পর্বতারোহণের কথা ভাবলেই বুক কেঁপে ওঠে। ভালুকের হামলায় মরতে হবে না তো? গত দু’দশকে ভালুকের হামলার সংখ্যা ক্রমশ বেড়েছে রোমানিয়ায়। অভিযোগ, সমস্যা সমাধানে তেমন কোনও পদক্ষেপ করেনি সরকার। সম্প্রতি এক তরুণী আরোহীর মৃত্যুর খবর প্রকাশ্যে আসার পর সক্রিয় হয়ে ওঠে প্রশাসন। শয়ে শয়ে ভালুক মেরে এই সমস্যার সমাধান করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সে দেশের সরকার।
ইউরোপের মধ্যে রোমানিয়াই একমাত্র দেশ, যেখানে ব্রাউন বেয়ার প্রজাতির ভালুকের সংখ্যা বেশি। এই প্রজাতির ভালুক দেখতে পর্যটকেরাও আসেন রোমানিয়ায়।
সে দেশের পরিবেশ মন্ত্রকের হিসাব অনুযায়ী, রোমানিয়ায় মোট ভালুকের সংখ্যা আট হাজারের কাছাকাছি। গণনায় অন্যান্য দেশের চেয়ে এগিয়ে থাকলেও রোমানিয়ায় ভালুকের আক্রমণে মৃতের সংখ্যাও লাফিয়ে লাফিয়ে বৃদ্ধি পেয়েছে।
রোমানিয়া প্রশাসন সূত্রে খবর, গত দু’দশকে ভালুকের হামলায় রোমানিয়ায় ২৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। গুরুতর আহত হয়েছেন ২৭৪ জন।
ভালুকের আক্রমণের ঘটনা কী ভাবে নিয়ন্ত্রণে আনা যায়, তা নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারছিল না রোমানিয়া। প্রশাসন সূত্রের দাবি, হামলা ঠেকাতে ২০২৩ সালে ২২০টি ভালুককে মেরে ফেলা হয়েছিল।
পরিবেশবিদদের অধিকাংশের দাবি, ভালুকের সংখ্যাবৃদ্ধি মূল সমস্যা নয়। বরং ভালুক মারলে প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট হতে পারে, এমন আশঙ্কাই করছেন তাঁরা।
জঙ্গল অথবা পাহাড়ে গেলে পর্যটক-আরোহীরা যেন বন্যপ্রাণীদের খাবার না দেন, তা নিয়ে সতর্ক করেছিলেন পরিবেশবিদদের একাংশ।
রোমানিয়ার পরিবেশবিদদের মতে, পর্যটকেরা যখন কোনও বন্যপ্রাণীকে খেতে দেন, তখন সেই খাবারের টানে গভীর জঙ্গল থেকে ভালুকেরা বেরিয়ে পড়ে।
চলতি বছর রোমানিয়ার কার্পাথিয়ান পর্বতে উঠছিলেন ১৯ বছরের এক তরুণী। পর্বতারোহণের সময় ভালুকের আক্রমণের শিকার হন তিনি। হামলায় মৃত্যু হয় তাঁর।
তরুণীর মৃত্যুর ঘটনায় নড়েচড়ে বসে রোমানিয়া প্রশাসন। ভালুকের সংখ্যা কমে গেলে আক্রমণের সংখ্যাও কমবে, এমনটাই চিন্তা করেন প্রশাসনের উচ্চ আধিকারিকেরা।
ভালুকের দেখা পাওয়া গেলে যেন সঙ্গে সঙ্গে আপৎকালীন নম্বরে ফোন করা হয়, এমন নির্দেশ জারি করেছিল প্রশাসন। স্থানীয় সংবাদ সংস্থা সূত্রে খবর, ২০২৩ সালে এই নম্বরে সাড়ে সাত হাজারেরও বেশি ফোন গিয়েছে। এক বছর আগে এই সংখ্যা ছিল অর্ধেকের কাছাকাছি।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ভালুক হত্যার নির্দেশ দিয়েছে রোমানিয়ার প্রধানমন্ত্রী মার্সেল কিওলাকুর সরকার।
চলতি বছরে ৪৮১টি ভালুক মেরে ফেলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রোমানিয়া। যদিও এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানিয়েছেন রোমানিয়ার পরিবেশবিদ-সহ আরও অনেকে।
ওয়ার্ল্ড ওয়াইল্ডলাইফ ফান্ডের রোমানিয়া শাখা ভালুক হত্যার বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছে। তাদের মতে, ভালুক মারলে সমস্যার সমাধান হবে না। আসল সমস্যা ভালুকের সংখ্যাবৃদ্ধি নয়। বন্যপ্রাণীদের থেকে মানুষের দূরত্ব বজায় রেখেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়।