উত্তরকাশীর উদ্ধারকাজে কি যন্ত্রের দৌড় শেষ হয়ে গেল? শুক্রবার থেকে শনিবার পর্যন্ত যা ঘটনাপ্রবাহ, তা সেই দিকেই ইঙ্গিত করছে। সুড়ঙ্গ-যুদ্ধে আর যন্ত্রের উপর ভরসা করা যাচ্ছে না।
গত ১৪ দিন ধরে উত্তরকাশীর সুড়ঙ্গে আটকে রয়েছেন ৪১ জন শ্রমিক। সিল্কিয়ারা সুড়ঙ্গে কাজ করার সময় আচমকা ধস নামে। তাতেই গভীরে আটকে যান তাঁরা।
ধ্বংসস্তূপের অন্তত ৬০০ মিটার গভীরে আটকে রয়েছেন শ্রমিকেরা। তাঁদের সঙ্গে প্রথম থেকেই যোগাযোগ রাখা সম্ভব হয়েছিল। শুধু সশরীরে তাঁদের কাছে পৌঁছনো যায়নি এখনও।
যন্ত্রের মাধ্যমে ধ্বংসস্তূপ খুঁড়ে শ্রমিকদের কাছে পৌঁছনোর চেষ্টা করা হচ্ছিল। গত ১৪ দিনেও সেই কাজে পুরোপুরি সাফল্য মেলেনি। বরং শুক্রবার নতুন করে ব্যাহত হয়েছে উদ্ধারকাজ।
আমেরিকায় তৈরি যে খননযন্ত্রটি দিয়ে ধ্বংসস্তূপ খোঁড়া হচ্ছিল, শুক্রবার রাতে তা অকেজো হয়ে পড়েছে। যন্ত্রটি সুড়ঙ্গের ভিতর বাধা পেয়ে ভেঙে গিয়েছে। আর তা ব্যবহার করা যাবে না।
খননযন্ত্রটি সুড়ঙ্গের ভিতরে থাকা লোহার কাঠামোয় ধাক্কা খেয়ে তাতে আটকে গিয়েছিল। সেই কারণেই সেটি ভেঙে চুরমার হয়ে গিয়েছে। সেই যন্ত্র সুড়ঙ্গ থেকে বার করে আনার কাজ চলছে।
এই পরিস্থিতিতে উত্তরকাশীর সুড়ঙ্গে যন্ত্র ছাড়াই কাজ এগোনোর কথা ভাবা হচ্ছে। শ্রমিকেরা গাঁইতি-শাবল নিয়ে কোমর বেঁধে নামবেন উদ্ধারকাজে।
রবিবার সকালেই গাঁইতি-শাবল দিয়ে ধ্বংসস্তূপ খোঁড়ার কাজ শুরু হয়ে যাবে। খোঁড়া হবে উপর দিক থেকে। তার জন্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নির্দিষ্ট স্থানে পৌঁছে গিয়েছে।
হায়দরাবাদ থেকে একটি যন্ত্র আনা হয়েছে উত্তরকাশীতে। সেই যন্ত্রও ব্যবহার করা হতে পারে উপর দিক থেকে মাটি খোঁড়ার কাজে। পরিস্থিতি অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
যেখান থেকে খোঁড়া শুরু হবে, পাহাড়ের উপরে সেই অংশে সহজে পৌঁছনোর জন্য বর্ডার রোডস্ অরগ্যানাইজে়শন একটি রাস্তাও তৈরি করে ফেলেছে। অন্তত ২০ জন শ্রমিককে খোঁড়াখুঁড়ি শুরু করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
উত্তরাখণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী পুষ্কর সিংহ ধামী রোজই ঘটনাস্থলে যাচ্ছেন এবং উদ্ধারকাজ পরিদর্শন করছেন। শনিবার তিনি সুড়ঙ্গে ঢুকেও পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে এসেছেন। উদ্ধারস্থলে তিনি নিজের অস্থায়ী দফতর খুলেছেন।
সুড়ঙ্গের ভিতরে শ্রমিকেরা সুস্থ রয়েছেন। তাঁদের সঙ্গে পাইপের মাধ্যমে যোগাযোগ রাখা হয়েছে। পরিজনদের সঙ্গেও পাইপ দিয়েই কথা বলছেন শ্রমিকেরা। পাইপে পৌঁছে যাচ্ছে খাবার, জল এবং অন্যান্য সামগ্রী।
সামনের দিক থেকে ধ্বংসস্তূপ খুঁড়ে এত দিন এগোচ্ছিলেন উদ্ধারকারীরা। ২১ জন উদ্ধারকারী সুড়ঙ্গে ঢুকে খননকার্য চালান। ধ্বংসস্তূপ খুঁড়ে তার ভিতরে চওড়া পাইপ ঢোকানো হয়েছিল। তার মাধ্যমেই শ্রমিকদের বার করার পরিকল্পনা ছিল।
৬০০ মিটারের মধ্যে মাত্র ১০ মিটার বাকি থাকা অবস্থায় খননকাজ থমকে গিয়েছে। বাকি কাজের জন্য তাই অন্য রাস্তা নিতে হচ্ছে উদ্ধারকারীদের।
আন্তর্জাতিক সুড়ঙ্গ বিশেষজ্ঞ আর্নল্ড ডিক্স জানিয়েছেন, একাধিক পরিকল্পনা তাঁদের রয়েছে। আমেরিকান যন্ত্রের মায়া ত্যাগ করে অন্য পথ কাজে লাগাতে হবে। তবে নিশ্চিত ভাবেই ৪১ জন শ্রমিককে সুড়ঙ্গ থেকে সুরক্ষিত অবস্থায় বার করে আনা হবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন তিনি।
উত্তরাখণ্ডের স্থানীয় প্রশাসন সূত্রে খবর, যন্ত্রের মাধ্যমে যাচাই করে দেখা গিয়েছে, পরবর্তী পাঁচ মিটারের মধ্যে আর কোনও ধাতব বাধা নেই। ফলে রবিবার থেকে নির্বিঘ্নেই কাজ এগোবে বলে আশা করা হচ্ছে।