মালিকানা বদলের সঙ্গে ভোলবদল মাইক্রোব্লগিং সাইট টুইটারের। কর্মী ছাঁটাই, শ্রমের সময় বাড়ানোর মতো সংস্থার অন্দরে একগুচ্ছ নীতি আনছেন আমেরিকার ধনকুবের ব্যবসায়ী ইলন মাস্ক। তা ছাড়া, টুইটার ব্যবহারকারীদের জন্যও খোলানলচে বদলে যাচ্ছে নিয়ম। ইলনের ঘোষণা, এ বার থেকে যাঁরা ভেরিফায়েড অ্যাকাউন্ট হিসেবে টুইটার ব্যবহার করতে চান, নামের পাশে ব্লু টিক পেতে হলে তাঁদের খরচ মাসে খরচ করতে হবে প্রায় ৮ ডলার (ভারতীয় মূল্যে প্রায় ৭০০ টাকা)।
আর এই প্রেক্ষিতে একাধিক নামীদামি সংস্থার নাম ব্যবহার করে টুইটে ভেসে আসছে নানা অদ্ভুত বার্তা। কোথাও নামী ঠান্ডা পানীয় সংস্থার নাম নিয়ে টুইট করে সদর্পে ঘোষণা করা হচ্ছে, তারাই প্লাস্টিক দূষণে বিশ্বে সর্বপ্রথম। কোথাও নামী ওষুধ সংস্থার নাম দিয়ে বলে দেওয়া হচ্ছে, এ বার ইনসুলিন পাওয়া যাবে বিনামূল্যে। বলাই বাহুল্য, এমন সব টুইটবার্তায় নেটাগরিকরা ধন্দে পড়েছেন।
অন্য দিকে, পরিস্থিতি বেগতিক দেখে একই নামে টুইটার থেকে সংস্থাকে বলতে শোনা যাচ্ছে, তারা এমন কোনও টুইট করেনি। কিন্তু কোনটা ঠিক, কোনটা ভুল, কোনটা সত্যি, কোনটা ভুয়ো, তা বুঝতে গিয়েই বড় গোলমাল। গত কয়েক ঘণ্টায় এমনই অজস্র ভুয়ো টুইট স্রোতে ব্যতিব্যস্ত নেটাগরিকরা।
জনপ্রিয় পানীয় সংস্থার নামে টুইটার হ্যান্ডল। পাশে ব্লু টিক চিহ্ন রয়েছে। স্বাভাবিক ভাবে মনে হবে এটিই ওই সংস্থার নিজস্ব টুইটার হ্যান্ডল। কিন্তু তার বার্তা দেখে সকলের চক্ষু চড়কগাছে। তার পর ওই সংস্থা নিজেই জানিয়ে দিচ্ছে অন্য সংস্থার ঠান্ডা পানীয় কিনুন। ওটা বেশি ভাল। খেতে ভাল। স্বাস্থ্যসম্মতও বটে। সেই টুইট ছড়িয়ে পড়তেই টুইটার ব্যবহারকারীদের মধ্যে হাসির রোল উঠেছে। অবশেষে তড়িঘড়ি বিবৃতি দিতে হচ্ছে সংস্থাকে।
এমন ভাবেই বিখ্যাত ডেয়ারি সংস্থার নামে টুইটার হ্যান্ডল থেকে লেখা, ‘‘আমরা আপনার কাছ থেকে জল চুরি করি। তার পর সেটা আপনাকে বিক্রি করি।’’ অর্থাৎ, দুধের নামে জল দিয়ে উপভোক্তাদের ঠকানো হচ্ছে বলে নিজেই জানিয়ে দিচ্ছে সংশ্লিষ্ট ডেয়ারি সংস্থা!
যদিও পরে ওই ডেয়ারি সংস্থা জানিয়েছে এটা তাদের টুইট নয়। কিন্তু নেটাগরিকরা বুঝবেন কী করে! দুটোর পাশেই তো ব্লু টিক। যা বোঝায় এটাই সংস্থার নিজস্ব টুইটার হ্যান্ডল।
ঠান্ডা পানীয়ের বাজারে দুই সংস্থা একে অন্যের প্রবল প্রতিদ্বন্দ্বী। এক জন যখন সহজ এবং সরল স্বীকারোক্তি দিয়ে বলছে প্রতিদ্বন্দ্বীর পানীয়টাই বেশি ভাল, তখন বিনয়ে কম যায় না দ্বিতীয়টিও। সেই সংস্থা আবার মাস্কের টুইটারের মাধ্যমে ঘোষণা করে দিচ্ছেন, ‘‘গত চার বছর ধরে আমরাই প্লাস্টিক দূষণে বিশ্বে প্রথম।’’
শুধু তাই নয়, স্বয়ং টুইটার মালিকের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা স্পেসএক্সের নামেই তো ভুয়ো টুইট হচ্ছে। সেখানে আবার ইলন মাস্ককে নিয়ে কটু রসিকতা করা হয়েছে।
‘নতুন’ টুইটারের ‘মজা’ এখানেই শেষ নয়। বিখ্যাত ওষুধ সংস্থার নামে টুইটার হ্যান্ডল খুলে লেখা হয়েছে, ‘‘আমরা আনন্দের সঙ্গে ঘোষণা করছি যে ইনসুলিন এখন থেকে বিনামূল্যে দেব।’’
মধুমেহর ওষুধ সম্পূর্ণ বিনামূল্যে দেওয়ার এই ঘোষণায় আলোড়ন শুরু হয় সমাজমাধ্যমে। যদিও কিছু ক্ষণ পরেই মালিকদের তরফে বলা হয়, ওই টুইট তাদের নয়। কেউ ভুয়ো অ্যাকাউন্ট খুলে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে।
এই ভাবে একের পর এক সংস্থা এবং ব্যক্তির নামে টুইটার অ্যাকাউন্ট খুলে ভুয়ো টুইটে ছেয়ে যাচ্ছে।
ভুয়ো নামের টুইটার অ্যাকাউন্ট থেকে নিজেদের সরিয়ে রাখার জন্য ব্লু টিক দেওয়া অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করা হয়। তার জন্য বেশ কিছু নিয়মও মানতে হত। কিন্তু এখন বিনা পয়সায় ব্লু টিক মিলবে না। তার জন্য গুনে গুনে খরচও করতে হবে। তার আগেই সেই ব্লু টিক নিয়ে কার্যত ছেলেখেলা শুরু করেছেন রসিক নেটাগরিকরা। কোনও কোনও ক্ষেত্রে তা মজার সীমা ছাড়িয়ে বিরক্তিরও উদ্রেক করছে। কিন্তু এই সব দুষ্টুমি এখন ঠেকানো যাবে কী ভাবে, সেই চিন্তায় মাস্কের টুইটার।
বলে রাখা ভাল, ভারতেও বেশ কয়েক জন টুইটার ব্যবহারকারী সাইন আপ করার বার্তা পেয়েছেন। বর্তমানে শুধু আইফোনে এই ‘আপডেট’ সাপোর্ট করছে।
যে টুইটার ব্যবহারকারীরা ট্যুইটার ব্লু-তে সাইন আপ করবেন, তাঁরা যাচাই না করেও ‘ব্লু টিক’ পাবেন। মাইক্রোব্লগিং সাইটের নতুন মালিক ইলন মাস্ক জানিয়েছেন, এই ব্যবহারকারীদের প্রোফাইল রিচ এবং ডিসপ্লে-র ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।
টুইটার কিনে নানাবিধ নিয়মের বদলছেন মাস্ক। টুইটার মালিক জানাচ্ছেন ‘স্প্যাম’ এবং ‘স্ক্যাম’ ঠেকাতে এই সব নিয়ম এনেছেন তিনি। কিন্তু পরিবর্তনের প্রথম ধাপেই বেশ সমস্যায় সংস্থা।
এই বিতর্কের মাঝে টুইটার তার সাম্প্রতিক ঘোষণায় ৮ ডলার দিয়ে সাবস্ক্রিপশন পরিষেবা আপাতত মুলতুবি রেখেছেন। কারণ হিসাবে বলা হয়েছে জাল অ্যাকাউন্টের ‘বিস্ফোরণ’ ঘটছে। তাই সব কিছু গুছিয়ে আবার ঘোষণা হবে।