায়।
ছোটপর্দায় সিরিয়ালের পাশাপাশি বেশ কয়েকটি রিয়্যালিটি শো করেছেন আশা নেগি। ‘নাচ বলিয়ে-৬’, ‘বক্স ক্রিকেট লিগ-১’, ‘ফিয়ার ফ্যাক্টর: খতরোঁ কি খিলাড়ি-৮’, ‘আজ কি রাত হ্যায় জিন্দেগি’। বছর দুয়েক আগে অনুরাগ বসুর ‘লুডো’ নিয়ে বলিউডেও প্রবেশ। গত বছর ‘কলার বম্ব’-এও রয়েছেন আশা। ছোটপর্দায় এক একটি পর্বের জন্য নাকি ৭৫ থেকে ৮০ হাজার টাকা নেন তিনি।
নিজের নামের মতোই ছোটপর্দায় ঝলমল করেন ক্রিস্টাল ডি’সুজা। টেলিদুনিয়ায় অনেকেই এ কথা বলেন। ‘সাত ফেরে: সালোনি কা সফর’, ‘কিস দেশ মে হ্যায় মেরা দিল’, ‘বাত হমারি পাক্কি হ্যায়’, ‘আহঠ’ বা ‘এক হাজারো মে মেরি বহনে হ্যায়’— ক্রিস্টালের আলোয় উজ্জ্বল হয়েছে একের পর এক সিরিয়াল।
কলেজের পড়াশোনার সময় থেকেই অভিনয় শুরু করে দিয়েছিলেন ৩১ বছরের ক্রিস্টাল। মুম্বইয়ের বাসিন্দার এই ছোটপর্দায় প্রথম কাজ ২০০৭ সালে— ‘কহে না কহে’। তিনটে বলিউড ফিল্মে কাজ করলেও সে ভাবে নজর কাড়তে পারেননি। তবে ছোটপর্দায় বেশ জাঁকিয়ে বসেছেন। প্রতি পর্বে তাঁর পারিশ্রমিক নাকি ৫৫ থেকে ৬০ হাজার টাকা।
‘পবিত্র রিস্তা’-য় সুশান্ত সিংহ রাজপুতের সঙ্গে তাঁর সে সময়কার বান্ধবী অঙ্কিতা লোখাণ্ডের রসায়ন বেশ উপভোগ করতেন দর্শক। সুশান্তের আকস্মিক মৃত্যুর আগেই অবশ্য ছাড়াছাড়ি হয়ে গিয়েছিল তাঁদের। গত বছর ভিকি জৈন নামে এক ব্যবসায়ীকে বিয়েও করেছেন অঙ্কিতা।
ইনদওর থেকে অভিনয়ের টানে মুম্বইয়ে পা রেখেছিলেন তিনি। ‘পবিত্র রিস্তা’-র জনপ্রিয়তার পর বড়পর্দায়ও দেখা গিয়েছে ৩৭ বছরের অঙ্কিতাকে। ২০১৯ সালে ‘মনিকর্ণিকা: দ্য কুইন অব ঝাঁসি’। পরের বছর ‘বাগী-৩’। শোনা যায়, টেলিভিশনে কাজের সময় প্রতি পর্বের জন্য ৯০-৯৫ হাজার টাকা করে আয় করেন তিনি।
ফিল্ম অভিনয়ের পর টেলিভিশনে পা রেখেছিলেন সনায়া ইরানি। ২০০৬ সালে আমির খান-কাজল জুটির ‘ফনা’-তে ছোট্ট রোল ছিল সনায়ার। তবে বলিউডে নন, ছোটপর্দায় জনপ্রিয় তিনি। ‘লেফ্ট রাইট লেফ্ট’, ‘কসম সে’, ‘ইস প্যায়ার কো ক্যায়া নাম দু’ বা ‘রংরসিয়া’— সবেতেই ছাপ রেখেছেন সনায়া। করেছেন ‘ঝলক দিখলা যা’, ‘কিচেন চ্যাম্পিয়ন’ বা ‘নাচ বলিয়ে বক্স ক্রিকেট লিগ’-এর মতো রিয়্যালিটি শো।
মুম্বইয়ের এক ইরানি পরিবারে জন্ম সনায়ার। তাঁর পোর্টফোলিও শ্যুট করেছিলেন অভিনেতা-ফোটোগ্রাফার বোমান ইরানি। টিভি-র বিজ্ঞাপনে শাহরুখ খান, করিনা কপূরদের সঙ্গে কাজ করেছেন। তবে সিরিয়ালে যাত্রা শুরুর পর সেখানেই দর্শকদের মন জয় করেন সনায়া। প্রতি পর্বের কাজে নাকি তাঁর আয় ৭৫-৮০ হাজার টাকা।
পরিচালক অনিল গঙ্গোপাধ্যায়ের মেয়ে হওয়ার সুবাদে ফিল্মি পরিবেশে ব়ড় হয়েছেন। তবে বাবার মতো পরিচালনার বদলে অভিনয় বেছে নিয়েছেন রূপালি গঙ্গোপাধ্যায়। মাত্র সাত বছর বয়সে ক্যামেরার সামনে আসা। বাবার পরিচালিত হিন্দি ফিল্ম— ‘সাহেব’। তার পর চারটি ফিল্ম করলেও টেলিভিশনকেই বেছে নিয়েছেন রূপালি। তার আগে অবশ্য হোটেল ম্যানেজমেন্ট নিয়ে পড়াশোনা সেরে ফেলেছিলেন।
‘অনুপমা’ বা ‘কহানি ঘর ঘর কি’ অথবা ‘সপনা বাবুল কা... বিদাই’, ‘পরবরিশ- কুছ খট্টে কুছ মিঠে’ এবং অবশ্যই ‘সারাভাই ভার্সেস সারাভাই-২’— সবেতেই প্রশংসা কুড়িয়েছেন রূপালি। শোনা যায়, পর্ব পিছু ৬০ হাজার টাকা পারিশ্রমিক নেন তিনি।